নিরাপদে ক্রিকেট ফেরাতে আইসিসির লম্বা গাইডলাইন
করোনাভাইরাসের কারণে স্থবির অবস্থার শুরু মাস দুয়েক আগে। দীর্ঘ এই সময় ধরে ঘরবন্দি অবস্থা। বন্ধ হয়ে ছিল বিশ্বের সব ধরনের খেলাধুলা। অবশেষে আস্তে আস্তে খেলা মাঠে ফিরছে। বুন্দেসলিগা দিয়ে মাঠে ফিরেছে ফুটবল। ক্রিকেটও শুরু করার কথা ভাবছে অনেক দেশ। যেন নিরাপদে ক্রিকেট ফেরানো যায়, এ জন্য একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)।
নিরাপদে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরাতে প্রতিটা দেশের বোর্ডের চিকিৎসক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পরামর্শ করেছে আইসিসি। এরপর গাইডলাইন তৈরি করেছে আইসিসির চিকিৎসা উপদেষ্টা কমিটি। শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমনটা জানিয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
আইসিসির গাইডলাইনে বলা হয়েছে, প্রতিটি বোর্ডকে একজন করে প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা বা বায়ো সেফটি কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে। সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে খেলোয়াড়রা অনুশীলন করছে কিনা, এটা নিশ্চিত করা প্রধান দায়িত্ব থাকবে এই টিকিৎসা কর্মকর্তার।
প্রতিটা সফরের আগে রাখতে হবে আইসোলেশন ক্যাম্প। অন্তত ১৪ দিনের আইসোলেশন ক্যাম্প রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই ক্যাম্পে দলের সবার তাপমাত্রা ও কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হবে। মাঠের জন্য বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দেওয়া দিয়েছে আইসিসি।
খেলোয়াড়দের অনুশীলন ও ম্যাচের জন্য নিরাপদ ভেন্যু নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। অনুশীলন বা ম্যাচ, সবখানেই খেলোয়াড়দের মধ্যে দেড় মিটার দূরত্ব রাখতে বলা হয়েছে। অথবা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের নির্দেশনা মানতে বলা হয়েছে। অনুশীলনে পুরোপুরি তৈরি হয়ে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যেন অনুশীলনে এসে গোসল বা ড্রেসিং রুম ব্যবহার না করতে হয়।
ম্যাচের সময়ে সব মাঠে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দুই ওভারের মাঝে খেলোয়াড়রা ক্যাপ, তোয়ালে, সোয়েটার; এ জাতীয় জিনিসপত্র আম্পায়ারের কাছে রাখতে পারবেন না। বল ধরার ক্ষেত্রে আম্পায়ারকে অবশ্যই গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে।
মাঠে উদযাপন না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় স্পর্শ এড়িয়ে যাওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ম্যাচ চালকালীন কোনো ক্রিকেটারের করনোভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিলে ওই ম্যাচের সব ক্রিকেটারের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করাতে হবে এবং নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশনে থাকতে হবে।
সফরের ব্যাপারে সবচেয়ে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সফরের সিন্ধান্ত নিতে হবে। সফর করতে অবশ্যই চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে হবে, ফ্লাইটে সামাজিক দূরত্ব বজায় নিশ্চিত করতে হবে। হোটেলে দলগুলোর থাকার জন্য নির্দিষ্ট একটি ফ্লোর নিতে হবে।
অনুশীলনের ক্ষেত্রেও দেওয়া হয়েছে কড়া নির্দেশনা। চারটি ধাপে হবে অনুশীলন। একটি ধাপ থেকে আরেকটি ধাপে যাওয়া নির্ভর করবে সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর। প্রথম ধাপে সবাইকে আলাদাভাবে অনুশীলন করতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপে সামাজিক দূরত্ব মেনে দুজন মিলে অনুশীলন করতে পারবে। তৃতীয় ধাপে ১০ জনের কম খেলোয়াড় ও একজন কোচ মিলে অনুশীলন চালাতে পারবে। চতুর্থ ও সর্বশেষ ধাপে সামাজিক দূরত্ব মেনে পুরো দল একসঙ্গে অনুশীলন করতে পারবে।
লম্বা বিরতির কারণে বোলারদের বেশি ইনজুরিতে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। এ কারণে সংস্করণ অনুযায়ী বোলারদের জন্য আলাদা অনুশীলন রুটিন দেওয়া হয়েছে। টেস্ট ক্রিকেটে ফেরার জন্য প্রস্তুত হতে ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ অনুশীলন করতে হবে, যেখানে সর্বোচ্চটা দিয়ে অন্তত ৪-৫ সপ্তাহ বোলিং করতে হবে।
ওয়ানডের ক্ষেত্রে ৬ সপ্তাহ, টি-টোয়েন্টির জন্য ৫ থেকে ৬ সপ্তাহ অনুশীলনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই দুই ফরম্যাটে ম্যাচের মতো করে ৩ সপ্তাহ নেটে বোলিং করতে হবে। নিরাপদে ক্রিকেট ফেরাতে আইসিসি তাদের নির্দেশনা দিয়েছে। এসব কার্যকর করার দায়িত্ব পুরোপুরিভাবে সংশ্লিষ্ট বোর্ড ও সরকারের।