বিয়ের আগে জীবনসঙ্গীর মধ্যে যে ৩টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
সবাই চায় নিজের পছন্দমতো জীবনসঙ্গীকে খুঁজে নিতে। কিন্তু যার সাথে সারা জীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখেন তার সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
আপনি কাউকে আপনার আদর্শ জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিলেও পরে হয়ত দেখা গেল নিজের সিদ্ধান্তে আশাহত হয়েছেন বা আফসোস করছেন।
সৌভাগ্যক্রমে, এবারও আপনার জন্য এগিয়ে এসেছে বিজ্ঞান। আদর্শ সঙ্গী সন্ধানের জন্য কোনো নিখুঁত সূত্র না থাকলেও গবেষণায় এমন কারণগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে যা শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী রোমান্টিক সম্পর্কগুলোতে অবদান রাখে।
জীবনসঙ্গী নির্বাচনে যে ৩টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে:
একসঙ্গে সময় কাটানো
একসাথে সময় কাটানো যে কোনো প্রেমের সম্পর্কের মূল ভিত্তি। এটি হতে পারে কথা বলা বা একসাথে কোনো কাজ করা কিংবা কেবল চুপচাপ পাশাপাশি বসে থাকার মাধ্যমে। মূল কথা হলো আপনাকে আপনার সঙ্গীর সাথে সময় কাটাতে হবে, তাকে সময় দিতে হবে।
কনটেম্পোরারি ফ্যামিলি থেরাপিতে প্রকাশিত ২০২১ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ব্যক্তিরা তাদের সঙ্গীর সাথে আলাপচারিতায় বেশি সময় ব্যয় করেন তারা তাদের সাথে আরও ঘনিষ্ঠতা অনুভব করেন।
যে দম্পতিরা একে অপরের সাথে কথা বলার জন্য বেশি সময় ব্যয় করে তাদের সম্পর্কের সন্তুষ্টি বেশি থাকে এবং তাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরস্পরের প্রতি আরও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি উপলব্ধি করে।
সুতরাং, কথা বলা এবং একসাথে থাকা সম্পর্কের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে এবং সন্তুষ্টি আনে।
একটি ভালো রোমান্টিক সম্পর্কের মধ্যে একসাথে শান্ত শিথিলতার মুহুর্তগুলোও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। আপনাকে সর্বদা যে কথোপকথন বা কোনো কাজ দিয়ে আপনার সময় পূরণ করতে হবে না এমনটা না। যদি আপনি এবং আপনার সঙ্গী নীরবতার মধ্যেও একে অপরের সঙ্গ উপভোগ করতে পারেন, নিজের কাজ করেন বা চাপ ছাড়াই কেবল একসাথে থাকেন তবে সে-ই হয়ত আপনার সেই কাঙ্ক্ষিত আদর্শ সঙ্গী।
গঠনমূলক যোগাযোগ
জীবনসঙ্গীর সঙ্গে যোগাযোগের স্বাধীনতা একটি সুখী সম্পর্কের অন্যতম ভিত্তি। দম্পতির মধ্যে যোগাযোগের ধরণগুলো একটি সম্পর্ক তৈরি করতে বা ভেঙে দিতে পারে। আপনার এবং আপনার সঙ্গীর যোগাযোগ পন্থা যদি বেমানান বা ত্রুটিযুক্ত থাকে তবে বিবাহ বা দীর্ঘমেয়াদি জীবনে তা সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই সম্পর্ককে স্থায়ী করার আগে যোগাযোগের পদ্ধতিকে বিবেচনায় রাখা উচিত। যে ব্যক্তির সঙ্গে আপনাকে আপনার জীবন কাটাতে হবে, তার সাথে সঠিক সংযোগ স্থাপন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জীবনসঙ্গীর সঙ্গে যোগাযোগের স্বাধীনতা একটি সুখী সম্পর্কের অন্যতম ভিত্তি।ক্রুটিযুক্ত অসমাপ্ত যোগাযোগ বিরক্তির কারণ হতে পারে, যার ফলস্বরূপ ঘন ঘন তর্ক বা অভিমানে কথা না বলার মতো অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
ইতিবাচক এবং সঠিক উপায়ে একে অপরের সাথে কথা বলা সম্পর্ককে আরও সুখী করতে পারে। সমীক্ষা অনুসারে, যখন দম্পতিরা ভালোভাবে যোগাযোগ করেন, তখন তারা তাদের সম্পর্ক নিয়ে আরও সন্তুষ্ট হন এবং তাদের বিবাহিত জীবনে কম ত্রুটি দেখতে পান। একটি সুস্থ সম্পর্কে উভয়কেই অংশ নিতে হয়, মতামত প্রকাশ করার কোনো ভয় যাতে না থাকে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
২০২০ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে যেকোনো ব্যাপার নিয়ে খোলামেলা হওয়া, একে অপরকে আশ্বস্ত করা এবং দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার মতো ইতিবাচক পদক্ষেপগুলো সম্পর্ককে আরও সন্তোষজনক এবং সুখী করে তুলতে পারে। একে অপরের সাথে ভালো আচরণ করা আপনার বন্ধনকে শক্তিশালী করে একটি সুখী সম্পর্কের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
আর্থিক বোঝাপড়া
সম্পর্কে দু'জনকার মধ্যে আর্থিক সামঞ্জস্যতা থাকা জরুরি। যদি আপনার এবং আপনার সঙ্গীর একই আর্থিক লক্ষ্য থাকে এবং ব্যয় এবং সঞ্চয় নিয়ে একসাথে কাজ করেন তবে এটি আপনার বন্ধনকে শক্তিশালী করতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক হেলথে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে দম্পতিরা যেভাবে তাদের আর্থিক হিসাব নিকাশ পরিচালনা করেন তা তাদের সম্পর্কের মানকে প্রভাবিত করে। । পরস্পরের আর্থিক বোঝাপড়া ভালো হলে সম্পর্কও সুস্থ থাকে।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, দম্পতির মধ্যকার আর্থিক সমস্যা সম্পর্ক এবং বৈবাহিক জীবনে সমস্যা তৈরি করতে পারে। দক্ষ আর্থিক ব্যবস্থাপনা চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ভবিষ্যতের আর্থিক অনিশ্চয়তা হ্রাস করে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং বীমা, সম্পর্কের গুণমান নির্ধারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সঠিক, ভারসাম্যপূর্ণ ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং বীমা করা কাউকে তাদের সঙ্গীর কাছে আকর্ষণীয় এবং আশ্বস্ত করে তুলতে পারে। এটি সুরক্ষা এবং সুরক্ষার অনুভূতি দেয়, যা সম্পর্ককে শক্তিশালী করে তোলে।
আপনি কীভাবে অর্থ এবং আপনার আর্থিক লক্ষ্য পরিচালনা করেন তা একটি সুখী সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনাদের দুজনেরই একই আর্থিক লক্ষ্য থাকে এবং অর্থের ব্যবস্থাপনা ভালোভাবে করতে পারেন, তাহলে এর অর্থ হতে পারে আপনারা একে অপরের জন্য সঠিক জীবনসঙ্গী।
বিয়ে একটি বড় প্রতিশ্রুতি। তাই বিয়ের জন্য সঠিক সঙ্গী বাছাই করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আপনি আপনার সঙ্গীর সাথে জীবনে চলার পথে নানা অভিজ্ঞতা ভাগ করবেন ও উথান পতনের মধ্যে দিয়ে যাবেন। তাই সঠিক সিদ্ধান্ত ও জীবনসঙ্গী নির্বাচন আপনার জীবনধারণ সুন্দর করে তুলবে।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন