যে কারণে শেষ মুহূর্তে বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ সাইফউদ্দিন
ফেরার পর্বটা দারুণ ছিল মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের। চোট কাটিয়ে দীর্ঘদিন পর মাঠে ফেরা ডানহাতি এই পেসার সর্বশেষ বিপিএলে বল হাতে দাপট দেখান। ফরচুন বরিশালের হয়ে ৯ ম্যাচে তার শিকার ছিল ১৫ উইকেট, যা আসরের চতুর্থ সর্বোচ্চ। আবাহনী লিমিটেডের হয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও সময়টা ভালোই কাটে তার, নেন ১৩ উইকেট। পারফরম্যান্সের ধারাবাকিতায় জিম্বাবুয়ে সিরিজের দলে নেওয়া হয় তাকে। গত ১ মে আইসিসিকে বিসিবির পাঠানো বিশ্বকাপ স্কোয়াডেও নাম ছিল সাইফউদ্দিনের।
২৭ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিশনে থাকছেন, এমনটাই ধরে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ বেলায় এসে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। আজ মঙ্গলবার বিসিবির ঘোষণা করা বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা হয়নি সাইফউদ্দিনের। ১৪ জন চূড়ান্ত হলেও একটি জায়গা নিয়ে আলোচনা ছিল। যেখানে বিবেচনা করা হয় সাইফউদ্দিন ও তানজিম হাসান সাকিবকে। শেষ পর্যন্ত তানজিমকেই বেশি যোগ্য মনে হয়েছে বিসিবির নির্বাচকদের কাছে। ১ মে আইসিসিকে পাঠানো স্কোয়াড থেকে কেবল সাইফউদ্দিনই বাদ পড়েছেন।
মিরপুর স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে দল ঘোষণার পর স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে সাইফউদ্দিনের বাদ পড়া নিয়ে। বিসিবির প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু জানান, পরখ করার পর তাকে বিশ্বকাপে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে উপযুক্ত মনে করেননি তারা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তার খেলা শেষ দুটি ম্যাচের পারফরম্যান্স বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রান খরচা থেকে শুরু করে সাইফউদ্দিনের করা কিছু বাজে ডেলিভারির কথাও উল্লেখ করেন প্রধান নির্বাচক। তার কথায় পরিষ্কার, সাউফউদ্দিন প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি। তাই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলে তেমন কিছু করতে না পারলেও একাগ্রতা, চেষ্টা, আগ্রাসন বিবেচনায় তানজিমকে নেওয়া হয়েছে দলে।
গাজী আশরাফ বলেন, 'এখানে সবাই খুব ক্লোজ লড়াই চলেছে। যে দলটা দিয়েছিলাম ৩০ তারিখে, সেটা এক প্রেক্ষাপটে দিয়েছিলাম। সেখানে দুটি চিন্তা ছিল যে বর্তমান ক্রিকেটারদের নিয়েই দল করা। আর একটা চিন্তা ছিল ইনজুরি থেকে ফেরা ক্রিকেটাররা, যেমন সাইফউদ্দিন কেমন করে তা দেখা। তো আমাদের যে আস্থার জায়গাটা। সেখানে সাইফউদ্দিনের চেয়ে তানজিম একটু এগিয়ে ছিল। এ জন্য ওকে আমরা দলে রেখেছি।'
জিম্বাবুয়ে সিরিজে নির্বাচকদের প্রত্যাশা না মেটাতে পারলেও চার ম্যাচে তাসকিন আহমেদের সমান ৮ উইকেট নেন সাইফউদ্দিন, যা সিরিজের সর্বোচ্চ। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে দুর্বার ছিলেন ডানহাতি এই পেসার, ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রানে নেন ৩ উইকেট। পরের ম্যাচে ৪ ওভারে ৩৭ রানে নেন একটি উইকেট। তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে খরুচে সাইফউদ্দিন ৪ ওভারে ৪২ রানে পান ৩ উইকেট।
সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বিবর্ণ থাকেন তিনি, ৪ ওভারে ৫৫ রানে পান একটি উইকেট। ইনিংসের ১৮তম ওভারে ১৯ রান সাইফউদ্দিন, এই ওভারের কারণেই ম্যাচ হারে বাংলাদেশ। এই ম্যাচের বোলিং, বিশেষ করে ডেথ ওভারে ১৯ রান খরচ করাতেই মূলত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেছেন তিনি।
সাইফউদ্দিনের বদলে নেওয়া তানজিম যে বল হাতে উজ্জ্বল ছিলেন, তেমনও নয়। জিম্বাবুয়ে সিরিজে দুটি ম্যাচ খেলা ২১ বছর বয়সী ডানহাতি এই তরুণ পেসার পান একটি উইকেট। সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে চট্টগ্রামে ৪ ওভারে ২৬ রানে ১ উইকেট পাওয়া তানজিম মিরপুরে চতুর্থ ম্যাচে ৪ ওখভারে ৪২ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন। পারফরম্যান্সে সাইফউদ্দিন এগিয়ে থাকার পরও তানজিমকেই বেছে নেওয়া হয়েছে।
কী কারণে এই সিদ্ধান্ত? জবাবে প্রধান নির্বাচক বলেন, 'সাকিবকে (তানজিম) শ্রীলঙ্কা সিরিজেও আমরা দেখেছি। তার একাগ্রতা, মাঠে দেওয়ার চেষ্টা সাইফউদ্দিনের চেয়ে তাকে কিছুটা এগিয়ে রেখেছে। আমরা যে কারণে সাইফউদ্দিনের দিকে তাকিয়ে ছিলাম যে ডেথ ওভারে ইয়র্কার করা… সেটা ঘরোয়া ক্রিকেটে যেমন ছিল, তার চেয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একটু ব্যতিক্রম মনে হয়েছে। তাই আমরা একটু ভিন্ন চিন্তা করেছি। ৩০ (১ মে) তারিখে যে দলটা দিয়েছিলাম সেখান থেকে একমাত্র এই জায়গাটাতেই পরিবর্তন এসেছে।'