'আপনি মারি দিছেন, ওরা তো মারতি পারবি না'
সুখী পরিবারে কেমন পরিবেশ থাকে, সেটা দেখতে বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে চোখ রাখলেই চলবে। দাপুটে ৩ জয়ে ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে ফুরফুরে মেজাজে লাল বলের প্রস্তুতিতে সময় পার করছেন মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজরা। অনুশীলনে চলছে ব্যাটিং-বোলিং প্রস্তুতি, আর ফাঁকে ফাঁকে থাকছে মজার সব খুনসুটি।
ভালো সময়ে ক্রিকেটাররা যেমন মন লাগিয়ে পরের লড়াইয়ের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে পারেন, তেমনি কোচেরাও থাকেন নির্ভার। বাংলাদেশের অনুশীলনে রাসেল ডমিঙ্গো, ওটিস গিবসন, রায়ান কুকদেরও তাই দারুণ সময় কাটছে। কখনও নিজেরাই ক্রিকেটারদের সঙ্গে খুনসটিতে মাতছেন, কখনও শিষ্যদের মজার মুহূর্ত দেখে হয়তো মনে মনে ভাবছেন, সুখী পরিবারের অংশ তারাও।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট লড়াই শুরু হবে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরু হবে ম্যাচটি। লাল বলের লড়াই যে ওয়ানডে সিরিজের মতো একপেশে হবে না, তা জানা আছে বাংলাদেশের। তাই নিজেদের প্রস্তুত করতে নেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
নেটে খুবই 'সিরিয়াস' সবাই, তবে সেটা মনের আনন্দে। ফরম্যাট ভিন্ন হলেও ওয়ানডে সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার তৃপ্তি অনুশীলনে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের চাঙ্গাই রাখছে সব সময়। সেই চাঙ্গা মনোভাবেই ব্যাটিং করতে থাকা খালেদকে কখনও মুস্তাফিজ বলে ওঠেন, 'কীরে তোর শেষ হবে না?' কিংবা মুশফিককে মিরাজ বলে ফেলেন, 'ভাই, আপনি মারি দিছেন, ওরা তো মারতি পারবি না।'
দূরে হলেও অনুশীলনে কান পাতলে শোনা যায় ক্রিকেটারদের এমন কথাবার্তা। বৃহস্পতিবার নেটে মুশফিক-মিরাজের মধ্যকার কথাবার্তায় হাসির রোলই পড়ে গিয়েছিল। বোলিং লাইন আপে মিরাজের সঙ্গে ছিলেন নাঈম হাসান ও তাইজুল ইসলাম। মিরাজের একটি ডেলিভারি মুশফিকের প্যাডে আঘাত করে। আবেদন করে মিরাজ বলে ওঠেন, 'আউট'। কিন্তু মুশফিক বলছিলেন, 'স্টাম্প মিস করবে'।
মিরাজ বা মুশফিক; কারও কথাই কানে তোলেননি বাংলাদেশের নতুন ব্যাটিং কোচ জন লুইস। দুজনকে থামাতে ইংলিশ এই কোচ বলতে থাকেন, 'কুল কুল।' এ যাত্রায় দুজন থামলেও কিছুক্ষণ পর আবারও একটি শট নিয়ে মুশফিক-মিরাজের মজার কথার লড়াই শুরু হয়। মিরাজের একটি ডেলিভারিতে সুইপ শট খেলেন মুশফিক।
মুশফিকের মনে হচ্ছিল, এটা চার হবে। উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান শটটি খেলে বলেন, 'এটা চার।' কিন্তু বোলার মিরাজ তো মাঠের ওই অঞ্চলে ফিল্ডার রেখেই বোলিং করতেন। মিরাজ বলেন, 'ভাই, ওইখানে তো ফিল্ডার থাকবে।'
পাল্টা উত্তরে মুশফিক বলে ওঠেন, 'তোর ফিল্ডার তো স্কয়ার লেগ ও মিড উইকেটে। ওইখানে তো ফাঁকা। এটা চারই হবে।' ফিল্ডিং পজিশন মনে করিয়ে দেওয়ায় মিরাজ শটটিকে চার মেনে নেন। তবুও যেন হারতে চাইলেন না আইসিসির ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের চার নম্বর এই বোলার। ডানহাতি এই অফ স্পিনার খুলনা অঞ্চলের ভাষায় বলেন, 'ভাই, আপনি মারি দিছেন, ওরা তো মারতি পারবি না।'
নেটে মুশফিককে দীর্ঘক্ষণ বোলিং করেন মিরাজ। তাই কিছুক্ষণ পরপরই শট থেকে রানের হিসাব করতে গিয়ে দুজনের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেয়। তবে সেটা নিছকই মজার ও মধুর ছিল। আরও একটি সুইপ করে মুশফিক বলেন, 'চার'। এবারও মানেননি মিরাজ। মুশফিক মজা করে বলে ওঠেন, 'এটা চার না, ১০ হয়েছে।'
ওয়ানডে সিরিজটা দারুণ কেটেছে মিরাজের। তিন ম্যাচে ৭ উইকেট নেওয়া ডানহাতি এই স্পিনার সিরিজ শেষ হতেই সুখবর পান। প্রথমবারের মতো আইসিসির ওয়ানডে বোলার র্যাঙ্কিংয়ের সেরা দশে জায়গা হয়েছে তার, চার নম্বরে আছেন তিনি। এমন মধুর সময়ে পেছনের সুখস্মৃতিও বাড়তি আত্মবিশ্বাসের যোগান দিচ্ছে তাকে।
২০১৮ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-০ ব্যবধানে হারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পুরো সিরিজে ছিল স্পিনারদের দাপট। ৪০টি উইকেট উঠেছিল স্পিনারদের ঝুলিতে। যেখানে মিরাজ ছিলেন জাদুকরের ভূমিকায়। প্রথম টেস্টে সেভাবে দাপট না দেখাতে পারলেও দ্বিতীয় টেস্টে ১২ উইকেট নেন তিনি। তার স্পিন জালে আটকা পড়েই ইনিংস ব্যবধানে দ্বিতীয় টেস্ট হারে ক্যারিবীয়রা। ওয়ানডেতে ভোগানোর পর এবার টেস্টেও উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের পথ ভুলিয়ে দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশের তরুণ এই স্পিনার।