‘অনেকে হয়তো এখন আমাকে পাগল বলবে’
১৮৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ১৩৬ রানেই নেই ৯ উইকেট, বাংলাদেশ যে তখন জয়ের আশা ছেড়ে দিয়েছিল; তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু ধ্বংস্তূপে দাঁড়িয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ পণ করলেন, 'ম্যাচ জিতে তবেই মাঠ ছাড়বো।' বাংলাদেশ অলরাউন্ডার করলেনও তাই। শেষ উইকেটে মুস্তাফিজুর রহমানকে সঙ্গী করে ভারতের বিপক্ষে এক উইকেটের অবিশ্বাস্য জয় এনে দিলেন মিরাজ। প্রথম ওয়ানডের পর তিনি জানালেন, হয়তো অনেকে এখন পাগল বলবেন; কিন্তু ম্যাচ জেতানোর বিশ্বাস ছিল তার।
৫১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি, যা রান তাড়ায় দশম উইকেটে বাংলাদেশের সেরা। অবিশ্বাস্য জয় ছিনিয়ে নেওয়ার পথে এই রান পাড়ি দেবে বাংলাদেশ, এটা আসলেই কেউ তখন বিশ্বাস করেনি। ৯ উইকেট তুলে নেওয়ার পর ভারতও ছিল স্বস্তিতে। কিন্তু মিরাজ-মুস্তাফিজে সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লেখা হলো, বাংলাদেশ পেলো রোমাঞ্চকর এক জয়।
চাপে বাংলাদেশ পথ হারায়, তীরে গিয়ে ডোবায় তরী; এটা এক রকম প্রতিষ্ঠিত ব্যাপার। শুধু ভারতের বিপক্ষেই খুব কাছে গিয়ে হারার কয়েকটি অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশের। তবে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এবার তেমন হয়নি; বেঙ্গালুরু, কলম্বো, দুবাই বা অ্যাডিলেডের দুঃসহ স্মৃতিও ফিরে আসেনি। এবার ভারতের হাত থেকে ঠিকই জয় ছিনিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ।
কীভাবে এমন জয় সম্ভব হলো, ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে স্বাভাবিকভাবেই এই প্রশ্নটি করা হলো মিরাজকে। বিশ্বাস রাখার কথা জানিয়ে তিনি বললেন, 'উত্তর হচ্ছে, আমার বিশ্বাস ছিল সত্যি কথা বলতে। অনেকে শুনলে হয়তো বলবে পাগল, হয়তো মনে করবে যে কিছু...। সত্যি বলতে আমি বিশ্বাস করছিলাম। আমার বিশ্বাস খুব ভালো ছিল। আমার কাছে একবারও মনে হয়নি ম্যাচটা হারবো। শুধু একটা কথা বারবার বলছিলাম, আমার মনে যেটা চলছিল, আমি পারবো। বারবার নিজেকে বলেছি আমি পারবো, আমি পারবো।'
নিজেই নিজেকে বোঝানো কথাগুলো হাসান মাহমুদকেও বলেন মিরাজ। তার ভাষায়, 'শেষের দিকের ব্যাটসম্যান ছিল, হাসানকেও একই কথা বলেছি যে চার-পাঁচটা বল যদি তুমি খেলতে পারো, তাহলে আমার জন্য সহজ হয়ে যাবে। কিন্তু আমি যেভাবে চিন্তা করছিলাম হয়তো এবাদতকে নিয়ে ১৫ রান করব, হাসানকে নিয়ে ২০ রান করবো। মুস্তাফিজকে নিয়ে শেষে ১৫-২০ রান যা লাগে, করবো। এভাবেই আমার চিন্তা ছিল।'
মিরাজের মতো আত্মবিশ্বাসী ছিলেন মুস্তাফিজও। সতীর্থকে নিয়ে মিরাজ বলেন, 'মুস্তাফিজ খুব ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। একটা জিনিস আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে, ও খুব আত্মবিশ্বাসী ছিল। একটা কথা আমাকে বারবার বলছিল, "আমাকে নিয়ে টেনশন করার কিছু নেই। আমি ঠেকিয়ে দিচ্ছি। আমি আউট হবো না, গায়ে বল লাগলেও সমস্যা নাই।" ওর এই বিশ্বাস দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। আমারও আত্মবিশ্বাস বেড়েছে ওর আত্মবিশ্বাস দেখে।'