দাপুটে জয়ে শততম টি-টোয়েন্টি রাঙাল বাংলাদেশ
জিম্বাবুয়ে সফরে বাংলাদেশের জয়রথ ছুটেই চলেছে। একমাত্র টেস্টে দাপুটে জয় তুলে নেওয়া বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজে স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশ করে। টি-টোয়েন্টি সিরিজেও দারুণ শুরু হলো সফরকারীদের। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টে-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে শততম ম্যাচ রাঙাল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।
বৃহস্পতিবার হারারে স্পোর্টস ক্লাবে জিম্বাবুয়েকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টসে জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে এক ওভার বাকি থাকতে ১৫২ রানে অল আউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। জবাবে দুই ওপেনার নাঈম শেখ ও মাচ সেরা সৌম্য সরকারের দারুণ ব্যাটিংয়ে সাত বল হতে রেখে ২ উইকেট হারিয়েই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
দারুণ এই জয়ে ক্রিকেট বিশ্বের তৃতীয় দল দল হিসেবে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির শততম ম্যাচে জয় পেল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের আগে তিন ফরম্যাটেরই শততম ম্যাচে জয় পেয়েছে কেবল অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তান। এবার রেকর্ডটি বাংলাদেশের ঝুলিতেও জমা হলো।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই নিজেদের প্রথম টি-টোয়েন্টি খেলেছিল বাংলাদেশ। দারুণ এক জয়ে ক্রিকেটের এই মারকাটারি ফরম্যাটে মিশন শুরু করে বাংলাদেশ। ২০০৬ সালে খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে ৪৩ রানে জয় পায় শাহরিয়ার নাফিসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ। ব্যাটে-বলে আলো ছড়িয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।
বাংলাদেশের শততম ওয়ানডে জয় ভারতের বিপক্ষে। ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে সৌরভ গাঙ্গুলির দলকে হারায় বাংলাদেশ। এই ম্যাচেও অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচ সেরা হন মাশরাফি। ২০০৪ সালে কলম্বোয় নিজেদের শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারায় মুশফিকুর রহিমের দল, ম্যাচ সেরা হন তামিম ইকবাল। এবার টি-টোয়েন্টির শততম ম্যাচেও জয় তুলে নিলো বাংলাদেশ।
জয়ের লক্ষ্যে সাবধানী শুরু করেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার নাঈম শেখ ও সৌম্য সরকার। প্রথম তিন ওভার থেকে মাত্র ৯ রান তোলেন তারা। তবে রিচার্ড এনগারাভার করা ইনিংসের চতুর্থ ওভার থেকে ১৪ রান তুলে ছন্দে ফেরেন নাঈম। এরপর সৌম্যও সাবলীল ব্যাটিং শুরু করেন। এই জুটিই বাংলাদেশের জয়ের ভিত গড়ে দেয়।
উদ্বোধনী জুটিতে ১০২ রান যোগ করেন নাঈম-সৌম্য। যা টি-টোয়েন্টিতে উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান। রেকর্ডটি ছিল তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের দখলে। গত বছর ঢাকায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই উদ্বোধনী জুটিতে ৯২ রান করেছিলেন তামিম-লিটন।
শতরানের জুটি গড়ার পথে টি-টোয়েন্টির চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সৌম্য। এরপরই রান আউট হয়ে থামতে হয় তাকে। ৪৫ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫০ রান করে আউট হন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। এরপর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১২ বলে ১৫ রান করে রান আউট হন। নুরুল হাসান সোহান ও নাঈম হাসান মিলে দলকে জয় এনে দেন।
টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া নাঈম ৫১ বলে ৭টি চারে ৬৬ রানে অপরাজিত থাকেন। সোহান ৮ বলে অপরাজিত ১৬ রান করেন। বাংলাদেশের দুটি উইকেট গেলেও জিম্বাবুয়ের কোনো বোলার উইকেট পাননি। সৌম্য ও মাহমুদউল্লাহ দুজনই রান আউট হন।
এরআগে ব্যাটিং করা জিম্বাবুয়ে দাপুটে শুরু করে। ১০ রানে প্রথম উইকেট হারালেও দারুণ গতিতে রান তুলে যেতে থাকেন ওয়েসলে মাধেভেরে ও রেজিস চাকাভা। বিশেষ করে চাকাভা ছিলেন খুনে মেজাজে। মাধেভেরে-চাকাভার ব্যাটে ৮ ওভারে ৭৪ রান তুলে নেয় জিম্বাবুয়ে। এ সময় ২৩ রান করে মাধেভেরে বিদায় নিলেও রান তোলার গতিতে প্রভাব পড়েনি।
ডিওন মায়ার্সকে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন চাকাভা। ১০ ওভারে স্বাগতিকদের স্কোরকার্ডে যোগ হয় ৯১ রান। ২২ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় চাকাভা ৪৩ রান করে থামার পর জিম্বাবুয়ের রান তোলার গতি কমে যায়। এরপর মায়ার্স ৩৫ ও লুক জঙ্গুয়ে ১৮ রান করেন। বাকি কেউ দুই অঙ্কেও যেতে পারেননি।
বাংলাদেশের বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন। ২টি করে উইকেট নেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও শরিফুল ইসলাম। একটি করে উইকেট নেন সাকিব আল হাসান ও সৌম্য সরকার। সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি ২৩ জুলাই হারারে স্পোর্টস ক্লাবে বিকাল সাড়ে ৪টায় শুরু হবে।