রংপুরকে হারিয়ে ফাইনালে মাশরাফির সিলেট
বড় সংগ্রহ গড়েও স্বস্তিতে থাকার উপায় ছিল না। কখনও রনি তালুকদারের দাপট তো কখনও নিকোলাস পুরানের তাণ্ডব। উপায় না দেখে বল হাতে তুলে নেন আগের ম্যাচে মাত্র এক ওভার করা 'হাফ-ফিট' মাশরাফি বিন মুর্তজাই। অনেক পরিবর্তন আনতে না পারলেও ফোয়ারার মতো বওয়া রানের ধারা থামান তিনি। এরপর ম্যাচসেরা তানজিম হাসান সাকিবের পরিস্থিতি বদলে দেওয়া ১৮তম ওভার। এর পরের সময়টুকু সিলেটের, দারুণ জয়ে বিপিএলের ফাইনালে উঠে গেল মাশরাফির সিলেট।
মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রুদ্ধশ্বাস দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে রংপুর রাইডার্সকে ১৯ রানে হারিয়েছে সিলেট স্ট্রাইকার্স। দ্বিতীয় চেষ্টায় ফাইনালের টিকেট মিললো সিলেটের। লিগ পর্বের শীর্ষ দল হওয়ায় প্রথম কোয়ালিফায়ার খেলে সিলেট। কিন্তু কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারেনি তারা। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ভুল শুধরে শিরোপার পথে আরেকটি এগোলো সিলেট।
অধিনায়ক হিসেবে রেকর্ড পঞ্চমবারের মতো দলকে ফাইনালে তুললেন মাশরাফি। আগের চার ফাইনালেই শিরোপা জিতেছেন তিনি। ছয় বছর পর বিপিএলের ফাইনালে উঠলেন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক। সর্বশেষ ফাইনালে তুলেছিলেন আজকের ম্যাচের প্রতিপক্ষ রংপুর রাইডার্সকেই। ২০১৭ সালের সেই আসরে ঢাকা ডাইনামাইটসকে হারিয়ে প্রথম অভিজ্ঞতাতেই রংপুরকে শিরোপার স্বাদ এনে দেন মাশরাফি। ভিন্ন মালিকানার হিসেবে সিলেটেরও এটা প্রথম আসর, তাদেরকেও ফাইনালে তুললেন বিপিএলে শিরোপা জেতাটা নিয়মে পরিণত করে ফেলা অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে সিলেট স্ট্রাইকার্স। কেউ বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও দলটির কয়েকজন ব্যাটসম্যান রানের দেখা পান। হৃদয়, শান্ত, মাশরাফি, থিসারা, লিন্ডেদের ব্যাটে ৭ উইকেটে ১৮২ রান তোলে সিলেট। জবাবে শুরুটা ভালো না হলেও এক পাশ আগলে রাখার পাশাপাশি দাপুটে ব্যাটিং করে যান রনি তালুকদার। তার সঙ্গে যোগ দিয়ে ব্যাট চালান নিকোলাস পুরান, নুরুল হাসান সোহানও। কিন্তু ১৮তম ওভারে গিয়ে পাল্টে যায় দৃশ্যপট, যা আর রংপুরের পক্ষে থাকেনি। ১৭তম ওভার পর্যন্তও ঠিক পথে থাকা রংপুরকে শেষ পর্যন্ত হার মেনে নিতে হয়, তাদের ইনিংস শেষ হয় ৮ উইকেটে ১৬৩ রানে।
বড় লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই হোঁচট খায় রংপুর, ফিরে যান ইংলিশ ব্যাটসম্যান স্যাম বিলিংস। শামীম হোসেন পাটোয়ারীকে সাবলীল মনে হলেও তিনি বেশি সময় টিকতে পারেননি। ১১ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৪ রান করে ফিরেন যান। ৩৪ রানে ২ উইকেট হারালেও সেটার তোয়াক্কা করেননি নিকোলাস পুরান। উইকেটে গিয়েই ঝড় তোলেন ক্যারিবীয় এই ব্যাটসম্যান। রনি ও পুরানের জুটি থেকে ৩৪ রান পায় রংপুর।
পুরান ১৪ বলে একটি চার ও ৪টি ছক্বায় ৩০ রান করে আউট হন। এরপরও রংপুরকে চাপে পড়তে হয়নি। রনির সঙ্গে যোগ দিয়ে দায়িত্বশীল ব্যাটিং করতে থাকেন অধিনায়ক সোহান। চতুর্থ উইকেটে ৮২ রানের জুটি গড়েন তারা। তখন মনে হচ্ছিল রংপুেই শেষ হাসি হাসতে যাচ্ছে। কিন্তু ১৮তম ওভারে গিয়ে বদলে যায় সব। দুর্ভাগ্যবসত রান আউট কাটা পড়েন রংপুরের আশার প্রদীপ হয়ে টিকে থাকা রনি। ডানহাতি এই ওপেনার ৫২ বলে ৭টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬৬ রান করেন।
এই ওভারের প্রথম বলে ৩৩ রান করা সোহানকে ফেরান তরুণ পেসার সাকিব। ১৮তম ওভারে মাত্র ২ রান খরচা করেন তিনি। শেষ ১২ বলে রংপুরের দরকার ছিল ৩১ রান, কিন্তু দাসুন শানাকা, ডোয়াইন ব্রাভোরা এই রান তুলতে পারেননি। সিলেটের লুক উড ৩টি উইকেট নেন। ২টি করে উইকেট নেন সাকিব ও রুবেল হোসেন।
এর আগে ব্যাটিং করা সিলেট স্ট্রাইকার্স ভালোই শুরু করে। উদ্বোধনী জুটিতে ৮.৫ ওভারে ৬৫ রান যোগ করেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌফিক হৃদয়। এদিন শান্ত সাবলীল ব্যাটিং করলেও হৃদয়কে তার স্বভাবজাত চেহারায় দেখা যায়নি। পুরো বিপিএলে ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে থাকা এই ব্যাটসম্যান ঠিকমতো ব্যাটে-বলেই করতে পারছিলেন না।
যদিও এই জুটি ভাঙে শান্তর বিদায়ে। রংপুরের ডানহাতি স্পিনার শেখ মেহেদি হাসানের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে বিদায় নেওয়ার আগে ৩০ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ৪০ রান করেন সিলেটের এই ওপেনার। এরপর ব্যাটিং অর্ডার পাল্টে আগের ম্যাচের মতোই তিন নম্বরে নেমে যান অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। যদিও হৃদয়ের সঙ্গে তার জুটিটি বড় হয়নি। ২৫ বলে ২৫ রান করে থামেন হৃদয়।
এরপর জাকির হাসানকে নিয়ে এগোতে থাকেন মাশরাফি, এই জুটি থেকে আসে ২৪ রান। বোলার হয়েও মাশরাফি টি-টোয়েন্টি মেজাজে ব্যাট চালিয়ে যেতে থাকলেও অন্য প্রান্তে ভাঙনের সুর বাজতে থাকে। ১০০ পেরিয়ে বিদায় নেন জাকির। বাঁহাতি তরুণ এই ব্যাটসম্যান ১৩ বলে একটি চারে ১৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন।
উইকেটে গিয়েই ঝড় তোলা রায়ান বার্লও থিতু হতে পারেননি। ৬ বলে ২টি চার ও একটি ছক্বায় ১৬ রান করে বিদায় নেন জিম্বাবুয়ের এই অলরাউন্ডার। ১৬তম ওভারে গিয়ে থামতে হয় মাশরাফিকেও। সিলেট অধিনায়ক ১৬ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ২৮ রান করেন। এরপর থিসারা পেরেরা ও জর্জ লিন্ডের ব্যাটে স্বস্তি পায় সিলেট। পেরেরা ১৫ বলে একটি ছক্কায় ২১ রান করেন। লিন্ডে ১০ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় ২১ রানে অপরাজিত থাকেন। রংপুরের হাসান মাহমুদ ও দাসুন শানাকা ২টি করে উইকেট পান। একটি করে উইকেট নেন শেখ মেহেদি হাসান ও ডোয়াইন ব্রাভো।