৫০ বছর ধরে ফুটবল বিশ্বকাপের ট্রফি বানায় যে পরিবার!
আগামী ২০ নভেম্বর পর্দা উঠবে ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২-এর। ক্রীড়া দুনিয়ার সবচেয়ে আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনের সপ্তাহখানেক আগে কাতারে পৌঁছে গেছে সোনায় মোড়ানো সেই মহার্ঘ্য, বিশ্বকাপ ট্রফি। বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী ৩২টি দেশ ঘুরে অবশেষে কাতারে পৌঁছেছে এটি।
১৮ ক্যারেট খাটি সোনায় তৈরি, ১৪ ইঞ্চি লম্বা ও ১৩ পাউন্ড ওজনের বিশ্বকাপ ট্রফিটি একবার হাতে নেওয়ার স্বপ্ন দেখেনি, এমন ফুটবলার খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। দুটি মনুষ্যমূর্তি তাদের হাত তুলে গোলাকার পৃথিবী সদৃশ বস্তুকে ধরে রেখেছে- এই হলো বর্তমানের বিশ্বকাপ ট্রফির নকশা।
বিশ্বকাপ ট্রফি তৈরির সময়কার ব্যয় ৫০,০০০ ডলার হলেও, বর্তমানে এটির বাজারমূল্য ২০ মিলিয়ন ডলার!
কাতার বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে না পারলেও বিশ্বকাপ ট্রফি তৈরির ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতালির নাম। গত ৫০ বছর ধরে বিশ্বকাপ ট্রফি তৈরি করে আসছে এই ইতালীয় পরিবার।
ফিফার তৃতীয় প্রেসিডেন্ট জুলে রিমে প্রথম বিশ্বকাপ আয়োজনের পুরোধা হওয়ায় তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে ১৯৪৬ সালে প্রথম বিশ্বকাপ ট্রফিটির নামকরণ করা হয়েছিল 'জুলে রিমে ট্রফি'। এটি ১৯৭০ সাল পর্যন্ত টিকে ছিল।
১৯৭০ সালে ব্রাজিল তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের পর ট্রফিটি একেবারেই তাদের দিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ১৯৭১ সালে মিলানের শিল্পী সিলভিও গাজ্জানিগা নতুন বিশ্বকাপ ট্রফিটি নকশা করেন। ফিফার কাছে বিশ্বের সাতটি দেশের ৫৩ জন ভাস্কর বিশ্বকাপ ট্রফির নকশা জমা দেন, এদের মধ্যে গাজ্জানিগার নকশাটি চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়। এরপর থেকে এটির নাম হয়ে যায় 'ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি'।
২০০২ সালে এপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গাজ্জানিগা বলেন, "আমি এই ট্রফিকে বীরত্বের পুরস্কার হিসেবে বিবেচনা করে নকশা করেছিলাম। কিন্তু কোনো সুপারহিউম্যানের বীরত্ব ভেবে নয়। এটা প্রচলিত কোনো কাপ নয়।"
২০১৬ সালের নভেম্বরে ৯৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন সিলভিও গাজ্জানিগা। তার মৃত্যুর পর তার ছেলে জর্জিও গাজ্জানিগা বার্তা সংস্থা এপিকে বলেছিলেন, বিশ্বকাপ ট্রফির নকশা করার সময়ই তার বাবা বুঝেছিলেন যে তার আঁকা নকশাটি দেখে অনেকে বুঝতে নাও পারেন, তাই তিনি সাথে করে একটি প্লাস্টার মডেল নিয়ে গিয়েছিলেন।
জর্জিওর ভাষ্যে, "আয়োজকরা নকশাটি দেখার সাথেসাথেই বুঝেছিলেন যে এটি খুবই ফটোজেনিক একটি নকশা হবে। এটি হাতে তুলে ধরা সহজ এবং তুলে ধরার পর দেখতেও নান্দনিক লাগে।"
কিন্তু ফিফার এই প্রতিযোগিতার শর্ত ছিল যে বিজয়ী তার কাজের স্বত্ত্বাধিকার রাখবে না। তাই সিলভিও গাজ্জানিগা বিশ্বকাপ ট্রফির নকশা করে সরাসরি কোনো মুনাফা পাননি।
জর্জিও বলেন, "কিন্তু বিশ্বকাপ ট্রফির নকশাকার হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর তিনি আরও অনেকগুলো ট্রফির নকশা করেছেন, এটাই ছিল লাভ। সিলভিও গাজ্জানিগা উয়েফা কাপ, ইউরোপিয়ান সুপার কাপসহ আরও অনেক আন্তর্জাতিক ট্রফির নকশা করেছেন। কিন্তু সবশেষে, বিশ্বকাপ ট্রফির জন্যই তিনি বিখ্যাত হয়ে থাকবেন।
গাজ্জানিগার পরিবার এখনো এই আইকনিক ট্রফি তৈরির অধিকার নিজেদের কাছে ধরে রেখেছেন। বিশ্বকাপ ট্রফি তৈরির সময় গাজ্জানিগা মিলানের বার্তোনি ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির হয়ে কাজ করতেন। আজ ৫০ বছর পরেও সেই প্রতিষ্ঠানের কাঁধেই রয়েছে বিশ্বকাপ ট্রফি তৈরির গুরুদায়িত্ব।
সূত্র: আল-জাজিরা, ইএসপিএন