পিএসজির স্বপ্ন গুঁড়িয়ে ১১ বছর পর ফাইনালে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড
পিএসজির ওই চেষ্টার ততোক্ষণে কয়েক মিনিট হয়ে গেছে। টিভি রিপ্লেতে আবারও দেখানো হলো বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের রক্ষণে ফরাসি চ্যাম্পিয়নদের হানার দৃশ্যটি। ক্যামেরা ঘুরতেই দেখা গেল শূন্যে হাত ছুঁড়ছেন লুইস এনরিকে। এই চেষ্টায় ভুল নেই শিষ্যদের, তবু মিললো না জালের দেখা। শূন্যে হাত ছুঁড়ে পিএসজি কোচ যেন ভাগ্যকে দুষছিলেন। একবার দুবার নয়, তাদের চারটি প্রচেষ্টা ফিরে এসেছে ক্রসবার ও বারে লেগে।
ফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখতে, খেলায় সমতা আনতে চাই গোল; সেই চেষ্টা করে গেলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে, ওসমান দেম্বেলে, আশরাফ হাকিমিরা। মুহুর্মুহু আক্রমণে কাঁপিয়ে দিলেন ডর্টমুন্ডের রক্ষণভাগ। কয়েকবার জাগলো গোলের সম্ভাবনাও, কিন্তু একবারও মিললো না জালের দেখা। উল্টো মাঝে একবার পিএসজির জালে বল পাঠিয়ে ব্যবধান বাড়িয়ে রাখলো ডর্টমুন্ড। ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ হলো ওই গোলেই। পিএসজিকে হারিয়ে ১১ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠলো ডর্টমুন্ড।
মঙ্গলবার রাতে প্যারিসে সেমি-ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে পিএসজিকে ১-০ গোলে হারিয়েছে ডর্টমুন্ড। তাদের পক্ষে একমাত্র গোলটি করেন মাটস হুমেলস। আগের লেগে ঘরের মাঠে একই ব্যবধানে এমবাপ্পেদের হারায় ডর্টমুন্ড। দুই লেগ মিলিয়ে ২-০ গোলের ব্যবধানে ওয়েম্বলিতে ফাইনালে টিকেট কেটে নেয় তারা। আগামী ১ জুন লন্ডনে শিরোপার লড়াইয়ে মাঠে নামবে ডর্টমুন্ড। রিয়াল মাদ্রিদ ও বায়ার্ন মিউনিখের মধ্যে জয়ী দলের বিপক্ষে শিরোপার লড়াই হবে তাদের।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ডর্টমুন্ডের পথচলা বর্ণিল নয়। নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে তারা একবারই ইউরোপ সেরার মুকুট জিততে পেরেছে। ১৯৯৭ সালে মিউনিখে অনুষ্ঠিত ফাইনালে জুভেন্টাসকে হারিয়ে শিরোপা উৎসবে মাতে হলুদ শিবিররা। এরপর ফাইনাল খেলতে লম্বা সময় লেগে যায় ক্লাবটির। সর্বশেষ ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে খেলে ডর্টমুন্ড। সেবার ওয়েম্বলিতে বায়ার্নের বিপক্ষে হেরে যায় জার্মান ক্লাবটি। আরও একবার ফাইনালে তারা, ভেন্যু সেই ওয়েম্বলি। বায়ার্ন যদি রিয়াল বাধা জয় করতে পারে, এবারও তাদের সামনেই পড়বে ডর্টমুন্ড।
পরম আরাধ্যের শিরোপা ছুঁয়ে দেখার স্বপ্ন এবারও পূরণ হলো না পিএসজির। বারবার চেষ্টা শেষে আরও একবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা অধরাই রয়ে গেল তাদের। এর আগে একবারই ফাইনাল খেলেছে ফরাসি চ্যাম্পিয়নরা। ডর্টমুন্ডের সর্বশেষ ফাইনালের মতো তাদেরও স্বপ্নভঙ্গ হয় বায়ার্নে। লিসবনে অনুষ্ঠিত ২০১৯-২০ আসরের ফাইনালে কিংসলে কোমানের করা গোলে ১-০ গোলে হেরে যায় পিএসজি। চার মৌসুম পর আশা জাগিয়ে ফাইনালের টিকেট কাটা হলো না কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগ হেরেও শেষ চারে ওঠা ক্লাবটির। তৃতীয়বারের মতো সেমি-ফাইনাল থেকে বিদায় নিলো পিএসজি।
ঘরের মাঠে ১-০ গোলে জেতা ডর্টমুন্ড ব্যবধান ধরে রাখে দ্বিতীয় লেগের প্রথমার্ধ পর্যন্ত। বিরতি থেকে ফিরেই তাদেরকে উৎসবে মাতান হুমেলস। সতীর্থের কর্নারে হেড করে পিএসজির জালে বল পাঠান ৩৫ বছর বয়সী জার্মান এই ডিফেন্ডার। ২-০ গোলে পিছিয়ে পরে মরিয়া হয়ে ওঠা পিএসজি খেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়, সাজাতে থাকে আক্রমণ। অবশ্য ব্যবধান দ্বিগুণ হওয়ার আগেই প্রায় গোলের দেখা মিলে গিয়েছিল, কিন্তু ভাগ্যের ফেরে ডর্টমুন্ডের জালের ঠিকানা পায়নি প্যারিসের ক্লাবটি।
৪৭তম মিনিটে ওয়ারেন জাইরে-এমেরির শট পোস্টে লাগে। ৬২ তম মিনিটেও ম্যাচের ব্যবধান কমতে পারতো। কিন্তু প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে নুনো মেন্দেসের নেওয়া জোরালো শট পোস্টে লাগে। ৮৭তম মিনিটে আবারও হতাশ হতে হয় পিএসজিকে। ছয় গজ বক্সের বাইরে থেকে এমবাপ্পের নেওয়া শট ডর্টমুন্ডের গোলরক্ষক গ্রেগর কোবেলের হাত ছুঁয়ে গিয়ে ক্রসবারে লাগে। ৮৯তম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে ভিতিনিয়ার জোরালো শটও লাগে ক্রসবারে। শেষপর্যন্ত গোলের দেখাই মেলেনি, দুই লেগ মিলিয়ে ২-০ গোলের হারে আসর থেকে বিদায় নেয় পিএসজি।