লিটনের জন্য মন খারাপ তানজিদের
লিটন কুমার দাস ও তানজিদ হাসান তামিম; আপাতত বাংলাদেশের ক্রিকেটে নাম দুটি বেশ আলোচিত। কদিন আগে সিলেটে ঝড় উঠেছিল তাদের ব্যাটে, ঢাকা ক্যাপিটালসের হয়ে ২৪১ রানের বিশাল জুটি গড়ে রেকর্ড বই এলোমেলো করে দিয়েছিলেন এ দুজন। সেঞ্চুরির দেখা পান এই দুই ওপেনারই। বিপিএলের দল ঢাকা ক্যাপিটালসের মতো জাতীয় দলেও তারা সতীর্থ, তবে আইসিসির আগামী আসরে এক সাথে খেলা হবে না বলে মন খারাপ তানজিদের।
আগামী মাসে শুরু হতে যাওয়া আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বাংলাদেশ দলে জায়গা হয়নি লিটনের। দীর্ঘদিন ধরে কোনো ফরম্যাটে রান না পাওয়ায় তাকে বিবেচনা করা হয়নি। জাতীয় দলের মতো বিপিএলেও জ্বলছিল না তার ব্যাট। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান যখন রানে ফেরেন, ততোক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। ঢাকার হয়ে নিজের পঞ্চম ম্যাচে ৭৩ রানের ইনিংস খেলার পরদিন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল থেকে বাদ পড়ার খবর পান লিটন।
এদিন মন খারাপের খবরটি শুনে মাঠে নামলেও খেই হারাননি লিটন, ভাঙা মনেই হাসিয়েছেন নিজের ব্যাটকে। চোখ ধাঁধানো ব্যাটিংয়ে তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি। দল জেতে ১৪৯ রানের রেকর্ড ব্যবধানে, যা টানা ছয় হারের পর ঢাকার প্রথম জয়। দলের বিশাল জয়, সেঞ্চুরিতে নিজে ম্যাচসেরা; কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে মলীন চেহারার লিটনকে দেখা যায়। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়াই যে একমাত্র কারণ ছিল, সেটা না বলে দিলেও হয়।
সেদিনকার সংবাদ সম্মেলনে লিটন অকোপটে স্বীকার করে নেন, ফর্মহীনতার কারণেই দলে জায়গা হয়নি তার। যা নিয়ে তার কোনো অভিযোগ নেই। তবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে থাকবেন না, এটা ভেবে আগেই মন খারাপ হচ্ছে ঢাকা ক্যাপিটালসে উদ্বোধনী জুটিতে লিটনের সতীর্থ তানজিদের।
লিটনের সেদিনের ৫৫ বলে ১০টি চার ও ৯টি ছক্কার হার না মানা ১২৫ রানের ইনিংস অপর প্রান্ত থেকে দেখেছেন তানজিদ। যা তরুণ এই ওপেনারের কাছে ছিল বিশেষ কিছু। চট্টগ্রামে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে মাঠে নামার আগের দিন তানজিদ বললেন, '(নন স্ট্রাইকে দাঁড়িয়ে লিটনের সেঞ্চুরি দেখতে পেরে) আমি নিজে অনেক সৌভাগ্যবান। আমি উনার বড় একজন ভক্ত। উনার ব্যাটিং দেখাটাও একটা... অনেক উপভোগ করেছি। মানে কী বলব... শটগুলো সব চোখ জুড়ানো।'
এমন একজন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মিশনে দলে থাকছেন না, তানজিদের আফসোস এখানেই। তবে বাঁহাতি এই ওপেনার এতোদিনে এটা বুঝে ফেলেছেন, পারফর্ম না করলে জায়গা হারতেই হবে। তানজিদ বলেন, 'ভালো না খেললে বাদ পড়তে হবে। এটা সবাইকে মেনে নিতে হবে। (লিটন) দাদা কেমন ব্যাটসম্যান, আমরা সবাই জানি। আমি নিজেও উনার অনেক বড় ভক্ত। এদিক থেকে তাই আমার মন খারাপ যে, উনি দলে নেই। যেভাবে সবশেষ দুই ম্যাচ খেলেছেন, উনার আত্মবিশ্বাস অনেক ওপরে। আশা করি সামনের ম্যাচগুলো অনেক ভালো করবেন।'
লম্বা সময় ধরে ব্যাট হাতে নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন লিটন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি যে ফরম্যাটের, সেই ওয়ানডেতে সর্বশেষ সাত ম্যাচে দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি ডানহাতি উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান; তিন ইনিংসে রানের খাতাই খুলতে পারেননি। সর্বশেষ সাত ওয়ানডেতে তার রান যথাক্রমে ৬, ১*, ০, ০, ২, ৪, ০। এই ফরম্যাটে লিটন সর্বশেষ হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ১৫ মাস ও ১৩ ইনিংস আগে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ৬৬ রান করেন তিনি।
কেবল ওয়ানডেতেই নয়, বাকি দুই ফরম্যাট টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে ছন্দে ছিলেন না লিটন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১৭ রান করেন তিনি। তার ইনিংসগুলো যথাক্রমে ০, ৩ ও ১৪। টেস্টে কিছু রানের দেখা পেলেও সেটা উল্লেখ করার মতো নয়। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০ ইনিংসে কোনো হাফ সেঞ্চুরি করতে পারেননি লিটন, সর্বোচ্চ ইনিংস ৪০ রানের।