ম্যাচ পরিত্যক্ত হলো বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ডের, কপাল খুললো দক্ষিণ আফ্রিকার
একটি করে বৃষ্টির ফোটা পড়ছিল, আর তা যেন কাটা হয়ে বিধছিলো আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেটারদের গায়ে। বৃষ্টিতেই যে ধুয়ে-মুছে যাচ্ছিল তাদের স্বপ্ন! বন্ধুর পথ জেনেও বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে দারুণ কিছু করার স্বপ্নে বিভোর ছিল আইরিশরা। ভালো রান রেট নিশ্চিত করাসহ বাংলাদেশকে তিন ম্যাচে হারাতে পারলে সরাসরি ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার টিকেট মিলতো আয়ারল্যান্ডের। কিন্তু প্রথম ওয়ানডেতেই সব স্বপ্ন চুরমার!
মঙ্গলবার ইংলান্ডের চেমসফোর্ডে বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার প্রথম ওয়ানডে বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়েছে। এই ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় আয়ারল্যান্ডের সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ শেষ হয়ে গেছে। কোয়ালিফায়ার খেলে তাদেরকে বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে হবে। আইরিশদের মন খারাপের দিনে খুশির খবর মিলেছে দক্ষিণ আফ্রিকার। অষ্টম দল হিসেবে সরাসরি বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত হলো প্রোটিয়াদের।
আইসিসি সুপার লিগে পয়েন্ট টেবিলের সেরা আটে থাকা দলগুলো সরাসরি বিশ্বকাপে খেলবে। বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ডের ম্যাচটি পরত্যিক্ত হওয়ার তালিকার আট নম্বর স্থানটি নিশ্চিত হয় দক্ষিণ আফ্রিকার। সরাসরি বিশ্বকাপে খেলা আগেই নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ, পাঁচ নম্বরে আছে তামিম ইকবালের দল। আগামী বিশ্বকাপে সরাসরি খেলবে ভারত (আয়োজক) নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশ ৯ উইকেটে ২৪৬ রান তোলে। সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলা মুশফিকুর রহিম ইনিংসের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। নাজমুল হোসেন শান্ত কাছে গিয়েও পঞ্চাশ ছুঁতে পারেননি। বাংলাদেশের আরও কয়েকজন ব্যাটসম্যান ভালো শুরু করে থিতুও হয়েছেন, কিন্তু আর কেউ-ই ৩০ এর কোটা পেরোতে পারেননি। জবাবে আয়ারল্যান্ড ১৬.৩ ওভারে ৩ উইকেটে ৬৫ রান তোলার পর বৃষ্টি শুরু হয়। তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করেও বৃষ্টি নাম কমলে ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশের ইনিংসের অবস্থা বুঝতে স্কোরকার্ডের ছক্কার ঘরে তাকালেই চলবে। ৫০ ওভারের ইনিংসে একটি ছক্কা, সেটাও মেরেছেন পেসার শরিফুল ইসলাম। বুঝতে বাকি থাকে না আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ব্যাটিংটা মন মতো হয়নি তামিমদের। এলোমেলো শুরুর পর শান্ত ও সাকিবের জুটিতে কিছুটা প্রতিরোধ। এ দুজনের বিদায়ের পর মুশফিকের হাফ সেঞ্চুরির সঙ্গে আরও কয়েকটি ছোট ইনিংস, সব মিলিয়ে লড়াইয়ের পুঁজি পায় বাংলাদেশ।
প্রথম ওভারেই বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। ইনিংসের চতুর্থ বলেই আইরিশ পেসার জশ লিটলের অসাধারণ এক ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হয়ে বিদায় নেন লিটন কুমার দাস। প্রথম বলেই থামতে হয় তাকে। দেখেমুনে খেলা তামিমও বেশি সময় টিকতে পারেননি। চতুর্থ ওভারে আউট হওয়ার আগে ১৯ বলে ২টি চারে ১৪ রান করেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক।
শুরুর চাপ কাটিয়ে তৃতীয় উইকেটে ৩৭ রানের জুটি গড়েন শান্ত ও সাকিব। দলীয় পঞ্চাশ পেরিয়ে বিদায় নেন সাকিব। এগিয়ে গিয়ে টেনে খেলার চেষ্টা করা অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডারের স্টাম্প ভেঙে দেন গ্রাহাম হিউম। এরপর আবারও প্রতিরোধ। এবার তাওহিদ হৃদয়ের সঙ্গে ৫০ রানের জুটি গড়েন শান্ত। এই জুটি ভাঙার আগে ৬৬ বলে ৭টি চারে ৪৪ রান করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
হৃদয়কে বেশি সাবলীল দেখাচ্ছিল, থিতুও হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ইনিংসটা বড় করা হয়নি তরুণ ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়া হৃদয় ৩১ বলে ২টি চারে ২৭ রান করেন। এরপর ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটিটি পায় বাংলাদেশ। মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে ৬৫ রান যোগ করেন মুশফিক।
৩৪ বলে ৪টি চারে ২৭ রান করে মিরাজ বিদায় নেন। ৭০ বলে ৬টি চারে ইনিংস সর্বোচ্চ ৬১ রান করেন মুশফিক। এটা তার ৪৪তম ওয়ানডে হাফ সেঞ্চুরি। তার বিদায়ের পর বাংলাদেশকে আড়াই'শ এর কাছাকাছি নিয়ে যান তাইজুল ইসলাম ও শরিফুল ইসলাম। তাইজুল ৩৬ বলে ১৪ ও ইনিংসে একমাত্র ছক্কাটি মারা শরিফুল ১৫ বরে ১৬ রান করেন। আয়ারল্যান্ডের জশ লিটল ৩টি এবং মার্ক অ্যাডায়ার ও গ্রাহাম হিউম ২টি করে উইকেট পান।