সেমিফাইনাল খেলাটা সাকিবের প্রাপ্য ছিল: মাশরাফি
বিশ্বকাপের মঞ্চে দ্যুতি ছড়িয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ব্যাটে-বলে তিনি যা করে দেখিয়েছেন তার আলোয় ম্লান হয়ে গেছে দলের অন্যান্যদের অর্জন, স্পষ্ট ধরা দিয়েছে দলের অনেকের ব্যার্থতা। মাঠের ক্রিকেটে সাকিবকে পর্যাপ্ত সহায়তা না দিতে পারার আক্ষেপ তাই ঝরেছে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার কন্ঠে।
পাকিস্তানের কাছে ৯৪ রানের বড় ব্যবধানে হেরে যাওয়ার এই ম্যাচেও টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের একে একে আউট হওয়ার মাঝে ব্যাটিং এ দলের একমাত্র ভরসা হয়ে টিকেছিলেন সাকিব আল হাসান। ম্যাচ শেষে পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মাশরাফি বললেন, সাকিবকে যথেষ্ট সহায়তা দিতে পারলে ম্যাচের চিত্রটা ভিন্ন হতে পারতো।
“সাকিবের সম্পর্কে আমার বলা উচিত। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই ও ছিল চমৎকার। তিন নম্বরে ব্যাটিং এ নেমে ওর যা করা উচিত ছিল ও তাই করেছে। ওর জন্য আমার খুবই খারাপ লাগছে।”
ব্যাটিং এ ৬০৬ রান এবং বোলিং এ ১১ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব শেষের মাধ্যমে নিজেদের দলের শেষ ম্যাচটিও খেলে ফেলেছেন সাকিব। ভারতের শচীন টেন্ডুলকার এবং অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথিউ হেডেনের পর মাত্র তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপের এক মঞ্চে ৬’শর বেশী রান করে বিরল কীর্তি গড়েছেন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান।
মাশরাফি বলেন, “ও যেভাবে টুর্নামেন্টে খেলেছে, সেমিফাইনাল খেলাটা ওর প্রাপ্য ছিল। ওর জন্য আসলেই খারাপ লাগছে। আমি মনে করি এটি শুধুমাত্র বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সেরা পারফর্ম্যান্সই না বরং সব সংস্করণের ক্রিকেটেই এটি সেরা পারফর্ম্যান্স। এরকম একজন খেলোয়াড়ের সেমিফাইনাল না খেলাটা আসলেই হতাশার।”
টুর্নামেন্টজুড়ে গ্রেড-টু হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়ে বোলিং করে আট ম্যাচে মাত্র এক উইকেট পাওয়ার পর গুঞ্জন ছড়িয়েছিল যে, বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচেই ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিতে পারেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।
শেষবারের মতো বিশ্বকাপ খেলা বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা জানান, তার নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনা এবং আর কতদিন ক্রিকেট খেলবেন, সে বিষয়ে তিনি বাংলাদেশে এসে ‘চিন্তাভাবনা’ করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
মাশরাফি স্বীকার করেন যে, ফিল্ডিংয়ে তার দলের দুর্বলতা ছিল এবং অনেক ম্যাচেই বিপরীত দলের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ক্যাচ মিস হয়েছে যার চওড়া মূল্য দিতে দিতে হয়েছে শীর্ষ চারে স্থান না পাওয়ার মাধ্যমে।
“কিছু ম্যাচে ফিল্ডিং আসলেই আমাদের ভুগিয়েছে, বিশেষ করে গ্রাউন্ড ফিল্ডিং এ। ম্যাচের সময় ফিল্ডাররা যখন ব্যাক-আপ দেবে তখন তা বোলারদের সহায়তা করবে।”
অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের সাথে ম্যাচের সময়ে ফিল্ডিং এর দশা ছিল করুণ এবং ক্রিজে থাকা প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের পার্টনারশিপগুলো যখন বড় হচ্ছিলো তখন দুর্বল ফিল্ডিং এর বিষয়টা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল; স্বীকার করেন মাশরাফি।
তিনি বলেন, “আমার ক্যারিয়ায়জুড়েই ফিল্ডিং একটা উদ্বেগের বিষয় ছিল। যখনই কোন পার্টনারশিপ গড়ে ওঠে আমরা স্তিমিত হয়ে যাই। এই জিনিসটা একজন প্লেয়ারের পাল্টাতে হবে। আমি মনে করি, আমাদের আসলেই ফিল্ডিং এ উন্নতি করতে হবে।”
মাশরাফি বলেন, “আমরা যখন পরবর্তী বিশ্বকাপ খেলব, তখন আরও নতুন ক্রিকেটার আসবে এবং আমি নিশ্চিত ততদিনে টিম অনেক বেশী এগিয়ে যাবে।”
পরবর্তী বিশ্বকাপে দলের সাথে খেলোয়াড় হিসেবে আর না থাকলেও মাশরাফি প্রত্যাশা করছেন, পরবর্তী বিশ্বকাপে ভালো ফলাফল করতে দলের অন্য সিনিয়র ক্রিকেটাররা দলকে আরও পরামর্শ দেবেন।
“আমি আশা করি এবং প্রার্থনা করি সাকিব, তামিম, মুশফিক এবং রিয়াদ পরবর্তী বিশ্বকাপ পর্যন্ত সুস্থ্য থাকবে যাতে তারা দলের অন্য ক্রিকেটারদের গাইড করতে পারে। যেহেতু এটি (বিশ্বকাপ ২০২৩) ভারতেই হবে তাই আমি এটা বলতে পারছি না যে বাংলাদেশই এটা জিতবে, তবে বাংলাদেশের একটা সুযোগ আছে জেতার।”