সুপারক্লাসিকোতে কাল মুখোমুখি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা
পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ মানেই তা থাকবে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। রাজনীতি থেকে ধরে খেলার ময়দান, লাতিন আমেরিকার দুই পরাশক্তির নাম নিলেই যেন উত্তেজনায় ফুটতে থাকে বিশ্ব। দুই দলের মুখোমুখি হওয়াকে অনেকেই নিঃসন্দেহে ক্রীড়া জগতের শ্রেষ্ঠ প্রতিযোগিতা মনে করেন। আরও সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ যেন 'সুন্দর ফুটবল'-এর দর্শন দেয় আমাদের।
ফুটবল নিয়ে এই উন্মাদনা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। হাজার হাজার মাইল দূরের কোনো দেশে থেকেও মানুষের হৃদয়-মননে পৌঁছে যায় এই খেলা। এবার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ফিরতি ম্যাচে আরও একবার মুখোমুখি হচ্ছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। বাংলাদেশ সময়ে আগামীকাল বুধবার ভোর ৫.৩০ টায় অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি।
তবে এবার দুই দলের মহারণের ধরনটা হবে একটু আলাদা। আকাশী-সাদা জার্সিতে আলবিসেলেস্তেদের হাতে আছে সদ্য কোপা আমেরিকা জয়ের গৌরব, অন্যদিকে সবুজ-হলুদে সজ্জিত সেলেসাওরা ইতোমধ্যেই কাতার বিশ্বকাপের মঞ্চে পা দিয়েছে।
বছর তিনেক আগে লিওনেল স্কালোনি কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই যেন ভিন্ন এক আর্জেন্টিনাকে দেখতে পাচ্ছে বিশ্ব। সেই সাথে লিওনেল মেসির দক্ষ নেতৃত্বে বদলে গেছে দলের খোলনলচে। দীর্ঘ ২৮ বছরের শিরোপা খরা কাটিয়ে চলতি বছরেই কোপা আমেরিকা জিতেছে আর্জেন্টিনা, তাও আবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারিয়ে। শুধু তাই নয়, বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেও টানা ২৬ ম্যাচ অপরাজিত রয়েছে আলবিসেলেস্তেরা।
আপাতদৃষ্টিতে আর্জেন্টিনাকে শীর্ষে দেখালেও, তিতের ব্রাজিলও কিন্তু বেশ শক্ত অবস্থানে আছে। আর্জেন্টিনার আগেই কাতার বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা। নিজেদের স্কোয়াড নিয়েও সন্তুষ্ট তারা। বাছাইপর্বে সবচেয়ে বেশি গোল করা এবং সবচেয়ে কম গোল হজমের রেকর্ডও তাদের দখলে।
তবে স্কোয়াড সাজানোর ধরন নিয়ে বারবার সমালোচিত হয়েছেন কোচ তিতে। সাসপেনশনের কারণে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ক্যাসেমিরো এবং ইনজুরির কারণে দলের তারকা খেলোয়াড় নেইমারকে মাঠে না পাওয়া নিয়েও ভুগতে হবে ব্রাজিলকে।
এদিকে দুই সেন্টার-ব্যাক ক্রিস্টিয়ান রোমেরো ও নিকোলাস ওতামেন্দির পাশাপাশি গোলবারের সামনে দুর্গ হয়ে দাঁড়ানো এমিলিয়ানো মার্তিনেজ মেসিদের ভরসা। একসাথে ৫৭৬ মিনিট খেলে কোনো গোল হজম না করার রেকর্ড রয়েছে আর্জেন্টিনার এই ত্রয়ীর। তাছাড়া,মাঝমাঠের অভাব পূরণ করতে রদ্রিগো ডি পল তো আছেনই।
মেসিদের টেক্কা দিতে তিতের মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে আছেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা ভিনিসিয়াস জুনিয়র। চলতি মৌসুমে গোল ও অ্যাসিস্টের ক্ষেত্রে সমান চমক দেখিয়েছেন এই ব্রাজিলিয়ান। তবে বরাবরের মতো এবারও স্কোয়াডে পরিবর্তন আনতে পারেন তিতে। গ্যাব্রিয়েল জেসুসের বদলে আক্রমণভাগে দেখা যেতে পারে ম্যাথিউস কুনাকে এবং রক্ষণে থিয়াগো সিলভার পরিবর্তে এডের মিলিতাওয়ের খেলার সম্ভাবনা রয়েছে।
এর আগে গত সেপ্টেম্বরেই মুখোমুখি হয় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। সাও পাওলোতে সেদিনের ম্যাচ নিয়ে উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। কিন্তু খেলা শুরুর মিনিট সাতেক পরেই বিপত্তি বাধায় ব্রাজিলীয় কর্তৃপক্ষ। আর্জেন্টাইনরা কোভিড-১৯ বিধিনিষেধ ঠিকঠাক মানেননি বলে খেলতে আপত্তি জানায় ব্রাজিল। সেই ম্যাচ এখনো স্থগিতই আছে।
সুপারক্লাসিকোকে কেন্দ্র করে আর্জেন্টিনার সান জুয়ান শহরে এখন পূর্ণ উত্তেজনা। যদিও মাত্র ২৫,০০০ দর্শক আগামীকালের ম্যাচটি দেখতে পারবেন, কিন্তু ঘরের মাঠে ব্রাজিলকে আতিথেয়তা দেওয়া নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে শহরটিতে।
ব্রাজিলের কাছে নিয়মরক্ষার ম্যাচ হলেও, আর্জেন্টিনার জন্য আগামীকালের ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই ম্যাচে জয় পেলেই মেসিরা পৌছে যাবেন কাতার বিশ্বকাপে।