প্রেসিডেন্সিয়াল স্ক্যান্ডাল
ওয়াটারগেট ও জিপারগেট ও অন্যান্য
দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারির নায়কদের একজন জিম্বাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে মৃত্যুর কিছুকাল আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, আমি যদি একটি টাইম মেশিন পেতাম তাহলে ১৯৪৬ সালে ফিরে গিয়ে ট্রাম্পের বাবার হাতে একটি কনডম তুলে দিয়ে বলতাম, এটা ব্যবহার করুন, তাহলে পৃথিবীতে আপনি একটি কুপুত্রের জন্ম দেওয়ার অভিযোগ শোনা থেকে বেঁচে যাবেন।
ট্রাম্পের বাবার নাম ফ্রেডেরিক ক্রাইস্ট ট্রাম্প, মা ম্যারি অ্যান ম্যাকলয়েড। তারা কোনো জন্মশাসন পদ্ধতির আশ্রয় না নেওয়ায় ১৪ জুন ১৯৪৬ সালে নিউ ইয়র্কের জ্যামাইকা হাসপাতালে ডোনাল্ড জন ট্রাম্প জন্মগ্রহণ করেন।
লিবারেলরা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলেছেন দানব কারণ তার নিজের ছেলে জন্ম নেবার পরপরই আনন্দে এক পর্ণতারকার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, তিনিও কোনো প্রতিষেধক ব্যবহার করেননি। সেই পর্ণতারকা মামলার মুসাবিদা করেছেন এবং প্রমাণ হিসেবে সংযোজনীতে নিজের ছেলেকে গেঁথে দিয়েছেন।
পর্ণনায়িকা স্টর্মি ড্যানিয়েল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে মানহানির মামলা করেছেন তা বিচারাধীন। ট্রাম্প তাকে মিথ্যেবাদী বললেও তার উকিলের মাধ্যমে মুখ বন্ধ রাখার জন্য এক লক্ষ তিরিশ হাজার ডলার পাঠিয়েছেন। তিনি চেক গ্রহণ করেছেন। টাকাটা কোথায় গেল সেটা নিয়ে গোয়েন্দা অনুসন্ধান শুরু হলে স্টর্মি বললেন, 'এ ভাবে তো ডোনাল্ড আমার সাথে ভবিষ্যতে আর কখনো শুতে পারবেন না।'
এতোদিন অভিশংসনের মাপকাঠিতে বিল ক্লিনটনের সাথে তার প্রতিযোগিতা এক এক ড্র ছিল। ক্ষমতা ছাড়ার কদিন আগে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস তাকে আবার অভিশংসিত করলে তিনি দুই এক-এ ক্লিনটন এবং আগেকার আরো দু'জন আমেরিকান প্রেসিডেন্টকে হারিয়ে দেন।
আলোচনার মুখবন্ধেই আর একটু ক্লিনটন বন্দনা করে নিতে চাই। শপথ নিয়ে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বললেন, 'আই ডিড নট হ্যাভ সেক্স উইথ দ্যাট লেডি'।
সবাই বলল, বিল আবার মিথ্যে কথা বলছে। শপথ নিয়ে মিথ্যে বলা আরো বড় অন্যায়। একমাত্র সাজা অভিশংসন। কিন্তু বিরোধী পক্ষীয় আইনজীবী কেনেথ স্টার বললেন, বিল মিথ্যে বলেননি। দ্যাট লেডি বলতে তিনি তার স্ত্রী হিলারিকে বুঝিয়েছেন।
নিক্সনের ওয়াটারগেট কলঙ্ক
পাচজন সিঁধেল চোর ওয়াশিংটনে ওয়াটারগেট কমপ্লেক্স-এ ডেমোক্র্যাট দলের নির্বাচনী প্রচারণার সদর দফতরের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করার সময় একজন প্রহরী দূর থেকে তা দেখতে পায়। তার বার্তা পেয়ে পুলিশ আসতে দেরি করেনি, পাঁচজনই গ্রেফতার হয়; আর গ্রেফতারের সময় তাদের সঙ্গে ছিল: একটি নতুন মাইক্রোফোন--এটা তারা ভেতরে নিয়ে যেতে চাচ্ছিল। দরজায় খিড়কিতে তারা টেপ লাগিয়েছিল। আর তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ফোন নম্বরও ছিল যা সন্দেহকে ঘনীভূত করলেও চোরদের সাথে দেশের প্রেসিডেন্টের একটি যোগসূত্র রয়েছে এটা কখনই কেউ ভাবেনি।
রিচার্ড মিলহাউস নিক্সন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার ছিলেন। রাজনীতিতে যোগ দিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেসম্যান এবং পরে সিনেটর নির্বাচিত হন। ১৯৬০ সাল পর্যন্ত আট বছর প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট আইজেনহাওয়ারের সাথে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৬০ সালে রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়ে সামান্য ব্যবধানে জন এফ কেনেডির সাথে পরাজিত হন। ১৯৬৮ সালে নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিউবার্ট হামফ্রেকে পরাজিত করে তিনি হোয়াইট হাউসে আসেন।
ভিয়েতনাম যুদ্ধ তার জনপ্রিয়তা ক্রমেই হ্রাস করছিল। নিক্সনকে যে সব যুদ্ধের মোকাবেলা করতে তার অন্যতম একটি হচ্ছে নিজের অজনপ্রিয়তা সামাল দিয়ে পদ রক্ষা করে যাওয়া। তা প্রথমবারে তিনি ভালোই পেরেছেন। ১৯৭২ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জর্জ ম্যাকগভর্নকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে পুনরায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহন করেন। তিনি মনে করেন ১৯৬০ সালেই তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন কিন্তু কেনেডি পরিবারের প্রতি গণমাধ্যমের অযৌক্তিক সমর্থনই তাকে সেযাত্রায় হারাতে সাহায্য করেছে।
গ্রেফতার হওয়া চোরদের সাথে সিআইএর সাবেক কর্মকর্তা হাওয়ার্ড হান্টের যোগসাজস রয়েছে- এই সূত্রটি আবিষ্কারের পর ওয়াশিংটন পোস্টের সংবাদদাতা বব উডওয়ার্ড ও কার্ল বার্নস্টাইন স্মরণকালের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার উদাহরণ সৃষ্টি করে, পর্যায়ক্রমে নির্বাচন কেলেঙ্কারির সাথে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের যোগসূত্রও প্রতিষ্ঠিত করেন। এটা স্পষ্ট নিক্সন কখনো ডেমোক্র্যাটদের অফিস ভেঙ্গে তথ্য সংগ্রহ করার আদেশ দেননি। আদেশ দিয়েছেন তার এটর্নি জেনারেল জন মিশেল। তিনি চেষ্টা করলেন হোয়াইট হাউসকে নিষ্কলুষ রাখতে, তবে চোর এবং তাদের দলপতিকে দেখার জন্য হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ বব হ্যালডেম্যানকে বললেন।
১৯৭২-এর নির্বাচনে সিনেটর জর্জ ম্যাকগভর্নকে বস্তুত প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে পরাজিত করে রিচার্ড নিক্সন দ্বিতীয় দফার জন্য প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, আগেই উল্লেখ করেছি; নিজেকে রক্ষার নানা কৌশলের একটিতে তিনি বব উডওয়ার্ড ও কার্ল বার্নস্টাইনের ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ বন্ধ রাখতে আদালতে গেলেন কিন্তু সেখান থেকে নিদারুণভাবে প্রত্যাখ্যাত হলেন।
এই দুই সাংবাদিকের লেখা অল দ্য প্রেসিডেন্টস ম্যান বই আকারে প্রকাশিত হলো, পরে সিনেমাও হলো। সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য দু'জন পুলিৎজার পুরস্কার পেলেন্ ততদিনে নিক্সনের বিরুদ্ধে নির্বাচন কেলেঙ্কারির অভিযোগে আন্দোলন শুরু হয়ে গেল। প্রেসিডেন্টের প্রেস সেক্রেটারিকে স্টেটমেন্ট দিতে হলো যে সাংবাদিকরা যা প্রকাশ করেছেন তার সবটাই সত্য। কিন্তু দুই সাংবাদিক এতো সব তথ্য ও প্রমাণ পেলেন কোথায়? তাদের রচনায় তারা এই ব্যক্তিকে ডিপ থ্রোট বলে উল্লেখ করেন। অনেক বছর পর প্রকৃত ডিপ থ্রোট আত্মপ্রকাশ করেন, তার নাম মার্ক ফেল্ট, তিনি ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন অর্থাৎ এফবিআইর দ্বিতীয় প্রধান। তদন্তে বেরিয়ে আসে কেবল ওয়াটারগেট নয়, হোয়াইট হাউসের ভেতরে কোথায় কি হচ্ছে নিক্সন তার গোয়েন্দা সূত্র ব্যবহার করে সবকিছু টেপ করাতেন। ওয়াটারগেট চোরদের একজন জেমস ম্যাককর্ড আদালতের জজ জন সিরিকার কাছে এক চিঠিতে জানান তিনি শপথ নিয়ে মিথ্যে কথা বলেছেন; কেবল সিআইএ নয় এই টেপ কেলেঙ্কারির সাথে হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জড়িত।
ওয়াটারগেট কমপ্লেক্স
অনেকদিন ঠেকিয়ে রাখলেও হাউস জুডিশিয়ারি কমিটির নির্দেশে নিক্সন তার হাতে থাকা ওয়াটারগেট টেপগুলো হস্তান্তর করতে বাধ্য হন। আর এতেই নিশ্চিত হয়ে যায় তার ক্ষমতার অপরাধজনক অপব্যবহার, রাষ্ট্রীয় কাজে বাধা, মিথ্যাচার এবং সংবিধান পরিপন্থী অনেক কাজ।
নিক্সনের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব উত্থাপিত হল। নিক্সন হিসেব করে ফেললেন এটা ঠেকানো মুশকিল হবে। ৯ আগস্ট ১৯৭৪ সালে প্রেসিডেন্ট নিক্সন পদত্যাগ করলেন, পরদিনই নিক্সন ও তার স্ত্রী প্যাট্রিশিয়া হোয়াইট হাউস ত্যাগ করলেন।
ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন এবং স্বীকার করলেন এটা একটা 'আমেরিকান ট্র্যাজেডি' যাতে আমরা সবাই অংশগ্রহণ করেছি। প্রেসিডেন্ট নিক্সনের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব অকার্যকর করা হলো এবং প্রেসিডেন্ট ফোর্ড তার ক্ষমতা প্রয়োগ করে পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের যাবতীয় অপরাধ ক্ষমা করে দিলেন। এই কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত বলে অভিযুক্ত মোট ৬৯ জনের মধ্যে হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ বব হেলডেম্যানসহ ৪৮ জন দোষী সাব্যস্ত হলেন এবং তাদের বিভিন্ন মেয়াদের কারাদন্ড হলো।
১৯৭৭ সালে ডেভিড ফ্রস্ট সাবেক প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সাক্ষাৎকার নেবার সময় প্রশ্ন করলেন 'প্রেসিডেন্ট যদি করেন তাহলে কি তা অন্যায় নয়?'
জবাব দিতে গিয়ে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করলেন।
আর সেই অনুসন্ধানী দুই সাংবাদিকদের একজন বব উডওয়ার্ড এবার ট্রাম্প মাস্তানদের ক্যাপিটল হিল অবরোধ ও দখল নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বললেন, ট্রাম্পের অপরাধ নিক্সনের অপরাধের চেয়ে অনেক বেশি গুরুতর।
ক্লিনটনের জিপারগেট কলঙ্ক
ওয়াটারগেট স্ক্যান্ডাল সারা পৃথিবীতে এতো পরিচিতি পায় যে বিভিন্ন দেশে যে কোনো কেলেঙ্কারির সাথে গেট শব্দটি যোগ করার একটি ফ্যাশন শুরু হয়ে যায়। বাংলাদেশেও বালিশগেট, পাপিয়াগেট, শাহেদগেট বিভিন্ন আড্ডায় বলা ব্যঙ্গ করে রগড় করে বলা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের কেলেঙ্কারি মূলত যৌন, নারীঘটিত এবং সঙ্গতকারণেই তাতে ট্রাউজারের জিপার খোলার প্রয়োজন রয়েছে।
১৯৯৮ সালের ২০ আগস্ট প্রকাশিত পত্রিকার সংবাদ শিরোনামে 'জিপারগেট' উঠে আসে। কোনো কোনো পত্রিকা একে মনিকাগেট, লিউইনস্কিগেট, সেক্সগেট ইত্যাদিও লিখেছে।
মণিকা লিউনিস্কির ঘটনা বিল ক্লিন্টনকে আমেরিকান প্লেবয় প্রেসিডেন্ট উপাধি এনে দেয়। ওই সময়ে ক্লিন্টনকে নিয়ে রসাল গল্পের শেষ নেই। একটি প্রচলিত কৌতুক সে সময়ের, এতে প্রেসিডেন্টকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে সেইফ সেক্স মানে কি? তিনি জবাব দিয়েছেন, যখন আমার স্ত্রী হোয়াইট হাউস থেকে দূরে থাকে তখনই আমার জন্য সেক্স সেইফ।
বহুলশ্রুত একটি বিল পাশের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ক্লিন্টনের আরেকটি গল্প: কংগ্রেসে পাস হয়ে একটি বিল প্রেসিডেন্টের সম্মতির জন্য হোয়াইট হাউসে এল। প্রেসিডেন্ট সই করলেই তা আইনে আইনে পরিণত হবে।
হোয়াইট হাউস কর্মকর্তা নথিটি প্রেসিডেন্টের সামনে তুলে ধরে বললেন, মিষ্টার প্রেসিডেন্ট, আপনার সই লাগবে। রিপাবলিকানদের বিরোধিতার পরওিএটি কংগ্রেসে পাশ হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট জিজ্ঞেস করলেন, কিসের বিল?
-অ্যাবরশন বিল।
শুনেই প্রেসিডেন্ট থ হয়ে হোয়াইট হাউসের ইন্টার্নিদের চেহারা মনে করতে শুরু করলেন। কোন জনের ফেঁসে গেছে! তিনি হঠাৎ ক্ষেপে উঠে বললেন, কত ডলার লাগবে? এটা রিপাবলিকানদের জানানোর কি দরকার ছিল?
অর্থাৎ প্রচলিক এ গল্পে জিপারগেট খোলা রাখা প্রেসিডেন্ট ভেবেছেন, কাজটা তিনিই করেছেন। এটা হচ্ছে এমনই অবসেশন, বিল যে আইনে পরিণত হতে পারে এটা তার মাথাতেই নেই, গল্পের মোরাল!
এখানে বিল ক্লিনটনের সঙ্গ-সান্নিধ্যে আসা কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে মনিকার সাথে কেলেঙ্কারির বিষয়টি একটু বিস্তারিত বলা হবে-
জনিতা ব্রডরিক বিল ক্লিনটনের ভলান্টিয়ার ছিলেন। ১৯৯৯ সালে এনবিসি টেলিভিশনের সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ১৯৭৮ সালে ক্লিনটন তার সাথে সাক্ষাৎ করতে হোটেল লবিতে আসেন। কিন্তু সেখানে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা যাবে না এ অজুহাতে তার রুমে যেতে চান। সেখানে যাওয়ার পর সুযোগ বুঝে ক্লিনটন তাকে ধর্ষণ করেন। আর বল প্রয়োগের কারণে তার ঠোঁট থেৎলে গিয়েছিল। লেসলি মিলউই সংবাদ মাধ্যমকে জানান আরকানসর গভর্নর থাকাকালে ১৯৮০ সালে ক্লিনটন তিনবার তার সাথে অশোভন যৌন আচরন করেন। পলা জোন্স ৮ মে ১৯৯১ সালে ক্লিনটনের সাথে আরকানসর লিটল রক হোটেল কক্ষে যান, ক্লিনটন সেখানে অযাচিতভাবে নিজে নির্বসন হন। এটিও যৌন নির্যাতনের মতো ঘটনা। ক্লিনটন ৮৫০০০০ ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়ে মামলা থেকে নিষ্কৃতি পান। ১৯৯৮ সালে উইলি জানান ১৯৯৩ সালে হোয়াইট হাউসের ওভাল হাউসে তার বক্ষদেশ চেপে ধরেন। ক্যাথলিন উইলি ক্লিনটনের সাথে তার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি বইও লিখেন।
তারপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আমেরিকার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে, মনিকা লিউইনস্কির সঙ্গে ক্লিন্টনের সম্পর্ক, যৌনচার এবং অভিশংসন কাহিনী।
১৯৯৫-র জুলাই মাসে অবৈতনিক ইনটার্ন হিসেবে মনিকা লিউইনস্কি হোয়াইট হাউসে কাজ পেল। সরকারি কর্মচারিদের একটি কর্মবিরতি চলতে থাকায় মনিকা কিছু বাড়তি দায়িত্ব পেল ক্লিনটনের চিফ অব স্টাফ পেলেট্রার ওয়েস্ট উইং অফিসে; তার কাজ ফোন ধরা, এদিক ওদিক ছুটোছুটি করা। এই রুমেই প্রেসিডেন্টের সাথে তার প্রথম দেখা। তারপর আরও কয়েকবার দেখা হল, ১৫ নভেম্বর (১৯৯৫) প্রেসিডেন্ট তাকে নিজের কক্ষে ডাকলেন, চুমু দেবেন কিনা জিজ্ঞেস করলেন এবং সেদিনই দ্বিতীয়বার এসে দু'জন যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লেন। মনিকা মনে করেন তারা দুজন দুজনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ছিলেন।
তাদের সম্পর্ক টানা ১৮ মাস চলে, এর মধ্যে মনিকার সাক্ষ্য অনুযায়ী ৮ বার হোয়াইট হাউসে এবং সে পেন্টাগনে বদলি হবার পর আরো ২বার প্রেসিডেন্টের সাথে তার যৌন সম্পর্ক হয়। মনিকা প্রেসিডেন্টকে ক'টা টাই উপহার দেয়, ক্লিনটন তাকে দেন ওয়াল্ট হুইটম্যানের লিভস অব গ্রাস কাব্যগ্রন্থের একটি স্পেশাল এডিশন। পেন্টাগন অফিসে ক্লিনটনের সাথে মনিকা তার রোমান্সের কাহিনী নারী সহকর্মী লিন্ডা ট্রিপকে যখন বলেন, লিন্ডা মনিকার অজ্ঞাতে সব রেকর্ড করে নেয়। তখনও ক্লিনটন ও মনিকার ফোন সেক্স অব্যাহত থাকে। লিন্ডা তাও রেকর্ড করেন। ক্যাথলিন উইলির মামলায় লিন্ডা এসব রসদ আইনজীবী কেনেথ ষ্টারের হাতে তুলে দেন। কেনেথ ষ্টারের হুমকিতে মনিকা মুখ খুলতে বাধ্য হয় এবং মামলায় জড়িয়ে যায়। ১৯৯৭-র মে মাসে দুজনের বাস্তব সম্পর্কের ইতি ঘটে।
প্রেসিডেন্ট শপথ নিয়ে বলেন মনিকার সাথে কখনো তার শারীরিক সম্পর্ক ঘটেনি। কিন্তু যে সব সাক্ষ্য লিন্ডা সরবরাহ করেছে তা ক্লিনটনের শপথ নেওয়া বক্তব্যকে সমর্থন করে না। মনিকার একটি নীল স্কার্টে প্রেসিডেন্টের স্পার্ম লেগেছিল। লিন্ডা ট্রিপ এটিও লন্ড্রিতে দিতে দেয়নি। শপথ নিয়ে মিথ্যা বলার অপরাধে কংগ্রেসে তার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনা হয় এবং তা পাশ হয়েও যায়। কিন্তু সিনেট তা প্রত্যাখ্যান করে। এক পর্যায়ে ক্লিনটন স্বীকার করেন, তার আচরণ প্রেসিডেন্ট সুলভ হয়নি, দুঃখ প্রকাশ করেন; কিন্তু মনিকার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেননি। স্বামীর এসব কাহিনী জেনেও হিলারি বরাবরই মুখ বন্ধ রাখেন। প্রেসিডেন্ট ক্লিন্টন এসব কেলেঙ্কারির মধ্য দিয়েই সাফল্যের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুই টার্ম সম্পন্ন করেন।
এরও আগে কেলেঙ্কারিতে কম বেশি জড়িয়ে আছেন আরো কজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের নাম: প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস (১৭৯৭-১৮০০), জেমস বুকানন (১৮৫৭-১৮৬১), অ্যান্ডু জ্যাকসন (১৮২৯-৩৭), গ্লোভার ক্লিভল্যান্ড (১৮৮৪-৮৮), (১৮৯২-৯৬), ওয়ারেন হার্ডিং (১৯২১-১৯২৩)। হালের প্রেসিডেন্টদের উইপন অব মাস ডেসট্রাকশন আবিষ্কার কিংবা ইরান কন্ট্রা ছোট মাপের কেলেঙ্কারি নয়। উইপন অব মাস ডেমট্রাকশনের নামে পুরো দেশ ধ্বংস করে দিয়েছে আমেরিকা- তাদের প্রেসিডেন্টরা বিচারের মুখোমুখি হন না। ইরান কন্ট্রা রোনাল্ড রেগান আমলের, উইপন অব মাস ডেসট্রাকশন জর্জ বুশের এবং এমন কি ওসামা বিন লাদেন হত্যা কলেঙ্কারি দায় থেকে বারাক ওবামার দায়মুক্তিরও উপায় নেই।
এর আগে ১৯১২ সালে, ওয়াইওমিং-এ ফেডারেল ভূমিতে তেল ও গ্যাসের মজুত পছন্দের ঠিকাদারকে ইজারা দিয়ে বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ওয়ারেন হার্ডিং। কংগ্রেসে প্রথম অভিশংসিত হন অ্যান্ড্রু জ্যাকসন।
তবে সবাইকে, সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প; তার লাম্পাট্য মেনেই যুক্তরাষ্ট্র তাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছে--ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট দলের মাস্তান-হুলিগান, সরকারি লাঠিয়াল দিয়ে অভ্যুত্থান ঘটাবার চেষ্টা করে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে কংগ্রেসে অভিশংসিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, এটি তার দ্বিতীয় অভিশংসন। এটা অনুমিত সিনেট পর্যন্ত গিয়ে অভিশংসন চূড়ান্ত হবার সময় নেই, ২০ জানুয়ারি নতুন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন শপথ নিয়েছেন, আর নির্বাচনে তিনিই জিতেছেন এই দাবি জানিয়ে ট্রাম্প হোয়াইট হাউস ছেড়েছেন।