১২ বছর বয়সেই দাবায় বিশ্ব রেকর্ড
বয়স চলে মাত্র ১২ বছর। এই বয়সেই বিশ্ব দাবার রেকর্ড বই এলোমেলো করে দিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খুদে দাবাড়ু অভিমন্যু মিশ্র। বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টার এখন অভিমন্যু। হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে তৃতীয় নর্ম অর্জনের মধ্য দিয়ে ১৯ বছর আগের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে দিয়েছে সে। আগের রেকর্ডটি ছিল সের্গেই কারাকিনের।
২০০২ সালে সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টারের খেতাব জেতেন কারাকিন। দুটি দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা কারাকিন ১২ বছর ৭ মাস বয়সে গ্র্যান্ডমাস্টার হন। প্রথমে ইউক্রেন ও পরে রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। কারাকিনের চেয়ে দুই মাস কম বয়সে এই খেতাব জিতলো অভিমন্যু। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে বাস করা অভিমন্যুর বয়স ১২ বছর ৪ মাস ২৫ দিন।
গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব অর্জনে লম্বা পথ পারি দিতে হয়েছে অভিমন্যুকে। অভিমন্যু ও তার বাবা গত এপ্রিল থেকে বুদাপেস্টে ছিলেন। এই দুই মাসে দুটি নর্ম অর্জন করে সে। এরপর ভারতের গ্র্যান্ডমাস্টার লিওন মেনদোনকাকে হারিয়ে তৃতীয় নর্ম অর্জন করে অভিমন্যু।
গ্র্যান্ডমাস্টারের খেতাব জিততে তিনটি জিএম নর্ম এবং ইএলও রেটিংয়ে কমপক্ষে ২ হাজার ৫০০ পয়েন্ট পেতে হয় একজন দাবাড়ুকে। যেসব টুর্নামেন্টে অন্তত ৫০ শতাংশ প্রতিদ্বন্দ্বী শিরোপাধারী এবং এক-তৃতীয়াংশ গ্র্যান্ডমাস্টার, সেসব টুর্নামেন্টে নর্ম অর্জন করা যায়। এমন সব টুর্নামেন্টে বাজিমাত করেই গ্র্যান্ডমাস্টার হয়েছে দাবার এই বিস্ময় বালক।
বিশ্ব দাবায় সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের রেকর্ড গড়া অভিমন্যুর জন্য নিয়মিত ব্যাপার হয়ে উঠেছে। এরআগে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে আন্তর্জাতিক মাস্টারের রেকর্ডও গড়ে সে। অনূর্ধ্ব-৯ বয়সসীমায় সর্বোচ্চ রেটিংয়ের রেকর্ড গড়া অভিমন্যু ২০১৮ সালে তিন দিনের মূল্যায়ন প্রকল্পে কাসপারভ দাবা ফাউন্ডেশনে সুযোগ পায়। সেখানে অভিমন্যু ছিল সর্বকনিষ্ঠ। এই প্রকল্পে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন গ্যারি কাসপরভের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। এই পরিচয়ের সুবাদে কাসপরভের সঙ্গে দাবা নিয়ে যোগাযোগের সুযোগ পায় সে।
আড়াই বছর বয়সে অভিমন্যুকে দাবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন তার বাবা হেমন্ত মিশ্র। ছেলের প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে হেমন্ত মিশ্র দাবায় মন বসান। সবখানে ছেলের পেছনে আঠার মতো লেগে থাকতে শুরু করেন তিনি। সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন কাসপরভ যখন দাবা নিয়ে অভিমন্যুকে পরামর্শ দেন, বিশেষ অনুমতি নিয়ে ছেলের সঙ্গে থাকেন হেমন্ত মিশ্রও। কাসপারভের দেওয়া পরামর্শ টুকে রাখেন তিনি।
ছেলের সর্বশেষ সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হেমন্ত মিশ্র। ইএসপিএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, 'এই বয়সে গ্যারিকে পথ প্রদর্শক হিসেবে পাওয়া যেকোনো দাবাড়ুর জন্যই বড় স্বপ্ন। বাবা-মায়েদের সাক্ষাৎকারের পর্বও ছিল সেখানে, এটি সম্ভবত আমার জীবনের সেরা দিন।'