সেনেগালঃ কাতার বিশ্বকাপে আফ্রিকার বাতিঘর
কাতার বিশ্বকাপে আফ্রিকান অঞ্চল থেকে যে ৫টি দল এবার বিশ্বকাপ খেলছে তাদের মধ্যে ধারে-ভারে এবং ফর্মে বাকিদের থেকে এগিয়ে আছে সেনেগাল। বর্তমান আফ্রিকান কাপ অফ নেশন্সের চ্যাম্পিয়নও তারা। বিশ্ব ফুটবল তারকাদের বেশ কজন আছেন পশ্চিম আফ্রিকার দেশটির বিশ্বকাপ দলে।
ইনজুরির জন্য দলের সেরা তারকা সাদিও মানের ছিটকে পড়াটা বড় একটা ধাক্কা সেনেগালের জন্য। ২০২২ ব্যালন ডি'অরে করিম বেনজেমার পেছনে দ্বিতীয় হয়ে শেষ করা মানের বিকল্প নেই সেনেগাল কোচ আলিউ সিসের কাছে।
মানেকে ছাড়া নিজেদের শক্তিমত্তা অনেকটাই কমে গেলেও কাতার বিশ্বকাপে আফ্রিকার আশার বাতিঘর হিসেবে সেনেগালকেই দেখছেন সবাই। নিজেদের সাম্প্রতিক ফর্মের সাথে সাথে বিশ্বকাপে সেনেগালের রেকর্ডই আশা জাগাচ্ছে এবারও ভালো কিছু করার।
এক নজরে বিশ্বকাপে সেনেগালঃ
বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ- ৩য়
সর্বোচ্চ অর্জন- কোয়ার্টার-ফাইনাল, ২০০২
বিশ্বকাপ রেকর্ড- ৩ জয়, ২ হার, ৩ ড্র
গোল- ১১
সবথেকে বড় জয়- ১-০, ফ্রান্সের বিপক্ষে
যার উপর নজর- ইসমালিয়া সার
ফিফা র্যাংকিং- ১৮
কাতার বিশ্বকাপে সেনেগালঃ গ্রুপ 'এ'
নেদারল্যান্ডস (২১ নভেম্বর)
কাতার (২৫ নভেম্বর)
ইকুয়েডর (২৯ নভেম্বর)
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সঃ
২০২১ আফ্রিকা নেশন্স কাপের চ্যাম্পিয়ন সেনেগাল, তার আগের আসরেরও ফাইনালিস্ট তারা। কোচ আলিউ সিসে অনেকদিন ধরেই দল গুছিয়েছেন নিজের মতো করে। সেনেগালের ভয়ডরবিহীন ফুটবল চমকে দিতে পারে যেকোনো দলকেই। নেশন্স কাপের পর যদি খুব বেশি আন্তজার্তিক ম্যাচ খেলেনি সেনেগাল। এর মধ্যে বলিভিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়েছে তারা, ইরানের সাথে ড্র করেছে ১-১ গোলে। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের প্লে-অফ রাউন্ডে মোহামেদ সালাহর মিশরকে হারিয়ে বিশ্বকাপের টিকেট কাটে 'তেরাঙ্গার সিংহ'রা।
ইনজুরি সমস্যাঃ
সেনেগালের সবথেকে বড় ভরসার জায়গা ছিলেন সাদিও মানে। ক্লাব ফুটবলে সম্ভাব্য সব শিরোপা জেতার পর লিভারপুল থেকে এই মৌসুমের শুরুতেই জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখে যোগ দেন মানে। সেখানে গিয়ে মাসল ইনজুরিতে আক্রান্ত হন আফ্রিকার বর্ষসেরা এই খেলোয়াড়। নিজেদের সেরা খেলোয়াড় এবং বিশ্বসেরা খেলোয়াড়দের একজনকে হারিয়ে সেনেগালের শক্তি অনেকটাই স্তিমিত।
বিশ্বকাপে প্রত্যাশাঃ
মানেকে না পেলেও আফ্রিকার বাকি দলগুলো থেকে এগিয়ে আছে সেনেগাল। মানের কোনো বিকল্প না থাকলেও অস্ত্রভান্ডারের বাকি রসদ নিয়েই মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়বে সেনেগাল সেটা নিশ্চিত। মানের অনুপস্থিতিতে দলের সবথেকে বড় ভরসা এখন ইসমালিয়া সার। অনেকদিন ধরেই ইংল্যান্ডের শীর্ষ পর্যায়ে ক্লাব ফুটবল খেলা ২৫ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড সারের জন্য যেটি বাড়তি অনুপ্রেরণা। এছাড়াও দলে আছেন অধিনায়ক এবং বিশ্বসেরা ডিফেন্ডারদের একজন, কালিদু কুলিবালি। বিশ্বসেরা গোলরক্ষকদের একজন এবং চেলসিতে কুলিবালির ক্লাব সতীর্থ এদুয়ার্দ মেন্ডি।
এই তিনজন ছাড়াও সেনেগাল দলে আছেন বেশ কিছু তরুণ প্রতিভা, আছে অভিজ্ঞতার মিশ্রণও। সব মিলিয়ে নিজেদের গ্রুপে থাকা নেদারল্যান্ডস ছাড়া বাকি দুই দল, স্বাগতিক কাতার এবং ইকুয়েডরকে সামলে নিতে পারার কথা সেনেগালের।
সম্ভাব্য ড্র অনুযায়ী, নক-আউট পর্বে ইংল্যান্ড হতে পারে সেনেগালের প্রতিপক্ষ। মানে সহ সেনেগালের অঘটন ঘটানোর সম্ভাবনা যতোটাই বেশি ছিলো, মানে ছাড়া ইউরোপিয়ান পাওয়ার হাউজদের বিপক্ষে সেনেগালের আশা ততোটাই ক্ষীণ।
কিন্তু বিশ্বকাপ তো আর কম ঘটন-অঘটন দেখেনি। ২০০২ বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নেমেই আগের বারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে হারানো, সেবারই কোয়ার্টার-ফাইনালে পৌঁছানো, অনুপ্রেরণা খোঁজার জন্য অন্য কারো দিকে তাকাতে হবে না সেনেগালকে। তারা নিজেরাই যে নিজেদের শক্তির উৎস।
সেইসাথে প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে কোনো বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে উঠার চ্যালেঞ্জটাও যে আছে সেনেগালের হাতে। আলিউ সিসের দল পারুক বা না পারুক, লড়াই না করে ছাড় দিবে না এতটুকু নিশ্চিন্ত থাকাই যায়।