ফকরের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে পাওয়া জয়ে সেমির আশা বেঁচে রইল পাকিস্তানের
বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান তাড়া ৩৪৪, শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে রেকর্ডটি এবারের আসরেই গড়েছে পাকিস্তান। নিউজিল্যান্ড আজ চারশ'র বেশি রান করেও হেরে গেল, তবু এটা সর্বোচ্চ রান তাড়া হলো না। হিসাবটা জটিল মনে হলেও আদতে তেমন নয়। মাঝের কিছু রান চলে গেছে বৃষ্টির পেটে। কিউইদের রান পাহাড় তাড়ায় পাকিস্তানের দাপুটে ব্যাটিংয়ের পর দুইবার বৃষ্টি হানা দেয়। যে কারণে নতুন লক্ষ্যও টপকানো হয়নি বাবর আজমদের। বৃষ্টি আইনে এগিয়ে থাকায় ম্যাচ জিতে নিয়েছে পাকিস্তান।
শনিবার বেঙ্গালুরুর এমন চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ২১ রানে হারিয়েছে পাকিস্তান। বৃষ্টি নামার আগে ঝড়ো সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানকে এগিয়ে রাখেন ম্যাচসেরা ফকর জামান। বিশ্বকাপে দেশের পক্ষে তার করা দ্রুততম সেঞ্চুরির কল্যাণে সেমি-ফাইনাল খেলার আশা বেঁচে রইল ৮ ম্যাচে চার জয় পাওয়া পাকিস্তানের। তবে সেমিতে খেলতে শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিতে অন্য ম্যাচের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে তাদের। পয়েন্ট টেবিলের চার নম্বরে থাকা নিউজল্যান্ডও আট ম্যাচে চারটিতে জিতেছে। রান রেটে এগিয়ে থাকায় তারা পাকিস্তানের উপরে।
টস হেরে ব্যাটিং করতে নামে নিউজিল্যান্ড। রাচিন রবীন্দ্রর রেকর্ড তৃতীয় সেঞ্চুরি, অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের অসাধারণ ইনিংসের পর মার্ক চাপম্যান ও গ্লেন ফিলিপসের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৬ উইকেটে ৪০১ রান তোলে কিউইরা। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এটাই তাদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।
জবাবে ভালো শুরু না হলেও ফকর ও বাবরের ব্যাটে জয়ের পথেই থাকে পাকিস্তান। ২২তম ওভারে বৃষ্টি নামলে তাদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪১ ওভারে ৩৪২ রান। খেলা শুরুর কয়েক ওভার পর আবারও হানা দেয় বৃষ্টি, ২৫.৩ ওভারে পাকিস্তানের নতুন লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৮০। ততোক্ষণে পাকিস্তানের স্কোরকার্ডে জমা হয়ে গেছে ২০০ রান। বৃষ্টি আইনে ২১ রানে এগিয়ে থাকায় পাকিস্তানকে জয়ী ঘোষণা করা হয়।
৪০২ রানের বিশাল লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে দলীয় ৬ রানেই ওপেনার আবদুল্লাহ শফিককে হারায় পাকিস্তান। এই ধাক্কা মুহূর্তেই কাটিয়ে তুলে সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকেন ফকর ও বাবর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে ফকরের রান তোলার গতি। নিউজিল্যান্ডের বোলারদের ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দিয়ে ৬৪ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন বাঁহাতি এই ওপেনার। বিশ্বকাপে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এটাই দ্রুততম সেঞ্চুরি।
সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পরও তাণ্ডব জারি রাখেন ফকর, পুরোটা সময়ে বাবর কেবল তাকে সঙ্গ দিয়ে গেছেন। দ্বিতীয় উইকেটে ১৯৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি পায় পাকিস্তান। খাদের কিনারে চলে যাওয়া দলকে বাঁচানো ফকর ৮১ বলে ৮টি চার ও ১১টি ছক্কায় ১২৬ রানে অপরাজিত থাকেন। বিশ্বকাপে এটাই তার প্রথম সেঞ্চুরি এবং ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দশম। পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর ৬৩ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬৬ রানে অপরাজিত থাকেন। এটা তার বিশ্বকাপের সপ্তম এবং ওয়ানডের ৩২ তম হাফ সেঞ্চুরি। পাকিস্তানের যাওয়া একমাত্র উইকেটটি নেন টিম সাউদি।
এর আগে ব্যাটিং করতে নেমে দাপুটে শুরু করে নিউজিল্যান্ড। উদ্বোধনী জুটিতে ১০.৫ ওভারে ৬৮ রান যোগ করেন ডেভন কনওয়ে ও রাচিন রবীন্দ্র। ৩৯ বলে ৩৫ রান করে কনওয়ে ফেরার পর রবীন্দ্র ও উইলিয়ামসন জুটি গড়েন। দ্বিতীয় উইকেটে তারা ১৪২ বলে ১৮০ রান যোগ করেন। যা বিশ্বকাপে দ্বিতীয় উইকেটে এবং যেকোনো উইকেটে কিউইদের দ্বিতীয় সেরা জুটি।
এই জুটি গড়ার পথে সেঞ্চুরি পূর্ণ করে রেকর্ডের পাতায় নাম তোলেন রবীন্দ্র। এবারের আসরে তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলেন নিলেন তিনি, অভিষেক বিশ্বকাপে কোনো ব্যাটসম্যানের পক্ষে যা সর্বোচ্চ। কেবল বিশ্বকাপেই নয়, নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপ রেকর্ডও পাল্টে দিয়েছেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার। দেশটির প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে কোনো বিশ্বকাপে তিনটি সেঞ্চুরির মালিক হলেন তিনি। এরআগে কিউইদের তিনজন ব্যাটসম্যান ভিন্ন ভিন্ন আসরে দুটি করে সেঞ্চুরি করেন।
সেঞ্চুরির পথে ছিলেন চোট কাটিয়ে দলে ফেরা কিউই অধিনায়ক উইলিয়ামসনও, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিন অঙ্কে যাওয়া হয়নি তার। ৭৯ বলে ১০টি চার ও ২টি ছক্কায় ৯৫ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন আউট হন তিনি। কিছুক্ষণ পর বিদায় নেন দুর্বার ছন্দে থাকা রবীন্দ্র। এর আগে ৯৪ বলে ১৫টি চার ও একটি ছক্কায় ১০৮ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন ব্যাটিং অর্ডার ওপরে নেওয়ার পর থেকে রানের ফোয়ারা বইয়ে দেওয়া বাঁহাতি এই ওপেনার।
এরপর নিউজিল্যান্ডের যে ব্যাটসম্যান উইকেটে গেছেন, ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছেন। এদের মধ্যে তাণ্ডব চালান গ্লেন ফিলিপস। ২৫ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪১ রান করেন তিনি। ড্যারিল মিচেল ১৮ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ২৯ রান করেন। খুনে ব্যাটিং করা মার্ক চাপম্যান ২৭ বলে ৭টি চারে ৪৪ রান করেন। শেষ পর্যন্ত দাপুটে ব্যাটিং করে যাওয়া মিচেল স্যান্টনার ১৭ বলে ২টি ছক্কায় ২৬ রানে অপরাজিত থাকেন।
পাকিস্তানের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে কম রান দেওয়া মোহাম্মদ ওয়াসিম ১০ ওভারে ৬০ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান হাসান আলী ইফতিখার আহমেদ ও হারিস রউফ। ১০ ওভারে ৯০ রান খরচায় উইকেটশূন্য থাকেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। ২ ওভারে ২১ রানে কোনো উইকেট পাননি আগা সালমানও।