মাশরাফির সিলেটে আবারও ধরাশায়ী সাকিবরা
হারে শুরু করার পর বদলে যাওয়ার গল্প লেখে ফরচুন বরিশাল। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) সাকিব আল হাসানের দল তুলে নেয় টানা পাঁচটি জয়। দল দুর্বার ছন্দে, সপ্তম ম্যাচে আবার প্রতিপক্ষ সিলেট স্ট্রাইকার্স। প্রথম ম্যাচের হারের বদলা নেওয়ার মিশন নিয়ে মাঠে নামে বরিশাল। কিন্তু মাশরাফির সিলেটের বিপক্ষে এবারও কুলিয়ে উঠতে পারলো না সাকিবের বরিশাল। দুইবারের সাক্ষাতেই তাদের সঙ্গী হলো হার।
মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ফরচুন বরিশালকে ২ রানে হারিয়েছে সিলেট। ৭ ম্যাচে ছয় জয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষস্থান ধরে রাখলো সিলেট। ষষ্ঠ জয়ে প্লে-অফে এক পা দিয়ে রাখলো মাশরাফির দল। সমান ম্যাচে ৫ জয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে আছে বরিশাল। চলতি বিপিএলের সাকিবের দল দ্বিতীয় ম্যাচ হারলো, দুইবারই সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে সিলেট স্ট্রাইকার্স। দুঃস্বপ্নের শুরু হওয়ার পরও দলকে পথ হারাতে দেননি ম্যাচসেরা নাজমুল হোসেন শান্ত। বাঁহাতি এই ওপেনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন। টম মুরস ও থিসারা পেরেরাও অবদান রাখেন। এই তিন ব্যাটসম্যানের ব্যাটে ৫ উইকেটে ১৭৩ রান তোলে সিলেট। জবাবে সাইফ হাসান, ইব্রাহিম জাদরানের পর সাকিব, ইফতিখার আহমেদ, করিম জানাত, মোহাম্মদ ওয়াসিমের ব্যাট শেষ বল পর্যন্ত লড়েও হেরে যায় বরিশাল। ৮ উইকেটে ১৭১ রানে থামে তাদের ইনিংস।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা মন্দ হয়নি ফরচুন বরিশালের। উদ্বোধনী জুটিতে ৪.৫ ওভারে ৪২ রান যোগ করেন দুই ওপেনার সাইফ হাসান ও ইব্রাহিম জাদরান। যদিও ব্যক্তিগত ৩ রানেই জাদরান ফিরে যেতে পারতেন, কিন্তু মাশরাফির বলে তার তোলা ক্যাচটি মাটিতে ফেলে দেন জাকির হাসান। পরে সাইফও একবার জীবন পান তৌহিদ হৃদয় ক্যাচ ফেলায়।
প্রতিপক্ষের ভুল কাজে লাগিয়ে সাইফ-ইব্রাহিম দলকে ভালো শুরু এনে দেন। কিন্তু ১৯ বলে ৪টি ছক্কায় ৩১ রান করে সাইফ আউট হলে দিক হারায় বরিশাল। ৫০ পেরোনোর আগে এনামুল হক বিজয়কেও হারায় তারা। এখান থেকে দলকে পথ দেখাতে শুরু করেন অধিনায়ক সাকিব ও টিকে থাকা ইব্রাহিম। এই জুটিতে ১০০ পেরিয়ে যায় বরিশাল, সাকিব-ইব্রাহিম যোগ করেন ৬১ রান।
দলীয় ১০৭ রানে বিদায় নেন ইব্রাহিম, এর আগে ৩৭ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪২ রান করেন। উইকেটে গিয়েই ঝড় তোলা সাকিবও থামেন কয়েক মুহূর্ত পর। ব্যাটে হাতে অসাধারণ সময় কাটানো বরিশাল অধিনায়ক ১৮ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ২৯ রান করে আউট হন। এতে সমস্যা হয়নি বরিশালের, জয়ের পথেই থাকে তারা।
ইফতিখার আহমেদ ১৩ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৭ ও করিম জানাত ১২ বলে ৩টি ছক্কায় ২১ রান করে এগিয়ে দিলে শেষ ওভারে গিয়ে বরিশালের প্রয়োজন দাঁড়ায় ১৫ রান। কিন্তু এই ওভারের প্রথম দুই বলে রান তো নিতেই পারেনি বরিশাল, উল্টো টানা দুই উইকেট হারায়। কামরুল ইসলাম রাব্বি এক রান নিয়ে স্ট্রাইক দিলে তৃতীয় বলটি ডট দেওয়া মোহাম্মদ ওয়াসিম শেষ দুই বলে ছক্কা ও চার মারেন। তাতে ২ রানের ব্যবধান থেকেই যায়। সিলেটের রেজাউর রহমান রাজা ৩টি উইকেট নেন। মোহাম্মদ আমির ও তানজিম হাসান সাকিব ২টি করে উইকেট পান।
এর আগে ব্যাটিং করতে নামা সিলেট স্ট্রাইকার্সের শুরুটা হয় দুঃস্বপ্নের। ১৫ রানের মধ্যেই তিন উইকেট হারিয়ে বসে তারা। একে একে ফিরে যান জাকির হাসান, মুশফিকুর রহিম ও চোট কাটিয়ে দলে ফেরা তৌহিদ হৃদয়। খাদের কিনারে চলে যাওয়া দলের হাল ধরেন ম্যাচসেরা শান্ত ও টম মুরস। চাপ কাটিয়ে এই দুই ব্যাটসম্যান দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন।
চতুর্থ উইকেটে ৮১ রানের জুটি গড়েন শান্ত-মুরস। ইংলিশ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুরসের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। ফেরার আগে ৩০ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৪০ রান করেন তিনি। মুরসের বিদায়ের পর থিসারা পেরেরার সঙ্গে জুটি বাধেন শান্ত। এই জুটি থেকে আসে ৬৮ রান। পেরেরা ১৬ বলে ৪টি চারে ২১ রান করে ফিরলেও শান্ত শেষ পর্যন্ত ব্যাট চালান।
এবারের বিপিএলে ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে থাকা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ৬৬ বলে ১১টি চার ও একটি ছক্কায় ৮৯ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন। সিলেটের হয়ে শান্ত, মুরস ও পেরেরাই কেবল রান করেন। বাকিদের কেউ ৫ রানের বেশি করতে পারেননি। বরিশালের পাকিস্তানি অলরাউন্ডার মোহাম্মদ ওয়াসিম ৩টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান সাকিব আল হাসান ও কামরুল ইসলাম রাব্বি।