‘খেলার সামগ্রী পুড়িয়ে দাও, ছবি মুছে ফেলো’, আফগান নারী ফুটবলারদের প্রতি সাবেক অধিনায়কের পরামর্শ
আফগানিস্তান নারী ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক খালিদা পপাল খেলোয়াড়দের নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সব ছবি মুছে দেওয়ার, এবং জার্সি-বুটসহ খেলার সব ধরনের সামগ্রী পুড়িয়ে ফেলার আহ্বান জানিয়েছেন।
ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অবস্থানরত পপাল বুধবার একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে তালেবানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই গোষ্ঠী অতীতে নারীদের হত্যা ও ধর্ষণ করেছে এবং তাদের ওপর পাথর ছুঁড়েছে। তালেবানের জন্য নারী ফুটবলাররা সবসময় তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয়ে থাকতেন বলেও জানান তিনি।
আফগান মহিলা ফুটবল লিগের সহ-প্রতিষ্ঠাতা পপাল আরও বলেন, তিনি সবসময় কিশোরী-তরুণীদের শক্তিশালী, সাহসী ও দৃশ্যমান হতে উৎসাহিত করেছেন। কিন্তু পরিস্থিতির জন্য এখন তিনি তার কণ্ঠস্বর পাল্টাতে বাধ্য হচ্ছেন।
পপাল বলেন, 'আজ আমি তাদের ডেকে বলছি, নিরাপত্তার জন্য তোমরা নিজেদের নাম, পরিচয় সব মুছে ফেলো; (ইন্টারনেট থেকে) সব ছবি সরিয়ে নাও। এমনকি তাদের বলছি, তোমাদের জাতীয় দলের জার্সিটি পুড়িয়ে ফেলো বা ফেলে দাও।'
'এটা আমার জন্য বিশেষভাবে বেদনাদায়ক। একজন কর্মী হিসেবে আমি সবসময়ই অধিকারের জন্য উঠে দাঁড়িয়েছি, জাতীয় নারী দলের একজন খেলোয়াড়ের পরিচিতিটি পাওয়ার জন্য যা যা করা সম্ভব, করেছি,' বলেন তিনি।
আরও বলেন, 'বুকে সেই ব্যাজ পরার, এবং দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়ে কী গর্বিতই না ছিলাম আমরা!'
১৯৯৬-২০০১ সালে তালেবানের প্রথম শাসনামলে এই কট্টরপন্থী সংঘটনটি নারীদের কাজে যাওয়া থেকে বিরত রেখেছিল। মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতিও ছিল না তখন। মহিলারা পূর্ণ বোরকা ও একজন পুরুষ আত্মীয় ছাড়া বাসা থেকে বের হতেই পারতেন না। আইন-ভঙ্গকারীদের জন্য অপমানজনক শাস্তির ব্যবস্থাও ছিল।
তবে এবার তালেবানদের একটু নমনীয় সুর নিতে দেখা যাচ্ছে। তারা ইতোমধ্যেই বলেছে, ইসলামি আইনের কাঠামোর মধ্যে নারীদের সর্বোচ্চ অধিকার ও সম্মান দেওয়া হবে।
পপাল বলেন, ফুটবল সবসময় নারীদের তাদের অধিকারের জন্য অবস্থান নিতে এবং যারা যারা তাদের মুখ বন্ধ করে দিতে চায় তাদেরকে প্রতিহত করার সক্ষমতা দিয়েছে।
খেলোয়াড়দের বর্তমান অবস্থা সম্বন্ধে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'তারা খুব আতঙ্কের মধ্যে আছে। তারা উদ্বিগ্ন। শুধু খেলোয়াড়রা না, কর্মীরাও (পরিস্থিতি নিয়ে) খুবই আতঙ্কিত। বিপদে পড়লে সাহায্য বা সুরক্ষা চাওয়ার জন্য কারও কাছে যাওয়ার সুযোগ নেই তাদের।'
'তারা ভয় পাচ্ছে যেকোনো সময় দরজায় এসে কড়া নাড়বে কেউ,' যোগ করেন তিনি।
আরও বলেন, 'আমরা একটি দেশকে ভেঙে পড়তে দেখছি। দেশের নারী ও পুরুষদের ক্ষমতায়নের জন্য যত গর্ব, আনন্দ ছিল, তার পুরোটাই যেন নষ্ট হয়ে গেল।'
এক বিবৃতে ফিফার একজন মুখপাত্র বলেছেন, বিশ্ব ফুটবল সংস্থা আফগানিস্তানের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ, এবং ক্ষতিগ্রস্ত সকলের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছে।
'আমরা আফগানিস্তান ফুটবল ফেডারেশন এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। স্থানীয় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আগামী কয়েক সপ্তাহ ও মাস পর্যন্ত আমরা সহায়তা প্রদান করার চেষ্টা করে যাব,' জানান তিনি।
-
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান