মেসির গায়ের ট্যাটুগুলোর মানে কী?
ট্যাটু মানে উল্কি। এটি একরকমের শিল্প। অমোচনীয় কালি দিয়ে শরীরের ত্বকের রং পরিবর্তন করে এটি আঁকা হয়।
খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ বছর আগেও বরফমানবের শরীরে উল্কির নকশা পাওয়া গেছে। প্রাচীন মানব নিজেদের পরিচয় তৈরি করত উল্কি এঁকে। মানে একই গোত্রের লোককে নির্দিষ্ট উল্কি দিয়ে চেনা যেত। সে অর্থে একে বলা যায় আইডেনটিটি কার্ড।
এছাড়াও যুদ্ধ জয়ের স্মারক হিসেবে বা কৈশোর পেরিয়ে যুবক হওয়ার বহিঃপ্রকাশ হিসাবেও উল্কি আঁকার চল ছিল। আবার ক্ষমতার রূপায়ন যেমন উল্কি দিয়ে হতো, ক্ষমতাহীনতারও (নিম্নবর্ণ) প্রতীক ছিল উল্কি।
গ্রিকরা যখন পৃথিবীতে ছড়ি ঘোরাত তখন তারা ভাবত উল্কি আঁকা একটি বর্বর প্রথা। পরে গ্রিকরা পারস্যবাসীদের কাছ থেকে উল্কি আঁকা শিখে নিয়ে নিজেদের শরীর সাজিয়েছিল। ঐতিহ্যগতভাবে ট্যাটু ধরে রেখেছে নিউজিল্যান্ডের মাওরি আর আমেরিকার অ্যাপাচিরা।
পশ্চিমের অনেক লোক এখন উল্কি দিয়ে শরীর সাজাতে ভালোবাসে। বলা হচ্ছে উল্কির পুনরুজ্জীবন ঘটেছে। বিশেষ করে খেলোয়াড়দের মধ্যে উল্কি আঁকিয়ে নেওয়ার প্রবণতা অনেক দেখা যাচ্ছে।
আজ আমরা আর্জেন্টাইন ফুটবলার মেসির গায়ের উল্কিগুলোর সুলুকসন্ধান করব।
শুরু করা যাক তাঁর বাম পা দিয়ে, যেটি দিয়ে তিনি ৫৮২টি গোল করেছেন। ওই পায়ের হাঁটুর নিচে আছে মেসির প্রথম সন্তান থিয়াগোর (জন্ম ২০১২) দুই হাত এবং ইংরেজী ছয় অক্ষরে থিয়াগো লেখা। এর ওপরে আছে ১০ সংখ্যাটি, যে জার্সি পরে তিনি ক্লাব এবং জাতীয় দলে খেলেন। ১০ সংখ্যার সমান্তরালে একটি ফুটবলও আঁকা আছে।
এবার ডান পায়ের কথায় আসা যাক। ২০১৮ সালে মেসি তাঁর ডান পা সাজাতে শুরু করেন। গোড়ালির ওপর থেকে লেখা হয় তাঁর তিন সন্তানের নাম এবং জন্ম তারিখ। উল্লেখ্য তাঁর সন্তানদের নাম যথাক্রমে থিয়াগো, মেটেও এবং চিরো।
মেসির ডান হাতের আঙুল ছাড়া সবটাই উল্কিতে সাজানো। একেবারে ওপরে আছেন যিশু খ্রিষ্ট, যার মাথায় কাঁটার মুকুট। তারপর বাইসেপে একটি চোখ দেখা যায়, যাকে লোকে তাঁর স্ত্রী আন্তোনেলা রোকুজ্জোর বলে মনে করে। তারপর একটি গোলাপ দেখা যায়, বার্সেলোনার বিখ্যাত সান্তা মারিয়া ডেল পি চার্চের জানালায় এ গোলাপ দৃশ্যমান। গোলাপের সঙ্গে একটি গোলাপি পদ্মও দেখা যা। কনুইয়ের নিচ থেকে একটি পকেট ঘড়ি আছে যা তাঁর সময়সচেতনতার প্রতীক। অর্থ তিনি বহু উপার্জন করেছেন, কিন্তু মেসি জানেন সময়ের চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই নেই। ঘড়িটির নিচেই আছে রোজারি ট্যাটু যা দিয়ে তিনি নিজের শহর রোজারিওকে সম্মান জানিয়েছেন।
মেসি প্রথম যে উল্কিটি দিয়ে তাঁর দেহ সাজান, সেটি তাঁর মা সেলিয়ার মুখাবয়ব। এটি আছে তাঁর বাম পিঠে। মায়ের সঙ্গে মেসির সম্পর্ক অতি নিবিড়।
মোটমাট ১৮টি উল্কি দিয়ে সাজানো মেসির গা। ভক্তরা তাঁর ট্যাটুগুলোর খুব ভক্ত। কারণ এগুলোর প্রতিটিই অর্থবহ এবং ভালোবাসার কথা বলে। কোনোটি সন্তানকে ভালোবেসে, কোনোটি স্ত্রীকে, কোনোটি মাকে এবং নিজের শহরকে ভালোবেসেও তিনি ট্যাটু আঁকিয়েছেন।