‘বোর্ড লভ্যাংশ না দিলে চালিয়ে যাওয়া কঠিন হবে’
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স যখন বিপিএলে যোগ দেয় তখন আভীর আলমের বয়স মাত্র ১৩ বছর। তার পরিবারের ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকার সুবাদে ছোট থেকেই এই খেলার পরিবেশের মধ্যেই বড় হয়েছেন আভীর। তার নানা মোস্তফা কামাল ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বিসিবির সভাপতি ছিলেন, আভীরের খালা নাফিসা কামাল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মালিক।
আভীরের বেশ ভালোভাবেই মনে আছে তার ছোটবেলার কথা। বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা তাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন, টীম হোটেলে নিজের রুমে আন্দ্রে রাসেল ও সুনিল নারিনের উপস্থিতির কথাও মনে আছে আভীরের। মাত্র ২২ বছর বয়সে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন আভীর, যা তার জন্য অনেক বড় একটি বিষয়।
এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে আভীর বলেন, 'এই ব্যাপারটা অন্যকরম। আমাকে সবাই বাচ্চা হিসেবেই দেখে এসেছে। এমন না যে তারা আমাকে কখনও অসম্মান করেছে। কিন্তু আমি সবসময় তাদের কাছে বাচ্চাই ছিলাম। এই ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গেই আমার বেড়ে ওঠা। এখন যে আমার কথার একটা দাম আছে সবার কাছে, এটা ভালো লাগে। যারা ক্রিকেটের সঙ্গে ওঠা-বসা করেন তারাও আমার সিদ্ধান্ত মেনে নেন, এই ব্যাপারটা অন্যরকম।'
বিপিএলে যেখানে অন্য প্রায় সব ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা কিংবা নাম হাতবদল হয়েছে বহুবার, কুমিল্লা সেখানে ব্যতিক্রম। ২০১৫ সাল থেকেই বিপিএলে আছে দলটি। টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি সফলও হয়েছে তারাই। শুধু দলের নাম কিংবা মালিকানাই নয়, খেলোয়াড় থেকে শুরু করে কোচিং স্টাফরাও একই থেকে গেছেন কুমিল্লার। লিটন দাস, সুনিল নারিন কিংবা আন্দ্রে রাসেলরা এই ফ্র্যাঞ্চাইজের হয়ে খেলছেন প্রায় ১০ বছর ধরে।
আভীর বিশ্বাস করেন, সফল হওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট দল থাকা জরুরি। সঙ্গে তিনি এটিও জানালেন, কুমিল্লা কেবল মাথা দিয়ে নয়, হৃদয় দিয়েও ভাবে, 'এই দলটা আমাদের হৃদয়ের খুব কাছের। আমি বিশ্বাস করি, খেলোয়াড়রাও একইরকম অনুভব করেন।'
'আমরা প্রতিবছরই কয়েকজন খেলোয়াড়কে ধরে রাখি। তবে যখনই নিলামে আমরা অন্যদের কিনি, খেয়াল করে দেখবেন, আমরা এমন কাউকেই কিনতে চাই যারা আমাদের হয়ে আগে খেলেছে। কারণ তারাই দলের ভেতরের পরিবেশটা ভালো বুঝবে, আমাদের শ্রমটা তারাই বেশি মূল্য দেবে। তাদের জন্য আমাদের যে ভালোবাসা সেটিও তারা জানে।'
নামিদামি কয়েকজন তারকা ক্রিকেটার অনেকদিন ধরেই খেলে যাচ্ছেন কুমিল্লার হয়ে। সুনিল নারিন ও আন্দ্রে রাসেল কুমিল্লার সঙ্গে শুরু থেকেই আছেন। ইংলিশ বিশ্বকাপজয়ী অলরাউন্ডার মইন আলি গত তিন বছর ধরেই কুমিল্লার হয়ে খেলছেন। 'তারা আমাদেরকে নিয়ে অনেক উচ্চ ধারণা পোষণ করেন। আমাদেরকে নিয়ে যেভাবে তারা কথা বলেন সেটি আমাদের জন্য সম্মানজনক।' আভীর দাবি করেছেন, একজন বিদেশী খেলোয়াড় শাহরুখ খানের ফোনকল পেয়েও ইন্টারন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি লিগ খেলতে যাননি শুধুমাত্র কুমিল্লার প্রতি নিজের ভালোবাসার টানে।
এরপরই প্রশ্ন জাগে, অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজিরা কুমিল্লার মতো দীর্ঘদিন টিকতে পারছে না কেন? বেশিরভাগ ফ্র্যাঞ্চাইজির সমস্যা একটি জায়গাতে। লাভ বণ্টন, খেলোয়াড়দের না পাওয়া, দীর্ঘদিন ধরে চলা টুর্নামেন্ট- এই সমস্যাগুলোর কারণে অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি টিকতে পারেনি। কুমিল্লাকেও একই বিষয়গুলোর মুখোমুখি হতে হয়েছে, যা দলটিকে ভাবাচ্ছে তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজি সরিয়ে নিতে।
'এমন না যে আমরা পারব না। তবে এটা করা খুবই কঠিন কাজ। আমাদের পরিবারের ক্রিকেটের প্রতি যে ভালোবাসা আছে, এজন্য আমরা নিজেদের সামর্থ্যের শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করি। কিন্তু এমন অনেক কিছুই রয়েছে যা আমাদেরকে ভাবাচ্ছে। ক্রিকেট বোর্ড যদি লাভের অংশ না দেওয়া শুরু করে, তাহলে আমাদের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি যারা কিনা ১০ বছর ধরে এখানে আছে, তাদের জন্য থাকাটা কঠিন হয়ে যাবে।'
এ বছরের বিপিএলের সময়সূচিই যেমন সমস্যা সৃষ্টি করেছে, একই সময়ে চারটি বড় টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট চলছে বিশ্বজুড়ে, যে কারণে খেলোয়াড়দের পাওয়াও কঠিন হয়ে উঠেছে। 'একটা টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের হিসেবে এটি অনেক দীর্ঘ সময়ের হয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের টুর্নামেন্ট কখনই ছয় সপ্তাহের বেশি যাওয়া উচিত নয়। গত বছরের বিপিএল অনেক বেশি দীর্ঘ ছিল'
খেলার পাশাপাশি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স পরিবেশ বাঁচানোর জন্যেও উদ্যোগ গ্রহণ করছে। ২০৩০ সালে যদি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে থাকে, তাহলে তাদের সব কার্যক্রম কার্বন নিঃসরণ ছাড়াই হবে। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন আভীর আলম। কুমিল্লাই প্রথম দল, যারা এ ধরনের ঘোষণা দিল। ইতোমধ্যে এই লক্ষ্যে কাজও শুরু হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন আভীর।