আবারও ব্যাটিং ব্যর্থতা, আবারও হার বাংলাদেশের
বাংলাদেশ দলের অবস্থা বোঝাতে বা ম্যাচের খবর জানাতে বেশি শব্দের প্রয়োজন নেই। শুধু 'আবারও ব্যাটিং ব্যর্থতা, আবারও হার'- এটা বললেই হয়ে যাচ্ছে। সব বর্ণনা এক বাক্যেই মিলে যাচ্ছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর এখন পর্যন্ত দুঃস্বপ্নেরই হয়ে আছে বাংলাদেশের জন্য। চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর ভয়ঙ্কর সমুদ্রযাত্রা। এরপর টি-টোয়েন্টি সিরিজেও সেই হতাশার ব্যাটিং। ফলও চেনা, আরেকটি হার বাংলাদেশের।
রোববার রাতে ডমিনিকায় দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৩৫ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। দারুণ জয়ে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল নিকোলাস পুরানের দল। বৃষ্টির কারণে প্রথম ম্যাজটি পরিত্যক্ত হয়। আগামী ৭ জুলাই গায়ানাতে তৃতীয় টি-টোয়েন্টি অনুষ্ঠিত হবে।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ব্রেন্ডন কিংয়ের হাফ সেঞ্চুরি ও রভম্যান পাওয়েলের ২৮ বলে ৬১ রানের ঝড়ো ইনিংসে ৫ উইকেটে ১৯৩ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২২ গজে সাইক্লোন বইয়ে দেওয়া পাওয়েল বাংলাদেশের বোলারদের কোণঠাসা করে ফেলেন। জবাবে বরাবরের মতোই ব্যর্থ বাংলাদেশের টপ অর্ডার। সাকিব আল হাসানের দারুণ লড়াইয়ের পরও ৬ উইকেটে ১৫৮ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
বড় লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে তেড়েফুঁড়ে শুরু করে লাভ হয়নি। ৮ রানের মধ্যেই ফিরে যান দুই ওপেনার লিটন কুমার দাস ও এনামুল হক বিজয়। টানা দুই বলে এই দুই ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেন ক্যারিবীয় পেসার ওবেদ ম্যাককয়। ফ্লিক করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ারে ধরা পড়েন ৫ রান করা লিটন। পরের পরে ফুটওয়ার্কের দীনতায় ইনসাইড এজে বোল্ড হন ২ রান করা বিজয়।
দ্রুত উইকেট হারানোর চাপ কাটিয়ে তুলতে দাপুটে ব্যাটিং শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সাবলীল দেখাচ্ছিল অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যানকে। কিন্তু তার ইনিংস বড় হতে দেননি ওডেন স্মিথ। ডানহাতি এই ক্যারিবীয় পেসারের বলে মিড অফে ক্যাচ তুলে আউট হওয়া মাহমুদউল্লাহ ৭ বলে একটি চার ও একটি ছক্কায় ১১ রান করেন।
২৩ রানে ৩ উইকেট হারানো দলকে জয়ের পথে রাখার দাঁয়িত্ব কাঁধে তুলে নেন সাকিব আল হাসান ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। দ্রুততার সঙ্গে উইকেটে নিজেদের মানিয়ে নিয়ে জুটি গড়ে তোলেন তারা। ছন্দময় ব্যাটিংয়েই এগোচ্ছিলেন তারা। কিন্তু ১১তম ওভারে গিয়ে বাধে বিপত্তি, ভাঙে ৫৫ রানের জুটি। দারুণ খেলতে থাকা আফিফ স্কুপ শট খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন। এর আগে ২৭ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৪ রান করেন তিনি।
নতুন ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান উইকেটে গিয়ে প্রয়োজনীয় হারে রান তোলার সঙ্গে তাল মেলাতে পারেননি, সাকিবও দেখেশুনে খেলতে শুরু করেন। তাতে জয়ের পথ কঠিন হয়ে পড়তে থাকে বাংলাদেশের। এর মাঝেই বিদায় নেন ১৩ বলে ৭ রান করা সোহান। দীর্ঘদিন পর সুযোগ পাওয়া মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে নিয়ে লড়াই শুরু করেন সাকিব।
যদিও সেই লড়াই ছিল হারের ব্যবধান কমানোর। সাকিব-মোসাদ্দেক কেউই সেভাবে শট খেলার চেষ্টা করেননি। প্রয়োজনীয় রান তোলার হার অনেক বেশি হয়ে পড়লেও ওয়ানডে স্টাইলে খেলে যেত থাকেন তারা। ২৪ বলে গিয়ে বাংলাদেশের প্রয়োজন দাঁড়ায় ৮৮ রান, যা তোলা সাত সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার মতো। শেষ দিকে গিয়ে সাকিব চার-ছক্কার ফুলঝুরি সাজালেও ৩৫ রানের ব্যবধান থেকে যায়। সাকিব-মোসাদ্দেক জুটি থেকে আসে ৫৩ রান।
পরিত্যক্ত হওয়া প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ঝড়ো গতিতে ২৯ রান করা সাকিব এই ম্যাচেও সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেন। বাঁহাতি অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ৫২ বলে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৬৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেও অপরাজিত থাকেন। টি-টোয়েন্টিতে এটা তার দশম হাফ সেঞ্চুরি।
হার না মানা ইনিংসটি দিয়ে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে দুই হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব। মোসাদ্দেক করেন ১৫ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওবেদ ম্যাককয় ও রোমারিও শেফার্ড ২টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান ওডেন স্মিথ ও আকিল হোসেন।
এর আগে দাপুটে শুরু করা ক্যারিবীয়রা উদ্বোধনী জুটি থেকে বেশি রান পায়নি। তেড়েফুঁড়ে ব্যাটিং করতে থাকা কাইল মেয়ার্স দলীয় ১৮ রানে বিদায় নেন। শেখ মেহেদি হাসানের বলে আউট হওয়ার আগে ৯ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ১৭ রান করেন বাঁহাতি এই ওপেনার। তাসকিনের করা প্রথম ওভার থেকে ১২ রান তোলেন মেয়ার্স।
মেয়ার্সের বিদায়ের পর উইকেটে যাওয়া শামরাহ ব্রুকস সুবিধা করতে পারেননি। ৩ বল খেললেও রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। সাকিবের বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে ক্যাচ তুলে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এরপর কিংয়ের সঙ্গে যোগ দিয়ে দ্রুতই উইকেট মানিয়ে নেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক পুরান। তৃতীয় উইকেটে ৭৪ রান যোগ করেন কিং-পুরান।
দলীয় ১০০ রানের মাথায় পুরানকে ফেরানে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ৩০ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৪ রান করেন পুরান। স্বাগতিকদের অধিনায়ককে ফিরিয়ে যেন নিজেদের বিপদ ডেকে আনে বাংলাদেশ। শুরুর কয়েকটা বল দেখে তাণ্ডব চালান রভম্যান পাওয়েল। চার-ছক্কার ফুলঝুরিতে সাকিব-তাসকিনদের লাইন-লেংন্থ ভুলিয়ে দেন তিনি।
মুহূর্তেই কিংয়ের সঙ্গে ৬৩ রানের জুটি গড়ে ফেলেন পাওয়েল। দলীয় ১৬৩ রানে আউট হন কিং। এর আগে ৪৩ বলে ৭টি চার ও একটি ছক্কায় ৫৭ রান করেন ডানহাতি এই ওপেনার। শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করা পাওয়েল মাত্র ২৮ বলে ২টি চার ও ৬টি ছক্কায় ৬১ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন। ওডেন স্মিথ ৪ বলে ১১ রান করেন।
বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ২টি উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম। একটি করে উইকেট পান শেখ মেহেদি, সাকিব ও মোসাদ্দেক। এদিন সবচেয়ে খরুচে বোলিং করেছেন ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফেরা তাসকিন। ডানহাতি এই পেসার ৩ ওভারে ৪৬ রান খরচা করেন। মোসাদ্দেক কেবল এক ওভারে ১ রান দেন। বাকিরা সবাই ছিলেন খরুচে।