সাকিব কেন দলে নেই, জনসম্মুখে বলতে অস্বস্তি প্রধান নির্বাচকের
দুইবার বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষা দিয়েও উতরাতে পারেননি সাকিব আল হাসান। ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) দেওয়া নিষেধাজ্ঞা এখনও জারি আছে বোলার সাকিবের জন্য। ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলতে হলে অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডারকে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে হবে। নানা বাস্তবতায় তাকে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলানোর ঝুঁকি কোনো দলই হয়তো নেবে না। বাংলাদেশও নেয়নি, সাকিবকে ছাড়াই আজ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল ঘোষণা করেছে বিসিবি।
বোলিং নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকায় দল নির্বাচনে সাকিবকে কেবল ব্যাটসম্যান হিসেবে ভাবা হয়েছে। মিরপুরে আজ দল ঘোষণার সময় প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু জানান, বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষার ফল পাওয়ার পর তাদের পরিকল্পনাতে ছিলেন না ৩৭ বছর বয়সী সাকিব। তাই এ ব্যাপারে কোনো আলোচনাও হয়নি। তবে তার মতো কিংবদন্তি একজন ক্রিকেটারকে কেন দলে রাখা হয়নি, সেটা নিয়ে জনসম্মুখে কথা বলতে সাচ্ছন্দ্য নন প্রধান নির্বাচক।
২০০৬ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলেন সাকিব। ওই বছরই ডাক মেলে জাতীয় দলে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হয় অভিষেক। বছরের শেষ দিকে বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার খেলেন আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। এরপর থেকে বৈশ্বিক সব আসরেই সাকিবকে দলে পেয়েছে বাংলাদেশ। সেই ধারাবাহিকতা এবার আর রইলো না, ১৯ বছরের মধ্য তাকে ছাড়া প্রথমবারের মতো কোনো বৈশ্বিক আসরে খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অলরাউন্ডার হিসেবে বিবেচনা করতে না পারার সাকিব দলে নেয়নি বিসিবি।
কারণ ব্যাখ্যায় প্রধান নির্বাচক বলেন, 'বোলিং অ্যাকশন নিয়ে যে সমস্যায় আছেন সাকিব, সেটা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। দুঃখজনকভাবে ফলটা নেতিবাচক হওয়ায় তিনি একজন ব্যাটসম্যান হিসেবেই শুধু খেলতে পারবেন। দল নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় তাই সাকিব আল হাসানের অবস্থানটা শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে ছিল আমাদের কাছে। এই দলে আসলে সমন্বয় সাজাতে গিয়ে তাকে এই ১৫ জনের মধ্যে আমরা জায়গা দিতে পারিনি।'
বোলিংয়ে নিষিদ্ধ হওয়ার আগে থেকেই বাংলাদেশ দলের বাইরে সাকিব। ঘরের মাঠে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলার ইচ্ছার কথা জানালেও দেশে ফিরতে পারেননি তিনি। নিজের নিরাপত্তার কারণে সরকারের পক্ষ থেকে তাকে দেশে না আসার পরামর্শ দেওয়া হয়। তাই প্রশ্ন ওঠে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে সাকিবকে না নেওয়ার কারণ তার বোলিং নিষেধাজ্ঞা নাকি রাজনৈতিক। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দলে পরিবর্তন আনার সুযোগ থাকায় এর মধ্যে পরীক্ষায় উতরে দলে জায়গা পাওয়ার আশা করতেই পারেন সাকিব।
গাজী আশরাফ জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে কেবল সাকিবের বোলিং অ্যাকশনের ব্যাপারটিই ভেবেছেন তারা। প্রধান নির্বাচক বলেন, 'সাকিবের বিষয়ে বোর্ড প্রেসিডেন্ট (ফারুক আহমেদ) বলেছিলেন, কেউ অবসর না নিলে দল নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় অ্যাভেইলেবল। বোলিং অ্যাকশনের বিষয়টা আসায় আমরা আর দ্বিতীয় প্রসঙ্গে (রাজনৈতিক সমস্যা) যাইনি। যে কারও ব্যাপারে আমরা কয়েক জায়গা থেকে ছাড়পত্র চাই। ফিটনেস বা কারও অন্য কোনো সমস্যা আছে কিনা।'
'যাদের দলে নিয়েছি, নামগুলো আগেই বোর্ডে জমা দিয়েছি। আমাদের পরিকল্পনায় সাকিব না থাকার কারণেই সম্ভবত অন্য যে বিষয়টা (রাজনৈতিক সমস্যা), তা নিয়ে কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি। যদি সে তালিকায় থাকতো, তাহলে হয়তো আরও পরিষ্কারভাবে এটা আমি বলতে পারতাম। বোর্ড থেকেও হয়তো পরিষ্কার উত্তর নিতে পারতাম।' যোগ করেন তিনি।
যদিও কেবল ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলার দাবি রাখতে পারেন ২০২৩ বিশ্বকাপের পর আর ওয়ানডে না খেলা সাকিব। সর্বশেষ ১০ ওয়ানডেতে তিন হাফ সেঞ্চুরির পাশাপাশি দুটি চল্লিশছোঁয়া ইনিংস আছে তার। গত বছরের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও রান পান সাকিব। লিস্ট 'এ' এই টুর্নামেন্টে ৬ ইনিংসে ৪৩.৬৬ গড় ও ৯৯.২৪ স্ট্রাইক রেটে ২৬২ রান করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
প্রধান নির্বাচক অবশ্য সাকিবের মতো কিংবদন্তির দলে না থাকা নিয়ে জনসম্মুখে কথা বলতে সাচ্ছন্দ্য নন। তার ভাষায়, 'একজন কিংবদন্তি ক্রিকেটারকে নিয়ে কোন জায়গাটার জন্য তাকে দলে রাখা গেল না, এটা নিয়ে পাবলিকলি এতো খোলামেলা আলোচনা করা খুব একটা ভালো কথা নয়। এই মুহূর্তে যারা দলে আছে, তারা এগিয়ে আছে। কারণ তারা আমাদের সঙ্গে আছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে তারা খেলছে। তারা আস্থাশীল সেই কারণেই।'