বর্ণিল পথচলার ইতি টানছেন ভারতের ফুটবল কিংবদন্তি সুনীল ছেত্রী
ভারতের ক্রিকেটে বিরাট কোহলি বা রোহিত শর্মা যতো বড় নাম, ফুটবলে তারচেয়েও বড় নাম সুনীল ছেত্রী। দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করে আসা তারকা এই ফুটবলার যেন দেশটির ফুটবলেরই সমার্থক। তবে এই বন্ধন আর থাকছে না, অবশেষে বুটজোড়া তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ছেত্রী। অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন ৩৯ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড।
যে শহর 'অচেনা' এক ছেলেকে কিংবদন্তি হয়ে উঠতে দেখেছে, সেই কলকাতাতেই নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলতে চলেছেন ছেত্রি। আগামী ৬ জুন কলকাতায় কুয়েতের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলবে ভারত। দেশের হয়ে এটাই হবে ছেত্রির শেষ ম্যাচ। বৃহস্পতিবার এক ভিডিও বার্তায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তবে ক্লাব ফুবল খেলে যাবেন ছেত্রী।
অবসরের ঘোষণায় ছেত্রী বলেছেন, 'গত ১৯ বছরের স্মৃতি ও অনুভূতি বলতে গেলে, দায়িত্বের চাপ ও দারুণ আনন্দের এক সমন্বয় ছিল। ব্যক্তিগতভাবে কখনোই ভাবিনি যে দেশের হয়ে এতোগুলো ম্যাচ খেলেছি বা এই করেছি সেই করেছি, ভালো বা খারাপ করেছি। তবে এখন আমার এসব মনে হচ্ছে। গত এক-দেড়-দুই মাসে এসব ভাবনায় এনেছে, যা খুবই অদ্ভুত। এ রকম একটা সিদ্ধান্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি বলেই হয়তো এসব ব্যাপার ভাবনায় আসছিল। পরের ম্যাচটিই আমার শেষ ম্যাচ।'
দেশের জার্সি গায়ে চাপিয়ে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারাটা ছেত্রীর কাছে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণার, যা তার কাছে গর্বেরও। এই কারণেই দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে জাতীয় দলে খেলতে পেরেছেন বলে জানান তিনি। ছেত্রীর ভাষায়, 'এরপর কি আমার কষ্ট লাগবে? অবশ্যই। সামনের প্রতিটি দিনই কি আমার খারাপ লাগবে? হ্যাঁ। এই ভ্রমণ আমি মিস করব, ২০ দিন ট্রেনিংয়ের পরই সব শেষ, এ রকম অনুভুতি হচ্ছে কি না? হ্যাঁ, হচ্ছে। আমার ভেতরে যে শিশুটি আছে, সে তো দেশের হয়ে খেলার সুযোগে কখনোই থামতে চায় না।'
ভারতের ফুটবল ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা আরও বলেন, 'সত্যিকার অর্থেই আমার বিচরণ ছিল স্বপ্নের জগতে এবং দেশের হয়ে খেলতে পারার ধারে কাছেও আর কিছু নেই। তো আমার ভেতরের সেই শিশুটি লড়াই চালিয়ে গেছে এং ভবিষ্যতেও ভেতরে ভেতরে লড়াইটা করবে। তবে একজন বোধসম্পন্ন, পরিণত ফুটবলার হিসেবে, আমার ভেতরের মানুষটি অনুভব করেছে, সময়টা শেষ। যদিও সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সহজ ছিল না।'
২০০৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিষেক হয় ছেত্রীর। অভিষেক পর্বটা গোল করে রাঙিয়ে রাখেন তিনি। এরপর যতো সময় গেছে, ততোই নিজেকে দলের অপরিহার্য হিসেবে প্রমাণ করেছেন তিনি। দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন, করেছেন সবচেয়ে বেশি গোলও। দীর্ঘ সফরে ১৫০ ম্যাচে ছেত্রীর গোল ৯৪টি।
ভারতের পক্ষে তো সর্বোচ্চই, বর্তমানে খেলা ফুটবলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায়ও ছেত্রী তিন নম্বরে। তার চেয়ে বেশি গোল করেছেন কেবল ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসি। তবে কেবল বর্তমানে খেলা ফুটবলারদের তালিকাতেই নন, ফুটবল ইতিহাসেই জাতীয় দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল করার তালিকায় তিনি চার নম্বরে।
ছেত্রীর চেয়ে বেশি গোল আছে পর্তুগিজ সুপারস্টার রোনালদো (১২৮), ইরানের আলি দাইয়ি (১০৮) ও আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকর মেসির (১০৬)। দীর্ঘ সময় ধরে সাফল্যের মালা করে আসা ছেত্রী স্বীকৃতিও পেয়েছেন। ২০১১ সালে অর্জুন পুরস্কার পান তিনি। ২০১৯ সালে মেলে পদ্মশ্রী। দুই বছর পর ২০২১ সালে প্রথম ভারতীয় ফুটবলার হিসেবে জেতেন খেলরত্ন পুরস্কার, এটা ভারতের সর্বোচ্চ ক্রীড়া পুরস্কার।
ক্লাব ফুটবলে মোহন বাগানের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন ছেত্রী, এরপর পর ভারতীয় ফুটবলের শীর্ষ অনেক ক্লাবে খেলেছেন তিনি। ২০১৬ সাল থেকে বেঙ্গালুরু এফসির হয়ে খেলে আসছেন তারকা এই ফুটবলার। ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে খেলার সুযোগ তিনি, ডাক পান যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব কানসাস সিটি উইজার্ডে। ২০১২ সালে সুযোগ পান পর্তুগালের ক্লাব স্পোর্টিং সিপির রিজার্ভ দলে।