পোয়ারোর আগাথা ক্রিস্টি
বইয়ের পাতায় পোয়ারোর আবির্ভাবের শতবর্ষ পুর্তিতে তার স্রষ্টা আগাথা ক্রিষ্টির বাস্তব জন্মের একশত তিরিশ বছর পূর্ণ হলো। তার জন্ম ১৫ সেপ্টেম্বর ১৮৯০, মৃত্যু ১২ জানুয়ারি ১৯৭৬।
গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এ সর্বাধিক বিক্রিতে গ্রন্থের লেখক হিসেবে ১ বিলিয়ন ছাড়িয়ে শেকসপিয়রের পরই তার অবস্থান। তার নাটক মাউসট্র্যাপ ১৯৫২-র ২৫ নভেম্বর ওয়েস্ট এন্ড-এর অ্যাম্বাসেডর থিয়েটারে প্রথম মঞ্চায়িত হয়। তারপর আর থামার সুযোগ ছিল না। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ নাটকটির ২৭৫০০তম মঞ্চায়ন হয়েছে। এই রেকর্ড ভাঙ্গার সুযোগ সম্ভবত আর নেই।
নিরুদ্দিষ্ট আগাথা ক্রিস্টি
আগাথা ম্যারি ক্ল্যারিসা মিলার ১৮১০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের অ্যাশফিল্ড-এর মোটামুটি বিত্তশালী পরিবারেই জন্ম গ্রহণ করেন, শৈশবটি বেশ ভালোই ছিল। বয়স দশ পোরেতেই বাবার মৃত্যুতে তিনি দেখেছেন তার শৈশবেরও মৃত্যু ঘটেছে। তারপর পড়াশোনা করতে প্যারিস। ১৯১০ সালে ২০ বছর বয়সে ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন। মাকে নিয়ে পিরামিডের দেশ মিশরে আসেন। নিজেই লিখেছেন তখন থেকেই আসলে একজন স্বামীর সন্ধান করছিলেন।
ফিরে এসে একটি আধটু পছন্দের চারজনের সাথে স্বল্পকালীন সম্পর্কেও জড়ান, অন্য একজনের সাথে বাগদানও হয়--কিন্তু তারপর তা আর এগোয়নি। কিন্তু একজন স্বামী তার চাই-ই। তার বাড়ি থেকে ১২ মাইল দূরে লর্ড ও লেডি ক্লিফোর্ডের বাড়িতে একটি বল নাচের আসরে তার চেয়ে ঠিক এক বছরের বড় সেনা কর্মকর্তা আর্চিবল্ড ক্রিস্টির সাথে তিনি নাচলেন, এক সময় প্রেম হলো, এবং ১৯১৪ সালে ক্রিসমাসের আগে দুজন বিয়েও করলেন। আর্চির জন্ম ভারতে, তার বাবা ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসের সদস্য হিসেবে জর্জগিরি করেছেন। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় আগাথাও স্বেচ্ছাসেবী নার্স হিসেবে মোট ২৬ মাস বিনা বেতনে কাজ করে সনদপ্রাপ্ত নার্স হয়েছে। কিন্তু ১৯১৮-র সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক বছরে নার্স হিসেবে মোট ১৬ পাউন্ডের বেশি কামাই করতে পারেননি। ততদিনে সৈনিক আর্চিবল্ড ক্রিস্টি কর্নেল হয়েছেন এবং উত্তর পশ্চিম লন্ডনের সেইন্টস জন উড-এ বসবাস শুরু করেন। এর মধ্যে তাদের কন্যা রোজালিন্ড-এর জন্ম হয়। আগাথার লেখক খ্যাতি একদিকে যেমন আর্চির জন্য যন্ত্রণার কারণ হয়, আর্চি তেমনি ন্যান্সি নেলির প্রেমে পড়েন। ১৯২৬ সালে আর্চি তালাকের কথা তুললে এ নিয়ে ৩ ডিসেম্বর দু'জনের মধ্যে তমুল ঝগড়া হয়, আর্চি বাড়ি ছেড়ে তার মিসট্রেসের কাছে সারে কাউন্টিতে চলে যায়। সে রাতেই পৌনে দশটায় ইয়র্কশায়ার যাচ্ছি এমন একটি চিঠি লিখে আগাথাও নিরুদ্দিষ্ট হন। তার মরিস কাউলে গাড়িটি পাওয়া যায় নিউল্যান্ডস কর্নারে, গাড়িতে আগাথার কিছু কাপড়চোপড় ছিল।
আগাথা ক্রিস্টি নিরুদ্দেশ হওয়াতে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়্ চারদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম জনসন হিকস পুলিশসকে চাপ দেন, কারণ স্থানীয় একটি সংবাদপত্র তাকে জীবিত উদ্ধার করার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছে। আগাথাকে উদ্ধারের উদ্দেশ্যে এক হাজার পুলিশ কর্মকর্তা ও তিনশ' স্নিফার কুকুরসহ পনের হাজার স্বেচ্ছাসেবী অনুসন্ধান কাজে নেমে পড়ে। বেশ কয়েকটি উড়োজাহাজও নিচু উচ্চতায় উড়ে অনুসন্ধান চালাতে থাকে। নিউ ইয়র্ক টাইমস আগাথা ক্রিস্টির নিরুদ্দেশ হওয়ার খবর ফলাও করে প্রকাশ করে। উদ্বিগ্ন হয় উঠে তার আমেরিকান পাঠককুল। আর্থার কোনান ডয়েল তার অনুসন্ধান জানতে 'আত্মা আহ্বান করেন- ক্রিস্টির হাত-গ্লাভস চালান দেওয়া হয়। কিন্তু কোনোটাতেই সুফল আসেনি।
নিরুদ্দেশের একাদশ দিনে, ১৪ ডিসেম্বর ১৯২৬ হ্যারোগেট-এ তখনকার সোয়ান হাইড্রোপেথিক হোটেলে এখনকার নাম ওল্ড সোয়ান হোটেল, এখানেই তাকে পাওয়া যায়। আগাথা হোটেলের রেজিস্টারে মিসেস টেরেসা নেলি হিসেবে নাম লিখিয়েছেন এবং এসেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউন থেকে। আগাথা সনাক্ত হবার পর কারো সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। এমনকি বহু বছর পর লেখা আত্মজীবনীতেও বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন আগাথা ক্রিস্টি। তবে তাকে চিকিৎসা দেওয়া দু'জন ডাক্তার বিষয়টিকে তার সাময়িক অ্যামনেশিয়ায় ভোগা বলে উল্লেখ করেছেন। সীমাহীন কাজের চাপ, মায়ের মৃত্যু এবং স্বামীর অবিশ্বস্ততা থেকে তিনি বিষন্নতায় ভুগছিলেন। এতোদিন তার জন্য জনমনে যে সহানুভূতি কাজ করছিল, তিনি নিশ্চুপ থাকায় তা রাতারাতি বদলে গেল। কেউ বললেন, তিনি হত্যা মামলা সাজিয়ে তার স্বামী আর্চিবল্ড ক্রিস্টিকে থামাতে চেয়েছেন, কেউ বললেন এটা প্রচারণার নোংরা কৌশল। ১৯৭৯ সালের আগাথার এই কাহিনীর সাথে হত্যাকান্ডের মিশেল দিয়ে সিনেমাও তৈরি করা হয়েছে। এ সিনেমায় ভ্যানেসা রেডগ্রেভ আগাথা ক্রিস্টি চরিত্রে অভিনয় করেছেন এবং টিমোথি ডালটন ছিলেন আর্চিবল্ড ক্রিস্টি।
আগাথার বংশধররা সিনেমা নিয়ে দুটো মামলা করলেও সেগুলো আদালতে শেষ পর্যন্ত গ্রাহ্য হয়নি।
১৯২৮ সালে আগাথাকে তালাক দিয়ে আর্চি ন্যান্সি ন্যালিকে বিয়ে করেন। আগাথা ক্রিস্টি ১৯৩০ সালে বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক স্যার ম্যাক্স ম্যালোয়ানকে বিয়ে করেন। ১৯৭৬ সালে আগাথার মৃত্যু পর্যন্ত বিয়েটা বহাল ছিল। আগাথা সাবেক স্বামীর নামের ভারটুকু সারাজীবনই বহন করেছেন। খ্যাতি ও বাণিজ্যিক প্রয়োজনীয়তার কারণে তার পক্ষে আগাথা ম্যালোয়ান হওয়া সম্ভব হয়ে উঠেনি।
আগাথা ক্রিস্টি তার দুই গোয়েন্দা পোয়ারো আর মিস মার্পলকে দিয়ে রাজ্যের সব রহস্য উন্মোচন করিয়েছেন--কিন্তু নিজের ঘটনাটি তিনি কখনই খোলসা করে বলেননি, আর অন্য কোনো গোয়েন্দাও এই রহস্য ভেদ করতে পারেনি।
আগাথার বিবিসির সাক্ষাৎকার ১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৫
৬৫ বছর আগে ১৯৫৫ সালে ক্রাইম উপন্যাসের ডাচেস আগাথা ক্রিস্টির একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিল বিবিসি রেডিও। বিবিসি এই সাক্ষাতকারে আগাথা ক্রিস্টির মতই তদন্ত করে বের করার চেষ্টা করেছে: কেমন করে তার গল্পের ধারণাগুলো শেষ পর্যন্ত চোখ ধাঁধানো বেস্ট সেলিং গ্রন্থে পরিণত হয়।
১৯৭৬-এ তার মৃত্যুর পর ৪৪ বছর পেরিয়ে গেছে, এখনও তার বই আউট অব প্রিন্ট থাকছে না, এখনো তার কাহিনীর অনুবাদ হচ্ছে। তাকে এখনও বলা হয় 'দ্য কুইন অব ক্রাইম' কিংবা 'দ্য ডাচেস অব ডেথ'। তিনি সর্বকালের সর্বাধিক সংখ্যক পাঠকের প্রিয় দুটো চরিত্র সৃষ্টি করেছেন। মিস মার্পল আর এরকুল পোয়ারো। তার সেরা রচনার মধ্যে রয়েছে: দ্য মার্ডার অব রজার আর্করয়েড, হোয়াই ডোন্ট দে আস্ক ইভান্স, উইটলেস ফর দ্য প্রসিকিউশন, ডেথ অন দ্য নাইল, মার্ডার অন দ্য ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস এবং মাউসট্র্যাপ।
তার সন্ধ্যে বেলাটা কাটে বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের সাথে, তাদের সাথে গল্প করছেন, সঙ্গে কিছু একটা বুনছেন; কাটা কিংবা সুই সুতোয়, কিন্তু তখনও তার মন অন্য কোথাও গল্প তৈরি করে চলেছে, কাহিনীর মানচিত্র আঁকছে, কিংবা কথোপকথন ঠিকঠাক করছেন। তারপর যখন লিখতে বসে যাচ্ছেন ঝেড়েপুছে যা নামাচ্ছেন তাতেই কেল্লা ফতে। সাক্ষাৎকারের টুকরো টুকরো কথায় নিজের জীবনের এবং লেখালেখির কিছু মূল্যবান কথা বলেছেন।
শৈশবের বড় সময়টা তার বাড়িতেই কাটত, নিজে নিজে শেখার ধরনটা আরো আগেই আত্মস্থ করে নিয়েছিলেন।
'আমি দেখতাম মাথার ভেতর গল্প তৈরির কাজ চলছে এবং কোনো কোনো অংশে আমি অভিনয়ও করছি... আমার বয়স ১৬ কি ১৭-তে পৌঁছতেই আমি বেশ কটা গল্প লিখে ফেলি, বিষন্নতায় ভরা একটি উপন্যাসও্ বয়স একুশে পৌঁছতেই রিখে ফেলি। আর এই সময়ে আমার প্রকাশিত বইটি লেখার কাজও শেষ করে ফেলি--দ্য মিস্টেরিয়াস অ্যাফেয়ার্স অব স্টাইলস', আমি দু'একজন প্রকাশকের কাছে পাঠালাম, তারা আমার বই নিতে রাজি হলেন না। তারপর পাঠালাম জন লেইনের কাছে। প্রায় এক বছর অপেক্ষার পর শুনলাম পাণ্ডুলিপি গৃহীত হয়েছে। এভাবেই শুরু।'
পরের অংশ তো ইতিহাস। তিনি হয়ে উঠলেন শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। 'আমি তারপর ৫৫টি উপন্যাস ও অনেক গল্প লিখেছি।'
তিনি কেমন করে লেখার ধারণাটিকে মাথা থেকে কাগজে নামান?
'অনেকেই আমার বন্ধুরাও জিজ্ঞেস করে, তোমার লেখার পদ্ধটি কি? হতাশাব্যাঞ্জক সত্যটি হচ্ছে আমার নিজস্ব কোনো পদ্ধতি নেই। বহু বছর ধরে আমার মালিকানা থাকা একটি টাইপ রাইটারে আমি নিজেই টাইপ করতে থাকি।
'আসল কাজটা হয় চিন্তা করে গল্পটিকে তৈরি করায়, যতক্ষণ না সঠিকভাবে তৈরি হচ্ছে ততক্ষণ উদ্বিগ্ন থাকতে হয়।'
বই লেখার কাজটা তিনি দ্রুত সারতে চান।
'কেউ যদি সটিক ভাবে নামিয়ে আনতে পারে তা হলে একটি বই লেখার জন্য তিন মাস যথেষ্ট সময়। অন্যদিকে নাটক লেখাটা বরং আরও দ্রুত হয়--বই লেখার চেয়ে অনেক বেশি মজা নাটক লেখায়। জায়গা ও মানুষের নিখুত বর্ণনা নিয়ে ভাবতে হয় না, কাহিনীর মালমশলা কোথায় কেমন করে সাজাতে হবে তা নিয়ে ভাবতে হয় না।
'আপনাকে দ্রুত লিখতে হবে, মুড ঠিক রাখতে হবে এবং কথোপকথনের স্বাভাবিক প্রবাহ ধরে রাখতে হবে। আমি বরং একটি নাটককে বই নয়, নাটক হিসেবেই লিখতে পছন্দ করি--নাট্যরূপ দেওয়া নয়। অন্যরা আমার কাহিনীকে কিভাবে নাটক বানালো ঠিক হলো কি হলো না--এসব নিয়ে আমি বিচলিত হতে চাইনি।'
তিনি বলেন তাদের সময় শিশুরাই সব বানাতো-- বড়দিনের গিফট এখন দোকান থেকেই কিনে এনে উপহার দেয়। তিনি সৃজনশীলতার কথা বলেছেন। তাকে একটি প্রিয় বইয়ের কথা বলতে বলায় তিনি 'মার্ডার অন দ্য ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস'-এর নাম বলেছেন।
আগাথার রেকর্ড করা কথোপকথনের কিছু টেপ তার উত্তরসূরীদের কাছে রয়েছে। সেখান থেকে আগাথার নিজের কিছু কথা:
দ্য মার্ডার অব দ্য ভিকারেজ' প্রসঙ্গে তিনি বলেন:
'এটি লেখার কোনো স্মৃতিই আমার নেই--আমি কোথায়, কেমন করে, কেন এটা লিখতে গেলাম। এই বই লিখতে গিয়ে কেনো মিস মার্পল নামের একটি চরিত্র গোয়েন্দার কাজে নিয়োগ করলাম!'
এরকুল পোয়ারো ও মিস মার্পল এ দু'জনের মধ্যে কাকে তার পছন্দ এ প্রশ্নের জবাবে বললেন, অবশ্যই মিস মার্পল।
ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস
১৮৮৩ সালে ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেসের যাত্রা, আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী রেলওয়ে ৫ জানুয়ারি প্যারিস থেকে ভিয়েনা গেল; অক্টোবর প্যারিস রোমানিয়া মিউনিখ হয়ে ভিয়েনা, ১৮৮৫ তে আর একটি রুট ভিয়েনা থেকে বেলগ্রেড হয়ে কলস্টান্টিনোপল ইস্তাম্বুল। ইউরোপ এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকায় যাত্রী পারাপার করা বিলাশবহুল এই রেলওয়ে যতটা খ্যাত হয়েছে যাত্রী সেবায় তার চেয়ে বেশি খ্যাতি পেয়েছে বিখ্যাত লেখকদের গল্প ও উপন্যাসে। এ নাম সবার মুখে মুখে তুলে দিয়েছেন আগাথা ক্রিস্টি--একটি হত্যারহস্য উদঘাটনের ঘটনা মার্ডার অব দ্য ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস।
১ জানুয়ারি ১৯৩৪-এ প্রকাশিত এ উপন্যাসটির বিক্রি ১০০ মিলিয়ন কপি ছাড়িয়ে গেছে। সিনেমাভক্তদের অনেকেই সিনেমাটিও দেখেছেন। সাহিত্য ও সিনেমায় ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস ট্রেনের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়:
সাহিত্য
ব্রাম স্টোকারের ড্রাকুলা ১৮৯৭
গ্রাহাম গ্রিনের ইস্তামবুল ট্রেইন ১৯৩২
এ. ডেন ডুলার্ডের ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস ১৯৪৩
আয়ান ফ্লেমিং-এর ফ্রম রাশিয়া উইথ লাভ ১৯৫৭
পল থেরোর দ্য গ্রেট রেলওয়ে বাজার ১৯৭৫
গ্রাহাম গ্রিনের ট্র্যাভেল উইথ মাই আন্ট ১৯৬৯
গ্রেগর ফন রেজোরি দ্য ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস ১৯৯২
গ্রেগর ম্যাকডোনাল্ড ফ্র্যাসারের ফ্লাশম্যান অ্যান্ড দ্য টাইগার ১৯৯৯
রে ব্র্যাডবেরির গল্প অন দ্য ওরিয়েন্ট নর্থ
রবিন স্টিভেনস-এর ফার্স্ট ক্লাস মার্ডার ২০১৫
সবচেয়ে বেশি পঠিত আগাথা ক্রিস্টির 'মার্ডার অন দ্য ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস'।
ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস নিয়ে অন্তত কুড়িটা সিনেমা তৈরি হয়েছে; আগাথা ক্রিস্টির উপন্যাস নিয়ে ইংরেজিতেই তিনবার সিনেমা হয়েছে। টিভি সিনেমা ও সিরিয়াল হয়েছে অনেক।
আগাথা ক্রিস্টির তিন পর্বের ৩২ অধ্যায়ের 'মার্ডার অন দ্য ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস-এর মতো উপন্যাস একালের পাঠকও রুদ্ধশ্বসেই পড়বে নিশ্চিত:
ভোর পাঁচটার শীতার্ত সিরিয়া, ভীষন ঠান্ডা বাতাস বইছে। বিখ্যাত গোয়েন্দা এরকুল পোয়ারো ইস্তাম্বুলগামী এক্সপ্রেস ট্রেনে কদিনের ছুটি কাটাতে ইতিহাসখ্যাত কনস্টান্টিনোপল চলেছেন। কনস্টান্টিনোপল ইস্তাম্বুলের প্রাচীন নাম।
ডিটেকটিভ পোয়ারো ইস্তাম্বুল নেমে টোকালিয়ান হোটেলে চলে এলেন, তার এখানেই থাকার কথা, যাদের জানার তারা জানেন। কিন্তু হোটেলে ঢুকেই তিনি চিরকুট পেলেন--ঠিক চিরকুট নয়, তিন অক্ষরের টেলিগ্রাম: এক্ষণই লন্ডন ফিরে এসো। এই বার্তার সঙ্গে একটি রহস্য উদঘাটনের সম্পর্ক রয়েছে, তিনি জানেন। পরদিন ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেসে দ্বিতীয় শ্রেণীর টিকেট পেলেন পোয়ারো। পরে অবশ্য অনুপস্থিত এক নারীর জায়গায় প্রথম শ্রেণীতেই ১৩ জনের সাথে তার ঠাঁই হলো। ট্রেনে ওঠার আগেই যে, দু'জনের একজনের প্রতি তার ভীষণ বাজে রকম এক অনুভূতি হয় সেই র্যাচেট তাকে এসে বড় অঙ্কের মজুরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার প্রাণ বাঁচানোর অনুরোধ করলেন এবং জানালেন যে, তিনি মৃত্যুর হুমকির মধ্যে রয়েছেন। কিন্তু তার পোয়ারো মুখের উপর বলে দেন যে, তাকে তার পছন্দ না হওয়ায় এ কাজ তিনি নিতে পারেন না।
রাতের বেলা ঠিক পাশের বগিতেই খুন হলেন র্যাচেট। কে তার খুনি? সন্দেহভাজন কম্পার্টমেন্টের তের জনই। এভাবেই শুরু এক শ্বাসরুদ্ধকর কাহিনীর। আগাথা ক্রিষ্টির অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস, পোয়রোরও শ্রেষ্ঠ গোয়েন্দ্ সাফল্যের কাহিনি।
আগাথা ক্রিস্টি ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস ট্রেনের যে বর্ণনা দিয়েছেন, এমনকি বগির ভেতর কোন হুকটি কোন দিকে লাগানো, হোমওয়ার্ক ছাড়া তা সম্ভব নয়। ১৯২৮ সালে তিনি প্রথম ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেসে করে ইস্তাম্বুল আসেন।
বাঙ্গালি পোয়ারোদেরও শুভেচ্ছা
এরকুল পোয়ারোর আবির্ভাবের শতবর্ষে বাঙালি গোয়েন্দা ও তাদের স্রষ্টাদেরও শুভেচ্ছা জানাই। আমার তালিকার অধিকাংশই আমার সাথে পরিচিত। অপরিচিত অনেক নাম সঙ্গত কারণেই বাদ পড়ে যেতে পারে, শুভেচ্ছা তাদেরও।
কাজী আনোয়ার হোসেনের মাসুদ রানা ও কুয়াশা
শরদিন্দু বঙ্গোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ বক্সি
সত্যজিত রায়ের ফেলুদা, প্রফেসর শঙ্কু
নীহাররঞ্জন গুপ্তের কিরীটি রায়
প্রেমেন্দ্র মিত্রের পরাশর শর্মা, ঘনশ্যাম দাস ওরফে ঘনাদা
হামুয়ুন আহমেদের মিসির আলী
হিমাণীশ গোস্বামীর গর্জন
বুদ্ধদেব বসুর ঋজু বোস
হেমেন্দ্রকুমার রায়ের ইন্সপেক্টর সতীশ
বিমল করের কিকিরা
প্রভাবতী দেবী স্বরস্বতীর কৃষ্ণা
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাকাবাবু, কিংবা রাজা রায়চৌধুরী
শিবরাম চক্রবর্তীর কাল্ককাশি
অদ্রীশ বর্ধনের ইন্দ্রনাথ রুদ্র
সমরেশ বসুর গোগোল
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বরদাচরণ
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ভাদুড়িমশাই
রকিব হাসানের কিশোর, মুসা, রবিন
আশাপূর্ণা দেবীর ট্যাপা ও মদনা
নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়ের টেনিদা ওরফে ভজহরি মুখার্জি
স্বপন কুমারের দীপক চ্যাটার্জি
বাংলা গোয়েন্দা কাহিনীতে দীনেন্দ্রকুমার রায় রবার্ট ব্লেক নামের গোয়েন্দার আগমন ঘটিয়েছেন, নামের আগে দস্যু থাকলেও রোমেনা আফাজের বনহুরও বুদ্ধিমত্তা ও গোয়েন্দাগিরিতে কম যাননি। এমিলের গোয়েন্দারা বিদেশি হলেও বাংলাদেশেও যথেষ্ট পরিচিত। গোয়েন্দা কাহিনী সাহিত্য সৃষ্টির শুরু থেকেই কোনো না কোনো রূপ ধরে বহাল আছে। সোফোক্লিসের ইডিপাস রেক্সএ ইডিপাস রাজা লাইয়াসের হত্যাকারীর অনুসন্ধান করতে করতে আবিষ্কার করেন তিনিই তার ঘাতক। এক হাজার এক রাত্রির গল্পে শেহেরজাদের কাহিনীতে উজির জাফর ইবনে ইয়াহিয়াকে খলিফা হারুনুর রশিদ গোয়েন্দা দায়িত্ব প্রদান করেন।