পেলে: প্রথম প্রেম!
পেলের স্ত্রী সংখ্যা যে কজনই হোক না কেন, তার শয্যাসঙ্গিনী নারীদের মধ্যে যে কজনের নামই থাকুক না কেন, এক বালিকার পিতৃত্বের মামলায় ডিএনএ টেস্টে পেলে যত অস্বীকৃতিই জানান না কেন, প্রথম প্রেমটা তার রোজমেরির সাথেই। আত্মজীবনীতে তিনি যেভাবে লিখেছেন, প্রেমকাহিনিটি সেখান থেকেই অনুসৃত ও ভাষান্তরিত হচ্ছে।
রোজমেরি ও পেলে
মোজার ভেতর পুরোনো কাপড় ঢুকিয়ে ফুটবল বানিয়ে এবং ছেঁড়া জুতো দিয়ে গোলপোস্ট বানিয়ে দিনভর রাস্তায় খেলতে খেলতে ১৭ বছরের তরুণ পেলে স্যান্তোস ক্লাব দল থেকে ব্রাজিলের জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলেন। সে বছরই ১৯৫৮-এর বিশ্বকাপ ফুটবল, সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে। জীবনে প্রথম উড়োজাহাজে চড়ে দলের সাথে পেলে সেখানে পৌঁছলেন। বয়সে পরিপক্কতা আসেনি, রাশিয়ার মতো দেশের দৈত্যাকৃতির খেলোয়াড়দের সাথে কুলিয়ে উঠতে পারবেন না—এই আশঙ্কায় তাকে মাঠে নামতেই দেওয়া হলো না প্রথম দুটি ম্যাচে। তৃতীয় ম্যাচে দলের একজন ব্যবস্থাপকের আপত্তির পরও দয়া করে তাকে সুযোগ দেওয়া হলো। সেই ম্যাচে ওয়েলসের বিরুদ্ধে একমাত্র জয়সূচক গোলটি পেলেই করলেন। সেমিফাইনালে শক্তিশালী ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যখন হ্যাটট্রিক করলেন, পেলের নাম জেনে গেল অর্ধেক বিশ্ব আর অন্যদের সাথে নিজেও গোল দিয়ে যখন ফাইনালে সুইডেনকে হারিয়ে ব্রাজিলের জন্য বিশ্বকাপ জিতে নিলেন, তার নাম জেনে গেল গোটা ফুটবল বিশ্ব। তিনি হয়ে উঠলেন পেলে দ্য কিং।
বিজয়ী ব্রাজিল দেশে ফিরল। পেলের ছবি সবার হাতে হাতে, নামও সবার মুখে মুখে। ফুটবল মানেই পেলে। পেলেকে চেনেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াল।
কিন্তু পেলে অভিনন্দন ও প্রশংসায় না ভাসিয়ে প্রতিদিন রুটিন প্র্যাকটিসে মেতে রইলেন। কয়েক মাস পর তার দল স্যান্তোসের বড় খেলা অপর শক্তিশালী দল করিন্থিয়ানসের বিরুদ্ধে। দলের নিয়মমাফিক ফুটবল থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে পারে এমন যেকোনো পার্থিব ও অপার্থিব বিষয় থেকে মুক্ত থাকতে পেলে ও তার সঙ্গীদের ভিলা বেলমিরোতে চলে আসতে হয়—এমনকি মেয়েদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ। তবে ভিলার ক্রীড়া কমপ্লেক্সে খেলতে আসা কোনো মেয়ের সাথে দেখা হয়ে গেলে সেটা ভিন্ন কথা।
প্রস্তাবটা পেলেরই। নিচে জিমনেসিয়ামে মেয়েদের বাস্কেটবল খেলা হচ্ছে। গেলে মন্দ হতো না। পেলেসহ পাঁচজন জিমনেসিয়ামে চলে এলেন। রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থাকা একটি মেয়ের ওপর তার চোখ পড়ল। মেয়েটিও তাকাল, চোখাচোখি হলো। অদ্ভুত রসায়নের শুরুটা সেখানেই। খেলাই দেখছিলেন। হঠাৎ বিস্ময় তাকে পেয়ে বসে, পেলে দেখলেন, সেই মেয়েটি একেবারে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
মেয়েটি বলল, হাই, তুমি পেলে, ঠিক বলিনি?
সে সময় ভুল হবার সম্ভাবনা কম। পেলের ছবির সাথে সবাই পরিচিত। পেলে যে অনেকেরই পরিচিত হবেন, এটা তিনি জানতেন এবং পরবর্তী সময় তিনি গর্ব করে বলেছেন, যারা যিশুখ্রিষ্টের নাম শোনেনি, তারাও পেলের নাম শুনেছে।
কাহিনির বাকিটা পেলের জবানিতে
'আমি বললাম, ঠিক বলেছ।
আমি মহাখুশি, কারণ, মেয়েটি আমাকে চিনতে পেরেছে।
তারপর মেয়েটি বলল, কাল কিন্তু করিন্থিয়ানসদের বাজেভাবে হারাবে না।
পেলে ধরেই নিলেন মেয়েটি করিন্থিয়ানসদের সাও পাওলো এলাকার। এ কথা বলেই চলে গেল সে, আগে যেখানটায় বসেছিল সেই রিজার্ভ বেঞ্চে গিয়ে বসল।
পেলে লিখছেন, আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকি। সুন্দর বাদামি চুল, ভাবতে থাকি, এত সুন্দর মেয়ে। আমার এই মুগ্ধতা ও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা আমার বন্ধু ও স্যান্তোস দলের খেলোয়াড়দের চোখেও পড়ে। তারা এমনভাবে আমার দিকে তাকায়—ওটা তো বাচ্চা মেয়ে, কী দেখছিস? এ ধরনের একটা প্রশ্ন তাদের দৃষ্টিতে।
মেয়েটি বড়জোর চৌদ্দ (আমিই বা কী এমন বড় মাত্র সতরো)। কিন্তু সে সত্যিই আমার মনে দাগ কেটে গেছে। খেলা শেষ হলে দলের সাথে সেও চেঞ্জিং রুমের দিকে চলে যায়। আমাদের ফিরতে হয় ট্রেনিং ক্যাম্পে। বাকি সময়টা তাকে ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই পারছিলাম না। (ভিলা বেলমিরোতে আটকে রাখার উদ্দেশ্যটাই মনে হয় ভেস্তে গেল, সবকিছু ছাপিয়ে মেয়েটি পেলেকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।)
পরদিন আমি নিজেকে বোঝাতে সক্ষম হই, নিশ্চয়ই সে কাল আমাদের খেলা দেখতে আসবে। আমার দৃষ্টি খেলার সময় যতটা না বলের দিকে তার চেয়ে বেশি দর্শক সারির দিকে। কিন্তু আমাকে হতাশ হতে হলো। সে আসেনি।
তারপর খুব বেশি দিন যায়নি। পথেই আমরা আবার মুখোমুখি হই। সম্পূর্ণ আকস্মিকভাবে স্যান্তোসের রাস্তায় সেই বাস্কেটবল দলের সাথে। আমি ভেবেছিলাম, তারা সাও পাওলো থেকে এসেছে। কিন্তু তা নয়, তারও স্যান্তোসের। তাদের দলে বাদামি চুলের সেই মেয়েটিও আছে। রোজমেরি তার নাম। কাছেই একটা রেকর্ডের দোকানে সে কাজ করে। একেবারে নিরাবেগ কণ্ঠে বললাম, হ্যালো, আবারও দেখা হয়ে গেল। কিন্তু আমার বলার ধরনটা ছিল নার্ভাস যুবকের।
সে বলল 'হাই'।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, তুমি যদি স্যান্তোসের মেয়ে হয়ে থাকো, তাহলে করিন্থিয়ানস জিতুক, এটা কেন চাও।
তার সোজা জবাব, কারণ, আমি করিন্থিয়ানদের সমর্থন করি। তাছাড়া আমি সত্যিই ফুটবল খেলা পছন্দ করি না।
এমন একটা অশুভ আলাপের মধ্যেও আমি তাকে রাজি করাতে সক্ষম হয়েছি যে আমার সাথে আবার দেখা করবে। তবে সে অনেক বেশি ছোট, ছেলেদের সাথে বেরোনোর মতো বয়স হয়নি। আমি তার সাথে কথা বলতে চাইলে আমি কোনো এক শনিবার তার বাসায় যেতে পারি। সেটা তার ছুটির দিন।
দ্বিতীয় স্ত্রী ও যমজ সন্তান
যেমন কথা, ভালো ছেলের মতো তাই মেনে নিয়ে কোনো এক শনিবার আমার সর্বোত্তম পোশাক ও চকচকে জুতো পরে, নখ কেটে, মুখ ধুয়ে চেহারায় ঔজ্জ্বল্য এনে তাদের বাড়িতে গিয়ে হাজির হলাম। রোজমেরির বাবা-মা খুব সজ্জন, তারা আমাকে সাদরে গ্রহণ করলেন। তবে তাদের মেয়ের সাথে সাক্ষাৎ করতে আসা প্রথম ভিজিটরই কালো মানুষ। তার মা দোনা ইদালিনা আমাদের খাবারের জন্য কিছু বিস্কুট বানিয়েছেন। তার বাবা গিলহার্ম চোলবি স্যান্তোস ডকইয়ার্ডে কাজ করেন, তিনি সত্যিকারের ফুটবল-প্রেমিক। আমি বেশ খুশি, আমি যাতে কোনো ধরনের অস্বস্তিতে না পড়ি, তারা সেদিকটা লক্ষ রেখেছেন। আমি যে শনিবারটা কাটালাম, সেটা আমার সারাজীবন মনে থাকবে। আমি সেখানে একটি পারিবারিক আবহ পেয়েছি, অনেকটাই নিজের বাবা-মায়ের সাথে থাকার মতো।
পরবর্তী মাসগুলোতে এবং বছরগুলোতে আমার বহুবার সে বাড়িতে যাওয়া হয়েছে। আমাদের সম্পর্কটি দীর্ঘদিন ধরে চলেছে। আমাদের সম্পর্কের ধরনটা কেমন, এ নিয়ে রোজের পরিবারের কেউ আমাকে চাপাচাপি করেনি। আমরা যখন সিনেমা দেখতে যেতাম, এককভাবে রোজকে নিয়ে যেতে পারিনি। তার একজন আন্ট অবশ্যই থাকতেন। দুজন আগে গিয়ে সিনেমা হলে আসন গ্রহণ করতেন। তারপর যখন হলের আলো নিভে যেত, আমি এগিয়ে যেতাম এবং তার পাশে বসতাম। সবার সামনে সম্পর্কটা প্রকাশিত না হবার বাধা ছিল (কালো হবার কারণে কি?)। আমি ভাবতে শুরু করি, তাহলে কখন আমরা বিয়ে করতে পারব।
আমি যে চাচ্ছি রোজমেরি আমার স্ত্রী হোক, সেটাই আমার ভেতরের চাওয়া। আমি যতই চাই, যত আবেগ দিয়েই চাই না কেন, সে তো ছোট। তা ছাড়া সে ফুটবল পছন্দ করে না। আবারও আমার মনে প্রশ্ন জাগে: রোজমেরি কি সত্যিই আমাকে বিয়ে করতে চায়? সে কি আমাকে ভালোবাসে না বিখ্যাত ফুটবল খেলোয়াড় পেলেকে ভালোবাসে। এসব ভাবতে ভাবতে আমার স্মৃতিতে শৈশবে বাওরুতে থাকার সময়টার কথা মনে পড়ে। সেখানকার নিওজিনা পরিবারের জাপানি মেয়েটির কথা মনে পড়ে। আমি মেয়েটকে পছন্দ করতাম—তারা কখনো আমাকে ফুটবলার বিবেচনা করেনি, আমি ছিলাম কেবল একটি বালক, একটি ছেলে। আমাকে মানে, তারা এডসনকে কেবল এডসন হবার জন্যই পছন্দ করত। পেলের পুরো নামটি স্মরণ করুন: এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো। ১৯৫৮-এর বিশ্বকাপের সময় গোথেনবার্গে ইলিয়া নামের যে মেয়েটির সাথে দেখা হয়েছিল—আমি ব্রাজিল ন্যাশনাল স্কোয়াডের সদস্য কিনা, এটা সে আদৌ আমলে এনেছে বলে মনে হয় না। আমরা দুজন ভিন্ন মানুষ নিজেদের পছন্দ করছি এবং দুজনের মধ্যে যেসব অমিল রয়েছে, তা-ও মেনে নিয়েছি। এসব কথা আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। আমি রোজমেরিকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেবার আগে এমন অনেক কথাই মনে হয়েছে।
বিশ্বকাপ বিজয়ের কয়েক মাস পর পেলের ১৮তম জন্মদিন পালিত হলো। রাষ্ট্রের নিয়ম অনুযায়ী এবার তাকে বাধ্যতামূলক মিলিটারি ট্রেনিং এবং মিলিটারি সার্ভিসে যোগ দিতে হয়। পেলের যুক্তি, ফুটবল খেলে আমি অনেক দেশের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি ব্রাজিলের সৈনিক হিসেবে, আরও অনেক লড়তে হবে। সবই করব। কিন্তু সেনাবাহিনীতে কেন?
ছাড় পাবার একমাত্র উপায় শারীরিক অক্ষমতা। জাতীয় দলের ডাকসাইটে খেলোয়াড় পেলে, তিনি শারীরিকভাবে অক্ষম বললে বিশ্বাস করানো কঠিন হবে। তিনি অব্যহতি পাননি। ১৯৫৯-এর নভেম্বরে সাউথ আমেরিকান মিলিটারি চ্যাম্পিয়নশিপে আর্মি একাদশের হয়ে খেললেন। তিনি স্বীকার করেছেন সেনাবাহিনী তাকে সুশৃঙ্খল মানুষ বানিয়েছে আর বিশ্বকাপ বিজয় তাকে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ এনে দিয়েছে। রোজমেরির সাথে সম্পর্কের বেশ কয়েক বছর পেরিয়ে গেছে। ১৯৬৫-তে সাত বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। পেলে একই সঙ্গে স্যান্তোসের ব্রাজিল দলেরও সিনিয়র প্লেয়ার। তিনি যদি বিয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে না পারেন, তাহলে কে পারবে?
একদিন রোজমেরির সাথে বসে গেলাম—আমি এবার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, বিয়ে করবই। কিন্তু প্রতিবারই বয়স অনেক কম কিংবা আরও কিছুদিন যাক না, এসব অজুহাত দেখিয়ে বিয়েটাকে পিছিয়ে দিয়েছে। আমি তাকে জানিয়ে দিলাম, পরের উইকএন্ডে তার বাবা যখন মাছ ধরতে যাবেন, আমিও তার সাথে যাব এবং রোজকে বিয়ে করার জন্য তার অনুমতি প্রার্থনা করব।
তিনি যে আশীর্বাদ করবেন, আমি নিশ্চিত; কারণ, আমি যে তার মেয়েকে ভালবাসি, সেটা প্রমাণ করতে পেরেছি। আমি ভালো কামাই করছি, ভালো জীবনযাপন করছি, আমার খ্যাতিও হয়েছে। স্যান্তোস সমুদ্রসৈকতের অনতিদূরে বাড়ি পেয়েছি। ক্লাবের সাথে চুক্তির শর্ত ছিল এই বাড়ি পাওয়া।
রোজমেরির বাবা গিলহার্মের সাথে মাছ ধরতেও গেলাম—জানালাম তাদের কন্যা রোজমেরিকে এখন বিয়ে করতে চাই। আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে আমাকে আলিঙ্গন করার বদলে তিনি মাথা নেড়ে ঠান্ডা মাথায় বললেন, বেশ আমি বাড়ি ফিরে আমার স্ত্রীর সাথে কথা বলে দেখি।
দিনের বাকি সময়টা অস্থিরতায় কাটল, তার সাথে রোজদের বাড়ি গেলাম। দোনা ইদালিনাকে তার স্বামী আমার প্রস্তাবটি শোনাল। অন্তত দোনাকে খুশি মনে হলো, তিনি বললেন, এই সিদ্ধান্ত নিতে এত দেরি হলো কেন, সেটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।
শেষ পর্যন্ত আমাদের বিয়ের এনগেজমেন্ট হয়ে গেল। তারপরও রোজ বলেছে, আরও কিছুদিন দেরি করলে হতো না।
১৯৬৬ সালের কার্নিভাল সপ্তাহে আমাদের বিয়েটা হয়ে গেল। খুব সাধারণ উৎসব, কেবল আমাদের দুই পরিবার সদস্যদের উপস্থিতি। রোজের নাম হলো রোজমেরি চোলবি নাসিমেন্তো।
আমাদের বিয়ে নিয়ে গুজবের কমতি ছিল না। খবরের কাগজে বেরিয়েছে পোপ স্বয়ং আমাদের বিয়ে পড়াবেন। অন্য একটিতে ছাপা হলো, এত বেশি অতিথি আমন্ত্রিত যে তাদের স্থান সংকুলান করতে পেকাম্বু স্টেডিয়ামকেই ভেন্যু নির্বাচন করা হয়েছে। এটার অবশ্য একটা ভিত্তি রয়েছে—আমি রোজমেরিকে বলেছিলাম, যারা আমাদের বিয়েতে থাকতে চাচ্ছেন, তাদের সকলকে যদি দাওয়াত দিই, তাহলে মারাকানা স্টেডিয়ামটা নিতে হবে।
কোনো কোনো পত্রিকা আমাদের বিয়ে অনুমোদন করেনি—কালো মানুষ হয়ে শেতাঙ্গ নারীকে বিয়ে করা তারা ভালো চোখে দেখেনি। আমরা দুজন মানুষ, একজন কালো একজন সাদা—আমি এবং রোজ যখন প্রেমে পড়ি, গায়ের রং তো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি, সমস্যা আমাদের নয়, যারা বলছে, তাদের।
তারপর হানিমুনে ইউরোপ সফর। ইতালিতে নেমে ভ্যাটিকান গেলেন তারা। পোপ সত্যিই নতুন দম্পতিকে আশীর্বাদ করলেন। একটি বিরতিসহ কমবেশি একযুগ টিকে থাকা এ বিয়েতে পেলে-রোজ দম্পতির তিনটি সন্তান। কেলি ক্রিস্টিনা (১৯৬৩), এডসন (১৯৭০) এবং জেনিফার (১৯৭৮)। অনেক বছর বিচ্ছিন্ন থাকার পর ১৯৮২ সালে তাদের তালাক চূড়ান্ত হয়।
পেলের উপেক্ষিতা কন্যা সান্দ্রা ও তার মা আনিজিয়া মাকাদো
পেলের জীবনে নারীর আগমন অব্যাহত থাকে। তার সাথে বিবাহসম্পর্কিত ও বিবাহবহির্ভূত নারীদের মধ্যে রয়েছে মডেল ফ্লাবিয়া ক্যাভালক্যান্তি রোভেলো, সাংবাদিক লেনিতা কার্জ, টিভি উপস্থাপক শুয়া, মনোবিজ্ঞানী অ্যাসিরিয়া লেমোস সিক্সা, ব্যবসায়ী মার্সিয়া আয়োরি।
তবে আনিজিয়া মাকাদো প্রসঙ্গটা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তার বাড়ির গৃহকর্মী আনিজিয়ার সাথে পেলের সম্পর্ক থেকে জন্ম নেয় সান্দ্রা রেজিনা মাকাদো। পেলে অস্বীকার করেন, সান্দ্রা তার কন্যা নয়। ডিএনএ দাখিলের নির্দেশ হয়, পেলে তাতেও সম্মত হননি। সান্তা রেজিনা আরান্তিস দো নাসিমেন্তো (২৪আগস্ট ১৯৬৪—১৭ অক্টোবর ২০০৫) পেলের বঞ্চিত কন্যা পিতৃস্নেহ পাননি, পিতার সম্পদও না। তবে আদালতের রায় পেয়েছিলেন যে পেলেই তার পিতা।