ভারতে বাঘ বাড়ছে, বাংলাদেশে বাড়ছে না কেন?
খসরু চৌধুরী—প্রখ্যাত সুন্দরবন ও বাঘ বিশেষজ্ঞ। দিনের পর দিন সুন্দরবনে পড়ে থেকেছেন বাঘেদের সম্পর্কে জানার জন্য। বাঘ নিয়ে তার এন্তার লেখাজোখা। ২৯ জুলাই আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস। এ উপলক্ষে বাঘ নিয়ে নিজের কর্ম এবং বাংলাদেশে বাঘেদের বর্তমান অবস্থা, ভবিষ্যৎ নিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন খসরু চৌধুরী।
প্রশ্ন: বন্যপ্রাণের প্রতি আগ্রহী হলেন কীভাবে?
খসরু চৌধুরী: আমার বাবা ছিলেন পুলিশ অফিসার। বরিশাল, ফরিদপুরের গ্রাম এলাকায় তার বদলি হতো। আমাদেরও বাবার সঙ্গী হতে হতো। এর ফলে আমার 'পিয়ার গ্রুপ' গড়ে ওঠেনি। আমার আশ্রয় ছিল গ্রামীণ জঙ্গল। পড়াশোনার সময়টুকু ছাড়া মাছ ধরা, পাখি শিকার, বন্যপ্রাণ পোষা আমাকে বেশি টানত। সেই থেকে বন্যপ্রাণ আমার আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
প্রশ্ন: বাঘ আপনাকে কেমন করে টানল?
খসরু চৌধুরী: দেখুন, বাঘ একটা কিংবদন্তিতুল্য প্রাণী। অত্যন্ত শক্তিশালী, বিরাট ঐতিহ্যের প্রাণী। বাঘের সাহস, শক্তি, ক্ষমতা, আকার বনে তার প্রভাব আপনি অগ্রাহ্য করতে পারেন না। আপনি লক্ষ করবেন, বাঘ নিয়ে যত লিটারেচার—সে শিকার কাহিনি হোক অথবা সাহিত্য—অন্য কোনো বন্যপ্রাণ নিয়ে এত লেখা পাবেন না। বাঘ অধ্যুষিত প্রতিটি দেশের মানুষই বাঘকে আল্টিমেট সিম্বল অভ ন্যাশনাল প্রাইড মনে করে। ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমি একদল চোরাই শিকারির সঙ্গী হয়ে সুন্দরবনে ঢুকি। সে সময় স্থানীয় জনগণের ওপর বাঘের সাইকি (psyche) কীভাবে কাজ করে তার একটা ধারণা পাই। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষও একটা পরিণত বাঘের সঙ্গে খালি হাতে দশ মিনিটও টিকে থাকতে পারবে না। ইট ক্যান কিল মি, ইট ক্যান ওভারপাওয়ার মি—এই ধারণাটা আমাকে বাঘকে সম্মান করতে বাধ্য করেছে।
প্রশ্ন: এরপর কি বাঘ নিয়ে লেখা শুরু করলেন?
খসরু চৌধুরী: তখনই না। লেখা শুরু করি তারও দশ বছর পর। এর মধ্যে অন্তত বার পাঁচেক সুন্দরবন গিয়েছি। ১৯৮৫ সালে আমার শিকারগুরু আখতারুজ্জামান, পচাব্দী গাজীর শিকার কাহিনির লেখক হুমায়ূন খানসহ আমরা বিশ দিনের মতো পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবনের নানা এলাকায় ঘুরি। সে যাত্রায় আমাদের সঙ্গী ছিলেন পচাবদী গাজী। অবশ্য ১৯৭৯ সালেই তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। এরপর কবি রফিক আজাদের উৎসাহে প্রথমে সাপ্তাহিক রবিবার ও ১৯৮৮ সাল থেকে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় নিয়মিত লিখতাম। ১৯৯২ সাল থেকে দ্য ডেইলি স্টারে লিখছি। ১৯৮৯ সালে বন বিভাগের আনুকূল্যে চার মাস জঙ্গলে থেকে বাঘের পিছু হাঁটা শুরু করি।
প্রশ্ন: আপনার ভয় করেনি?
খসরু চৌধুরী: আমিও তো একটি জীব সত্তা। নিশ্চয় ভয় পেয়েছি। আপনি হয়তো অনেক প্রস্তুতি নিয়ে জঙ্গলে গিয়েছেন। বাঘ নিয়ে অনেক পড়েছেন। জঙ্গলে আপনি স্বচ্ছন্দ বোধ করতে পারেন কিন্তু হাঁটতে হাঁটতে যখনই বাঘের পায়ের ছাপ বা মল দেখতে পাবেন, তখনই আপনার শরীরে একটা প্রতিক্রিয়া বুঝতে পারবেন। আপনি যতই জঙ্গল সাইন ইন্টারপ্রেট করতে পারেন না কেন, আপনার মনে হবে কেউ আপনাকে আড়াল থেকে দেখছে। আর যদি বাঘে মারা মানুষ দেখার দুর্ভাগ্য হয় তাহলে আপনার অন্তর চমকে উঠবে। মনে হবে আপনি একখণ্ড মাংসপিণ্ড মাত্র।
দীর্ঘদিন বাঘের পিছু করতে করতে একটা সময় আপনার ওপর একটা ভয় চেপে বসে। অনেক দিনই আমার মনে হয়েছে মাই ফেইট ইজ রিটেন অন টাইগারস প'। এই অবস্থা কাটাতে আমি অনেকবার চিড়িয়াখানায় বাঘের খাঁচার পাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেছি।
প্রশ্ন: জিম করবেট বাঘকে বলেছেন 'জেন্টলম্যান অভ দ্য ফরেস্ট'। আপনার কী মনে হয়?
খসরু চৌধুরী: দেখুন, উপমহাদেশে অনেক ইংরেজ সামরিক অফিসার, সিভিলিয়ানরা বাঘ শিকার করেছেন। তারা অনেকেই বই লিখেছেন। নেটিভদের তুচ্ছ করতে তারা বাঘকে 'লার্জ হার্টেড জেন্টলম্যান' বলেছেন। করবেট এগুলির প্রতিধ্বনি করেছেন মাত্র। যেমন ধরুন, বাঘ আহত হলে, শিকারে অক্ষম হলে মানুষ মারে, এটাও করবেটের নিজের আবিষ্কার না। আগের শিকারিদের প্রতিধ্বনি মাত্র। অন্তত দুটো ক্ষেত্রে জেনেছি বৃদ্ধ, অথর্ব বাঘ স্বাভাবিকভাবে মরেছে, মানুষখেকো হয়নি।
প্রশ্ন: এখনকার সময়টা সায়েন্স এইডেড স্পেশালিস্টদের। সেখানে আপনার অবস্থান কীভাবে দেখেন?
খসরু চৌধুরী: দেখুন, আমি শিকারি থেকে কনজারভেশনিস্টে বিবর্তিত হবার শেষ মানুষদের একজন। লক্ষ করলে দেখবেন, ডব্লিউডব্লিউএফ (ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড), ক্যাট স্পেশালিস্ট গ্রুপ, স্পিশিজ সারভাইভাল কমিশনের উদ্যোক্তারা কেউই শিক্ষিত বায়োলজিস্ট ছিলেন না। বন সংরক্ষণ, বাঘ প্রকল্পের আবেদনটা এসেছে অ্যামেচার ন্যাচারালিস্টদের মধ্য হতে, বায়োলজিস্টদের মধ্য থেকে নয়। জিম করবেট, গাই মাউন্টফোর্ট, পিটার জ্যাকসন, ভালমিক থাপার—এরা কেউই বায়োলজিস্ট ছিলেন না। আবার জর্জ শেলর, হিউবার্ট হেনড্রিকস, অ্যালান রবিনোউইটজের মতো বায়োলজিস্টরা বাঘ স্টাডিতে দারুণ ভূমিকা রেখেছেন। বিজ্ঞানী আর প্রকৃতিবিদদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। সামগ্রিক ক্ষেত্রে এরা পরিপূরক।
বেশিরভাগ বায়োলজিস্ট কাজ করেন প্রকল্পভিত্তিক। প্রকল্পের টাকা ফুরিয়ে গেলে তার কাজও ফুরিয়ে যায়। হাতি প্রকল্পে কাজ পেলে তারা ছুটে যান সেখানে। এটা যেমন আছে, আবার ড. রেজা খান, ড. মোস্তফা ফিরোজ, ড. মনিরুল খান ফান্ডের তোয়াক্কা না করে আত্মার গরজে বনে-জঙ্গলে চলে আসেন।
প্রশ্ন: আপনি একসময় বাঘের রেডিও ট্র্যাকিংয়ের তীব্র বিরোধী ছিলেন। এখনও কি তা-ই মনে করেন?
খসরু চৌধুরী: আমার প্রথম বিরোধিতা নৈতিকতার দিক থেকে। বাঘের মতো একটা একলা চলা, স্বাধীন বুদ্ধিমান বড় এক প্রাণীকে একটা ওজনদার রেডিও কলার পরিয়ে দিয়ে সারাক্ষণ মনিটরিংয়ে রাখবেন, সেটা কোনো বিবেকসম্পন্ন মানুষের সহ্য হওয়ার কথা না।
দ্বিতীয়ত, বাঘকে যেভাবে তীব্র সিডেটিভ দিয়ে অজ্ঞান করে কলার পরানো হয়, তাতে বাঘ প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক সময় মারা যায় বা কিছুদিন পর মারা যায়। সুন্দরবনের জলকাদার জঙ্গলে বাঘকে নিয়মিত জলে নামতে হয়। একে দুর্বল, অস্বাভাবিক একটা যন্ত্র বয়ে বেড়ানো, তার ওপর কাদা অনেকসময় বেল্টে আটকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। সর্বোপরি মনিটরিং করতে গিয়ে প্রাণীটিকে সারাক্ষণ তাড়িয়ে বেড়ানো মোটেই উচিত না। এই ধরনের একটি বাঘের কাছ থেকে তার স্বাভাবিক গতিবিধি আশা করতে পারেন না। কাজটি করা হয় বাঘের টেরিটরি সম্পর্কে ধারণা পেতে। সহজ হিসাব হচ্ছে, যেখানে শিকার বেশি, সেখানে বাঘের ঘনত্ব বেশি হবে। আমাদের প্রয়োজন জঙ্গলের ধারণ ক্ষমতা বোঝা; সেটা সম্ভব শিকার প্রাণীর সংখ্যা জানার মাধ্যমে।
প্রশ্ন: ভারতে বাঘ বাড়ছে, বাংলাদেশে বাড়ছে না কেন?
খসরু চৌধুরী: ২০১০ সালে বিশ্বব্যাংক উদ্যোগ নিয়েছিল পৃথিবীর ১৩টি বাঘ অধ্যুষিত দেশে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার। তাদের এই আশাবাদ ছিল ক্ষেত্রসমীক্ষা, বাস্তব পরিস্থিতি না বুঝে বায়বীয় আশাবাদ। ভারত আর নেপাল ছাড়া বাকি দেশগুলিতে বাঘের সংখ্যা অনেক কমেছে। ভারতের ব্যাপারটি আলাদা। পাশ্চাত্যের সংরক্ষণ ধারণার বহু আগে থেকেই ভারতে অভয়ারণ্যের কনসেপ্ট চালু আছে। কৌটিল্য প্রাচীনকালেই সংরক্ষিত অরণ্যের কথা বলে গেছেন। মোগল বাদশা জাহাঙ্গীর তার সময়ের অসাধারণ বন্যপ্রাণ পর্যবেক্ষক ছিলেন। সেখানে বন্যপ্রাণকে অবতার জ্ঞান করা হয়। গ্রামীণ ভারতীয়রা জানেন কীভাবে বন্যপ্রাণের সঙ্গে সহঅবস্থান করতে হয়। ১৯৭০-এ ভারতের অর্থনীতি শক্ত অবস্থানে আসার পর ভারতীয়রা বিদেশি 'অবতার জীববিজ্ঞানী'দের আর উৎসাহ দেয়নি। নিজেদের এক্সপার্ট, অর্থায়ন দিয়ে কর্তব্য ধার্য করেছে।
আর বাংলাদেশ, নেপালসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে বিদেশি অর্থায়নে তথাকথিত এক্সপার্টদের দিয়ে প্রকল্প গেলানো হচ্ছে।
প্রশ্ন: আপনি কি ওয়েস্টার্ন কনজারভেশন কনসেপ্টের বিরোধী?
খসরু চৌধুরী: ব্যাপারটা বিরোধিতার না। আমাদের অনেক কিছু আছে লোকায়ত জীবনধারায়। যেগুলি সময়োপযোগী করে তুলে আনতে হবে। পাশ্চাত্যের ধারণাগুলি আসে উপরমহল থেকে। অথচ যে জনগণ বাঘের কাছাকাছি বাস করছে, তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনাই করা হয় না। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এইসব 'সাদা অবতার' জীববিজ্ঞানী এমনভাবে জেঁকে বসেছে যে আমাদের মগজের মধ্যে বসে গেছে যে এরাই শেষ ভরসা। এদের ছাড়া আমরা অচল। বন্যপ্রাণ-সংক্রান্ত চ্যানেলগুলি বা প্রকৃতি সংরক্ষণবাদী পত্রপত্রিকা এদের এমন ভাবমূর্তি তৈরি করে দেয়, যেন তারা অবতার। অথচ এটা এমন কোনো রকেট সায়েন্স না যেটা আমাদের বিজ্ঞানী, প্রকৃতিবিদরা করতে পারেন না।
অনেক সময় ভাবি যারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বন ধ্বংসের জন্য দায়ী, তারাই আমাদের সংরক্ষণে কিছু টাকা দিচ্ছে। এই জঙ্গল সংরক্ষণটা আমাদের স্বার্থে, নাকি সেসব দেশের প্রাকৃতিক উৎসগুলি যাতে ফুরিয়ে না যায় সেজন্য করা হয়?
প্রশ্ন: কিন্তু টাকার তো প্রয়োজন আছে।
খসরু চৌধুরী: সেটা আছে। আমরা এখন মধ্যম আয়ের দেশ। নতুন একটা আত্মসম্মান আমাদের সামনে। আমাদের নিজেদের উৎস থেকেই এই টাকাটার ব্যবস্থা করা সম্ভব। সরকার একটা ফান্ড আহরণ প্রকল্প খুলতে পারে। দেশের বিত্তবানদের উৎসাহিত করতে পারলে কিছু অর্থের জোগান হতে পারে। বাঘ সংরক্ষণের জন্য লটারি কার্যক্রম চালু করা যেতে পারে। এতে একদিকে যেমন প্রচুর টাকা আয় হবে, সেই সঙ্গে বাঘের সপক্ষে বড় একটা জনগোষ্ঠীকেও সচেতন করা যেতে পারে।
প্রশ্ন: অন্যান্য জঙ্গলের বাঘের চেয়ে সুন্দরবনের বাঘের মানুষ খাবার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এর কারণ কী?
খসরু চৌধুরী: এটা একটা সংরক্ষণের বড় সমস্যা। সুন্দরবনের বাঘ অনেক কষ্টে জীবন যাপন করে। জঙ্গল হিসেবে সুন্দরবন বাঘের স্বাভাবিক পছন্দের জঙ্গল না, বাধ্য হয়ে থাকার জঙ্গল। বাঘ অন্যান্য বিড়ালের চেয়ে জল কিছুটা পছন্দ করলেও সারাক্ষণ ভেজা ফরেস্ট ফ্লোর তার জন্য স্বস্তিদায়ক না। বুক ভেজানো কাদায় মাইলের পর মাইল হাঁটতে গিয়ে তার পেশিতে খিঁচ ধরে যায়। জোয়ার, জলোচ্ছ্বাসে তার সেন্ট মার্কিং (scent marking) ধুয়ে গেলে হোম রেঞ্জ মার্কিংয়ের (Home range marking) জন্য অনেক বেশিবার ফ্লুইড স্প্রে করতে হয়। এতে জলশূন্যতা থেকে মেজাজ বিগড়ে যেতে পারে। জলোচ্ছ্বাসের পর দেখবেন মানুষ মারার প্রবণতা বাড়ে। কারণ হচ্ছে বাঘ তার টেরিটরি হারিয়ে স্থানান্তর হয়ে দিশেহারা হয়ে যায়। বাঘের হজম প্রক্রিয়া সহজ। গাটও (gut) তুলনায় অনেক ছোট। তাই তার খিদে লাগে খুব তাড়াতাড়ি। শুকর, হরিণ ছাড়া বাঘের উপযুক্ত শিকার নেই। বাঘের বাচ্চার যখন দু-তিন মাস বয়স হয়, তখন হানি কালেক্টররা জঙ্গল দাবড়ে বেড়ায়। জেলেরা যখন খালে, চরে কাজ করে, বাঘ খুব কাছে থেকে তাদের দেখতে পায়। চলাফেরায় মানুষের ক্লামজিনেস বুঝতে পারে। এছাড়া মাছ, কাঁকড়া, গুইসাপের মতো অপ্রচলিত খাবার তার পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা ঘটায়। নানা জটিলতায় সুন্দরবনের বাঘ মানুষখেকো হয়। একবার মানুষখেকো হলে তার স্বাস্থ্যের গুরুতর অবনতি হয়। বাঘ রাতের প্রাণী, অথচ মানুষ ধরতে হলে তাকে দিবাচর হতে হয়। আমাদের দেশে সাপের হাতে যত মানুষ মারা পড়ে বাঘের হাতে তার চেয়ে পঞ্চাশগুণ কম মারা পড়ে। তবু মানুষ সাপে মৃত্যুকে প্রায় স্বাভাবিক মনে করে। বাঘের হাতে মারা পড়লে ক্ষিপ্ত হয়। কারণ বাঘ মানুষ মারার পর খেয়ে ফেলে।
মানুষ মারার প্রবণতা একেবারে শেষ করা সম্ভব না। কিন্তু কমিয়ে আনা সম্ভব।
প্রশ্ন: পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার বাঘ ছাড়তে চাচ্ছে। একে কীভাবে দেখেন?
খসরু চৌধুরী: আমি এর খুব ভবিষ্যৎ দেখতে পাই না। এলাকার ওপাশে ভারতের নামধাপা টাইগার রিজার্ভ। সেখানে বাঘই নেই। সেখানে সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনী সংঘর্ষে লিপ্ত।
সব যদি সুন্দরভাবে মিটেও যায়, তবু আগামী পঞ্চাশ বছর ওই এলাকা থেকে অস্ত্র সরানো যাবে না। এটাই মাঠ বাস্তবতা।
প্রশ্ন: বাঘ বাঁচাতে তাহলে আমাদের কী করা উচিত?
উত্তর: সবার আগে করণীয় হচ্ছে, সুন্দরবনের ধারের গ্রামগুলির জনসাধারণকে জঙ্গলবিমুখ করা। তাদেরকে বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করে দেয়া। সুন্দরবনের খুব বড় সমস্যা হচ্ছে বিষ দিয়ে চোরাই জেলেদের মাছ, চিংড়ি মারা। এটাকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হবে। যে হারে কাঁকড়া ধরা হয়, সেটা চলতে থাকলে এ বন আর থাকবে না। বন বিভাগের নিচুতলার কর্মচারীরা আধুনিক বন সংরক্ষন বোঝেন না। অনেকেই ঘুষ খেয়ে বিষ শিকারিদের সাহায্য করেন। বন্ধের সময়টায় জঙ্গলে মাছের খটি করা হয়। জালের ফাঁসে নিয়মিত হরিণ মারা হয়। এগুলি বন্ধ করতে হবে। আস্তে আস্তে চিংড়ি-কাঁকড়ার খামার উঠিয়ে দিতে হবে। আর বাঘ সংরক্ষণের বিষয়টা দিবসনির্ভর না করে দৈনন্দিনে আনতে হবে। পাঠ্যপুস্তকের সিলেবাসে এটা রাখা দরকার।