প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচে আফগান-তালেবান পতাকা উড়ল একসাথে
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের স্টেডিয়ামে তালেবান সৈন্যদের উপস্থিতিতেই শুক্রবার এক প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে; সেখানেই গ্যালারিতে একসঙ্গে উড়তে দেখা গেছে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও তালেবান অনুমোদিত আফগান পতাকা।
১৫ আগস্ট তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর এটিই প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ।
পিস ডিফেন্ডারস এবং পিস হিরোস- এ দুই দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় ম্যাচটি। ম্যাচটিতে আফগানিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলেরও বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার অংশ নেন। বর্তমানে আফগান জাতীয় দল ১৭ই অক্টোবর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ওমানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া টি -টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
হামজা নামে একজন তালেবান কমান্ডার এএফপিকে বলেন, "এখানে এসে এবং ক্রিকেট খেলা উপভোগ করতে পেরে খুবই ভাল লাগছে"। তার কাঁধের উপর থেকে তখন একটি আমেরিকান এম-১৬ রাইফেল ঝুলছিল।
ভিড়ের মধ্যে তালেবান যোদ্ধাদের একটি দলের পাহারার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। কোন কোন তালেবান সদস্যকে দর্শকদের চেয়েও বেশি মনোযোগ দিয়ে খেলা দেখতে দেখা গেছে।
"আমি নিজেও একজন খেলোয়াড়, বলতে পারেন অলরাউন্ডার", বলে ওঠেন হামজা।
তালেবানদের প্রত্যাবর্তনে আফগানিস্তান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে তাদের ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এর শাসনামলের বিভিন্ন স্মৃতি পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠেছে।
সেবারের শাসনে তালেবানরা বেশিরভাগ বিনোদন মাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল- অনেক ধরনের খেলাও বন্ধ করে দিয়েছিল। মাত্র গুটিকয়েক খেলাধুলার অনুমতি ছিল- সেটিও তালেবানের কঠোর নিয়ন্ত্রণে এবং শুধুমাত্র পুরুষদেরই জন্য সেসব খেলায় অংশগ্রহণ বা দেখার অনুমতি ছিল।
গতকালকের ম্যাচটিতে প্রায় ৪,০০০ দর্শকের সমাগম হলেও তাদের মধ্যে কোন নারী ছিল না। তবে যেহেতু এটি টি-২০ ম্যাচ এবং শুক্রবার জুমার নামাজের আগেই খেলায় সমাপ্তি ঘটে ফলে সব মিলিয়ে দর্শকদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি ছিল না।
গত ২০ বছরে, গৃহযুদ্ধ এবং জাতিগত সংঘাতের দেশটিতে জাতীয় ঐক্যের শক্তিশালী প্রতীক হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে ক্রিকেট।
ক্ষমতার রদবদল হলেও আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসা তালেবান নিশ্চয়তা দিয়েছে, ক্রিকেটের সঙ্গে তাদের কোনো বিরোধ নেই। বরং তালেবানের ঘোষণা ছিল, ক্ষমতায় গেলে ক্রিকেটের আরও উন্নয়ন করবে তারা।
শুক্রবারের খেলাটি উপভোগ করতে দর্শকদের টিকিট কেটে খরচ করতে হয়নি। তবে কাবুলের উপকন্ঠে পখতুন অধ্যুষিত চমন উযুরির স্টেডিয়ামটিতে প্রবেশের সময় তালেবান রক্ষীরা প্রত্যেকের দেহতল্লাশি করে।
কাবুলের অনেক অধিবাসীর মতে, বর্তমানে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে তবে গত সপ্তাহে কাবুলের বিমানবন্দরে আত্মঘাতী হামলার পর থেকে তালেবানরা প্রচুর সতর্কতা অবলম্বন করছে। ১৩ জন মার্কিন সেনাসদস্য সহ সে হামলায় শতাধিক লোক নিহত হয়।
ক্রিকেট ম্যাচটিতে পিস ডিফেন্ডার দল ৬২ রানে জয়লাভ করে। ম্যাচের এই পতাকা উত্তোলন প্রসঙ্গে আফগান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী হামিদ শিনওয়ারি এএফপিকে বলেন, "এটি এই দেশের জন্য ইতিবাচক। এটিই ঐক্য"।
তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফগান নারী দলকে দুর্ভাগ্যই বরণ করে নিতে হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে দেশত্যাগ করেছেন, বাকিরা আত্মগোপনে রয়েছেন।
সে দলের একজন সদস্য এই সপ্তাহেই বিবিসিকে জানান, "আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে একটি গ্রুপ আছে। প্রতিরাতে আমরা আমাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলি এবং আগামীতে আমাদের করণীয় সম্পর্কে নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা শেয়ার করি"।
"আমরা প্রচণ্ড হতাশ হয়ে পড়েছি"।
- সূত্র- ডন