শ্রমিকদের বকেয়া বেতন নিয়ে নিজের অবস্থান জানালেন সাকিব
বকেয়া বেতনের দাবিতে গত সোমবার সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ করে জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের কাকড়া হ্যাচারির অন্তত ২০০ শ্রমিক। এই ঘটনায় বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এ বিষয়ে জানতে সেসময় সাকিব আল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ফোন কিংবা ম্যাসেজের কোনো উত্তর দেননি বাংলাদেশ অলরাউন্ডার। ঘটনার দুদিন পর সাকিব বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন।
এ বিষয়ে নিজের অবস্থান জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বড় একটি লেখা পোস্ট করেছেন তিনি। পোস্টে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের বিষয়টি জানতেন না সাকিব। গণমাধ্যমে এমন খবর দেখে নিজ তহবিল থেকে অ্যাগ্রো ফার্মের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেছেন তিনি।
নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে সাকিব তার দীর্ঘ পোস্টে লিখেছেন, 'বিগত কয়েক দিনে অ্যাগ্রো ফার্মে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে আমার বিলম্বিত বক্তব্যের জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সকল তথ্য ঠিকমতো যাচাই-বাছাই করে সত্যটা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছি বলেই এই বিলম্ব। যদিও অ্যাগ্রো ফার্মের সাথে আমার নাম সরাসরি যুক্ত, আমার পেশাগত ব্যস্ততার কারনে আমার অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মতো এই কোম্পানিটিও অন্যান্য মালিক/অংশীদারদের দ্বারাই পরিচালিত হয়ে থাকে।'
সাকিব তার পোস্টে আরও লিখেছেন, 'আপনারা সবাই জানেন, এ বছরের শুরু থেকে আমি আমেরিকায় অবস্থান করছি আমার পরিবারের সাথে, পরিবারের নতুন অতিথির অগমনের অপেক্ষায়। এই সময়ের মধ্যে অ্যাগ্রো ফার্মের বর্তমান ব্যবসায়িক অবস্থা আমার জানা ছিলো না এবং শ্রমিক অসন্তোষের ব্যাপারটি আমি মিডিয়ার মাধ্যমেই জানতে পারি। অন্যান্য মালিকেরা এক্ষেত্রে আমাকে বিগত কয়েক মাসের সকল তথ্য যথাযথভাবে জানাতে ব্যর্থ হয়েছে।'
অন্যান্য অংশীদারের জানানো তথ্যের কথা উল্লেখ করে সাকিব লিখেছেন, 'তারা আমাকে অবহিত করেছে, কিছু সংখ্যক কর্মচারী যারা কর্মরত ছিলো তাদের বেতন আগামী ৩০ এপ্রিল, ২০২০ তারিখের মধ্যেই দিয়ে দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে উল্ল্যেখযোগ্য যে এ বছরের জানুয়ারি মাসের শেষেই প্রায় সব কর্মচারীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এপ্রিলের ৩০ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও কর্মচারীরা হঠাৎ রাস্তায় নেমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করায় ধারণা করা যায়, কারও গোপন ও কুপ্ররোচনাতেই এমনটি হয়েছে।'
এমন খবর জানতেই শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করেছেন জানিয়ে সাকিব লিখেছেন, 'যখনই আমি বুঝতে পারি যে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তখনই আমি কোম্পানি এবং বাকি অংশীদারদের সাহায্য ছাড়াই আমার নিজের তহবিল থেকে তাৎক্ষণিক বকেয়া বেতন পরিশোধ করি। আমি বিশ্বাস করি এটি কোম্পানির অভ্যন্তরীণ ব্যাপার এবং এটা নিজেদের মধ্যেই রাখা উচিৎ ছিল। কিন্তু আমি বিস্মিত হয়েছি এটা দেখে যে কর্মচারীরা মাসের শেষে বেতন নিতে সম্মতি জানিয়েও তারা আন্দোলনে অংশ নিলো!'
করোনাভাইরাসে সৃষ্ঠ এই কঠিন সময়ে দুস্থদের সাহায্যের কথা জানিয়ে সাকিব লিখেছেন, 'অনেকের মতো আমিও এই মহামারী মোকাবিলায় তহবিল সংগ্রহ করে আমার কর্মচারীদের মতোই অন্যান্য অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু আমি এটা বুঝে উঠতে পারছি না, মানুষ কেন ভাবছে আমি আমার কর্মচারীদের বঞ্চিত করব, যাদের আমি গত ৩ বছর ধরে বেতন দিয়ে আসছি।'
এই ঘটনায় সংবাদমাধ্যমের দায় দেখছেন সাকিব। পরিষ্কারভাবে বিষয়টি তুলে ধরা হয়নি বলে দাবি করেছেন তিনি। সাকিব লিখেছেন, 'আমি সত্যিই মর্মাহত যে মিডিয়া ব্যাপারটির সত্যতা যাচাই না করেই আংশিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরেছে। আংশিক মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিমূলক সংবেদনশীল শিরোনামগুলির চেয়ে তাদের সত্যতা যাচাই করে নেয়াই উচিত ছিল।'
গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ রেখে সাকিব আরও লিখেছেন, 'আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সত্য অনুসন্ধান করে সঠিক তথ্য মানুষকে জানানো মিডিয়ার বড় দায়িত্ব। তা না হলে অযথাই আমার মতো অনেক মানুষই এ ধরনের খবরের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা শুধুমাত্র আমাকে দোষারোপ না করে পুরো ব্যাপারটি সকল অংশীদারের নামসহ সবার সামনে তুলে ধরতে পারতো। শুধু আমি না, কেউই এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাশা করে না। আশা করি মিডিয়া এবং সাংবাদিক ভাই-বোনেরা সকলের কাছে সঠিকভাবে সংবাদ উপস্থাপনের ক্ষেত্রে আরও যত্নশীল হবেন।'