একাদশের ধারণা দিয়ে রাখলেন প্রধান নির্বাচক
ঘরের মাঠে খেলা মানেই স্পিন আক্রমণ নিয়ে প্রস্তুত বাংলাদেশ। আর ফরম্যাট যদি হয় টেস্ট, তাহলে পুরো বোলিং বিভাগই হয়ে ওঠে স্পিনময়। কখনও কখনও পেসার ছাড়াই সাজানো হয় একাদশ। আবার কখনও পেসার থাকলেও তাকে খুব বেশি খাটতে হয় না প্রতিপক্ষের ব্যাটিং অর্ডারে ধস নামাতে। স্পিন ভেল্কিতে প্রতিপক্ষকে দিক ভুলিয়ে দেওয়ার কাজটি স্পিাররাই করে থাকেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও স্পিন নির্ভর বোলিং আক্রমণ সাজানোর ধারণা মিললো রোববার। ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া চট্টগ্রাম টেস্টের একাদশ নিয়ে পরিষ্কার করে কিছু না বললেও বিসিবির প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর কথার মর্মার্থ যা দাঁড়ায়, ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে স্পিন নির্ভর দল নিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
একাদশের প্রশ্নে প্রধান নির্বাচক বলেছেন, 'আমরা ঘরের মাটিতে সব সময় যেভাবে খেলি, সেভাবেই খেলব। তবে এটা এখনই বলা মুশকিল। ২৪ ঘণ্টা আগে টিম ম্যানেজমেন্ট একাদশ চূড়ান্ত করবে। কজন স্পিনার, কজন পেসার নিয়ে খেলবে, এটা তখনই সিদ্ধান্ত হবে। আগাম বলা মুশকিল যে কখন কাকে খেলানো হবে।'
যদি, কিন্তুর মারপ্যাঁচ থাকলেও প্রধান নির্বাচকের বলা কথার প্রথম লাইনটি বলছে, ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের স্পিনেই ঘায়েল করার পরিকল্পনা আটছে বাংলাদেশ। 'ঘরের মাঠে আগে যেভাবে খেলেছি, সেভাবেই খেলব'- এই কথার অর্থ তেমনই দাঁড়ায়। ঘরের মাঠের বাংলাদেশ স্পিন দিয়ে আক্রমণ করবে, এটা মাথায় রেখে সফরে আসে অতিথি দলগুলোও।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের সর্বশেষ বাংলাদেশ সফরে এসে স্পিন ছোবলে দিশেহারা হয়ে উঠেছিল। মিরপুরে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের একাদশে ছিলেন না কোনো পেসার। চট্টগ্রাম টেস্টে একমাত্র পেসার হিসেবে খেলেন মুস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু বাঁহাতি এই পেসার দুই ইনিংস মিলিয়ে বোলিং করেন মাত্র ৪ ওভার।
দুই টেস্টেই একাদশে ছিলেন চার স্পিনার। সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাঈম ইসলাম মিলে দুই টেস্টের সবগুলো (৪০ উইকেট) উইকেট নেন। এই চার স্পিনার এবারও স্কোয়াডে আছেন। এই স্পিন চতুষ্টয়কে এবারও একসঙ্গে একাদশে দেখা যেতে পারে। একমাত্র পেসার হিসেবে খেলতে পারেন আবু জায়েদ রাহি। তবে এ সবই এখন আলোচনা, প্রধান নির্বাচক জানিয়ে রেখেছেন ২৪ ঘণ্টা আগে ঠিক হবে সব।
কেবল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজই নয়, আরও আগে থেকেই ঘরের মাঠে স্পিন দিয়ে প্রতিপক্ষকে কাবু করে আসছে বাংলাদেশ। শিকারের তালিকায় আছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো পরাশক্তিও।
২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১-১ ব্যবধানে ভাগাভাগি করা সিরিজে বাংলাদেশের স্পিনাররা দুই টেস্টে ৩৯ উইকেট নিয়েছিলেন। প্রথম টেস্টে দুজন পেসার খেলে নিয়েছিলেন মাত্র একটি উইকেট। পরের টেস্টে একমাত্র পেসার হিসেবে খেলা কামরুল ইসলাম রাব্বি পুরো ম্যাচে মাত্র ৩ ওভার বোলিং করেন। সবগুলো উইকেট নেন স্পিনাররা।
পরের বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও ছিল একই গল্প। প্রথম টেস্টে খেলেন দুই পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও শফিউল ইসলাম। দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৫ ওভার বোলিং করে দুই পেসারের কেউই উইকেট পাননি। ২০ উইকেটই ছিল সাকিব, মিরাজ, তাইজুলদের শিকার। পরের টেস্টে একমাত্র পেসার হিসেবে খেলা মুস্তাফিজ পুরো ম্যাচে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার যাওয়া বাকি ৭ উইকেট নেন স্পিনার। চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে ৭ উইকেটে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ টেস্ট স্কোয়াডে আছেন পাঁচ পেসার, আবু জায়েদ রাহি, এবাদত হোসেন, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান ও হাসান মাহমুদ। তরুণ হাসানের অভিষেকের সম্ভাবনা কম। মুস্তাফিজের খেলার সম্ভাবনাও জোরোলো নয়। তাসকিন সুযোগ পাচ্ছেন, এমন বলার সুযোগও কম।
বাকি থাকেন আবু জায়েদ রাহি ও এবাদত হোসেন। এই দুজনের সুযোগ হতে পারে একাদশে। রাহি অটো চয়েজ, তিনি অবধারিতভাবেই থাকবেন একাদশে। এবাদতের ব্যাপারে ইতিবাচকভাবে ভাবা হচ্ছে। তেমন হলে রাহি ও এবাদত পেস আক্রমণে, স্পিন বিভাগ সামলাবেন সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান ও মেহেদী হাসানের মধ্য থেকে তিনজন। আর চার স্পিনারই খেলালে বাদ পড়তে হবে এবাদতকে। খেলবেন শুধু রাহি।