সাকিবের রাজকীয় প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশের প্রত্যাশিত জয়
জয় প্রত্যাশিতই ছিল। জয়ের ধরনেও ছিল প্রত্যাশা। নিয়মিত দলের ১৩ জনকে ছাড়াই সফরে আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দাপুটে জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। এমন ম্যাচে সাকিব আল হাসানকে পাওয়া গেল আগের চেহারায়। আগুন ঝরানো বোলিং করলেন মুস্তাফিজুর রহমান ও অভিষিক্ত হাসান মাহমুদও। তাতে লক্ষ্য নাগালেই থাকলো। যে রান সহজেই তুলে নিলো বাংলাদেশ।
বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৬ উইকেটের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। দলের দারুণ শুরুতে অধিনায়ক তামিম ইকবালের শুরুটাও হলো মধুর। গত বছরের মার্চে অধিনায়কত্ব পাওয়া তামিম নেতৃত্বের প্রথম ম্যাচেই দারুণ এক জয় পেলেন। তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে রইলো বাংলাদেশ।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে পুরো ইনিংসেই ধুঁকেছে ক্যারিবীয়রা। ফিরেই ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা সাকিব, হাসানদের বোলিং তোপের মুখে ৩২.২ ওভারে মাত্র ১২২ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীদের ইনিংস। জবাবে ৩৩.৫ ওভারে ৪ উইকেটে জয় তুলে নেয় তামিম ইকবালের দল। করোনাভাইরাসের বিরতি কাটিয়ে দীর্ঘ ১০ মাস পর মাঠে নেমে সহজ জয়ে শুরু হলো বাংলাদেশের ওয়ানডে বিশ্বকাপ সুপার লিগ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ ছয় ম্যাচে অপরাজিত থাকলেন তামিম-মুশফিকরা।
ছোট লক্ষ্য, যে কারণে তাড়াহুড়ো করেননি বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন কুমার দাস। দেখেশুনেই খেলতে থাকেন তারা। অতি সাবধানী শুরুর পরও অবশ্য বড় জুটি গড়তে পারেননি তামিম-লিটন। দলীয় ৪৭ রানের মাথায় উইন্ডিজ স্পিনার আকিল হোসেনের অসাধারণ এক ডেলিভারিতে ভাঙে লিটনের স্টাম্প। ফেরার আগে ৩৮ বলে ২টি চারে ১৪ রান করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
লিটনের বিদায়ের পর চাপেই পড়ে যায় বাংলাদেশ। আকিলের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হয়ে কিছুক্ষণ পরই সাজঘরে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সাকিব আল হাসানকে নিয়ে এগোতে থাকা তামিম দলীয় ৮৩ রানে আউট হন। ৬৯ বলে ৭টি চারে ৪৪ রান করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। বল হাতে জাদু ছড়ানো সাকিব ব্যাট হাতেও ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু ৪৩ বলে ১ চারে ১৯ রান করে আউট হন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। সাকিবও উইন্ডিজ স্পিনার আকিলের শিকার হন।
দলের জয় নিশ্চিতে বাকি কাজটুকু করেছেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মুশফিক ১৯ ও মাহমুদউল্লাহ ৯ রানে অপরাজিত থাকেন। আকিল আহমেদ ভালোই ভুগিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। বাঁহাতি এই স্পিনার ১০ ওভারে ২৬ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন। অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদও স্পিন ভেল্কি দেখিয়েছেন। ৮ ওভারে ১৯ রান খরচায় তার শিকার এক উইকেট।
এরআগে ব্যাটিং করা ক্যারিবীয়রা বাংলাদেশের সব বোলারের বিপক্ষেই ধুঁকেছে। ব্যাটসম্যানরা। এর মধ্যে সাকিবের বিপক্ষে রীতিমতো অসহায় ছিলো সফরকারীরা। প্রথম স্পেলে টানা ৭ ওভার বোলিং করেন বাঁহাতি এই স্পিনার। ৭ ওভারে মাত্র ৮ রান খরচায় সাকিব তুলে নেন তিনটি উইকেট। ম্যাচে ৭.২ ওভারে ৮ রান খরচায় তার শিকার ৪ উইকেট। যা ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কোনো বাংলাদেশির সেরা বোলিং ফিগার।
এই চার উইকেটে দেশের মাটিতে ওয়ানডেতে ১৫০ উইকেট পূর্ণ হয়েছে সাকিবের। ঘরের মাঠে এখন তার ১৫৩ উইকেট। যা বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ, পুরো বিশ্বে বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে প্রথম। ১৫০ উইকেটের মাইলফলকে পৌঁছাতে সাকিবকে খেলতে হয়েছে ১০০টি ওয়ানডে ম্যাচ। বাঁহাতি এই স্পিনারের পরই আছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। দেশের মাটিতে ১০৩ ওয়ানডেতে সাবেক এই অধিনায়কের উইকেট ১৪৭টি।
সাকিবের স্পিন পাকেই মূলত বিধ্বস্ত হয় ক্যারিবীয়দের টপ অর্ডার। যেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়ানো হয়নি সফরকারীদের। চেষ্টা করলেও পরে অভিষিক্ত হাসান মাহমুদ আগুনে বোলিং করে উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের কোণঠাসা করে ফেলেন। ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে খেলতে নেমেই ২৮ রান খরচায় ঝুলিতে ৩ উইকেট পুড়েছেন ডানহাতি এই তরুণ পেসার। টানা দুই উইকেট নিয়ে তৈরি করেছিলেন হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও।
বল হাতে অবশ্য বাংলাদেশকে ভালো শুরু এনে দেন মুস্তাফিজ। বাঁহাতি এই পেসার ২৪ রানের মধ্যেই উইন্ডিজের দুই ওপেনার সুনীল আমব্রিস ও জশুয়া ডা সিলভাকে ফিরিয়ে দেন। মুস্তাফিজের পর সাকিবের স্পিন ভেল্কি, এরপর হাসানের গতিময় আক্রমণ। তাতে দিশেহারা উইন্ডিজ। মাঝে একটি উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
ক্যারিবীয়দের হয়ে সর্বোচ্চ ৪০ রানের ইনিংস খেলেন অভিষিক্ত কাইল মেয়ার্স। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৮ রান করেন মারকুটে ব্যাটসম্যান রভম্যান পাওয়েল। আন্দ্রে ম্যাকার্থি ১২ ও অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদ ১৭ রান করেন। বাকিদের কেউ-ই দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেননি।