হর্ষিত কেন শিবমের বদলি; ভারতের ক্রিকেটার বদলে প্রশ্নের ঝড়, ক্ষুব্ধ বাটলার
'কনকাশন সাব' হিসেবে কোনো ক্রিকেটারকে নিতে হলে আঘাত পাওয়া ক্রিকেটারের মতোই হতে হবে বদলি ক্রিকেটারকে। অর্থাৎ, ব্যাটসম্যানের বদলে ব্যাটসম্যান, অলরাউন্ডারের বদলে অলরাউন্ডার কিংবা বোলারের বদলে বোলার। আইসিসির নিয়মে এটাই বলা। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে অলরাউন্ডার শিবম দুবের কনকাশন হিসেবে ভারত মাঠে নামায় পেসার হর্ষিত রানাকে। বদলি হিসেবে মাঠে নেমে ৩ উইকেটে নেওয়া হর্ষিত ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেন। এ নিয়ে চরম সমালোচনা তৈরি হয়েছে, সবখানে প্রশ্নের ঝড়। এ নিয়ে ক্ষোভ ঝেরেছেন ইংল্যান্ডের অধিনায়কসহ দেশটির সাবেক ক্রিকেটাররা।
অনেকের অভিযোগ, আইসিসির নিয়মের তোয়াক্কা না করেই অলরাউন্ডারের পরিবর্তে একজন জেনুইন পেসারকে নামিয়ে দিয়েছে ভারত। অনেকে আবার কটাক্ষ করে বলছেন, আইসিসির 'কনকাশন সাব' নিয়মকে আইপিএলের 'ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার' নিয়ম বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, এটা হতে হবে 'লাইক ফর লাইক'। অর্থাৎ, শিবমের পরিবর্তে কাউকে কনকাশন সাব করতে হলে বদলি খেলোয়াড়কে অলরাউন্ডারই হতে হতো। সেটা না হওয়াতেই শুরু হয়েছে বিতর্কের ঝড়।
পুনেতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে ৭৯ রানে ৫ উইকেট হারায় ভারত, দলকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন শিবম। ষষ্ঠ উইকেটে হার্দিক পান্ডিয়ার সঙ্গে ৪৫ বলে ৮৭ রানের জুটি গড়ার পথে ৩৪ বলে ৫৩ রানের ইনিংস খেলেন শিবম। ব্যটিংয়ের সময় বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের হেলমেটে একটি বল লেগেছিল। পরে ফিল্ডিংয়ে নামেননি তিনি, 'কনকাশন বদলি' হিসেবে নামেন হর্ষিত। ব্যাপারটি দাঁড়িয়ে যায়, ব্যাটসম্যানের বদলি হিসেবে নামেন একজন বোলার। যিনি বল হাতে অবদান রাখেন, ভারত ম্যাচ জেতে ১৫ রানে।
কারণ, শিমবকে অলরাউন্ডার বলা হলেও মূলত ভারত দলে তার ভূমিকা ব্যাটসম্যান হিসেবে। বড়জোড় তাকে ব্যাটিং অলরাউন্ডার বলা সম্ভব। ৩৪ ম্যাচের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ১১ ম্যাচে বোলিং পাননি তিনি। ৪ ওভার পুরো করেছেন মাত্র দুই ম্যাচে। স্কোয়াডে তার মতো অলরাউন্ডার না থাকলে ভারত বিছুটা ছাড় পেতে পারতো। কিন্তু একাদশে ছিলেন রমনদিপ সিং। যিনি শিবমের মতোই ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি অনিয়মিতভাবে বোলিং করেন। এরপরও রামদিপকে না নিয়ে ভারত হর্ষিতকে কনকাশন সাব করে। বদলি হিসেবে নেমে ৪ ওভারে ৩৩ রান খরচায় ৩টি উইকেট নেন তিনি।
ম্যাচের পর বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বাটলার। ইংল্যান্ড অধিনায়ক বলেন, 'এটা অবশ্যই 'লাইক-ফর-লাইক' বদলি নয়। আমরা এটার সঙ্গে একমত নই। হয় শিবম দুবের বলের গতি ঘণ্টায় ২৫ মাইল বেড়ে গেছে, অথবা হর্ষিতের ব্যাটিংয়ে আচমকা অনেক উন্নতি হয়েছে। এটা ছাড়া এমন হওয়ার কথা নয়। এসব খেলারই অংশ। আমাদের উচিত ছিল ম্যাচটি জেতা। তবে এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমরা একমত নই।'
এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আম্পায়াররা ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের সঙ্গে আলোচনা করেননি বলে জানান বাটলার। তিনি বলেন, 'আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। আমি ব্যাটিংয়ে নামার সময় এটাই ভাবছিলাম, হর্ষিতকে কার বদলে নেওয়া হলো। তারা জানালেন, এটা কনকাশন বদলি। অবশ্যই সেটায় আমি দ্বিমত জানাই। এটা মোটেও 'লাইক-ফর-লাইক' বদলি নয়। তারা জানান, ম্যাচ রেফারি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমাদের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি বা এই সিদ্ধান্তের প্রক্রিয়ায় ছিলাম না। তবে ব্যাপারটি পরিষ্কার হতে জাভাগালকে (ম্যাচ রেফারি) কিছু প্রশ্ন করতে হবে আমাদের।'
বদলির সময়ই ধারাভাষ্যে থাকা ইংল্যান্ডের সাবেক ব্যাটসম্যান কেভিন পিটারসেন ও নিক রাইট বিস্ময় প্রকাশ করেন। পিটারসেন বলেন, 'সে (হর্ষিত) তো শিবম দুবের লাইক-ফর-লাইক বদলি হতে পারে না। বিশ্বের যে কাউকে জিজ্ঞেস করুন, তারা একই কথা বলবে। দুবে তো জেনুইন পেসার নয়, রানা জেনুইন পেসার।' নিক রাইটও একই রকমের মন্তব্য করেন।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ ঝেরেছেন ইংল্যান্ডের দুই সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন ও অ্যালিস্টার কুকও। ভন বলেছেন, 'কীভাবে একজন জেনুইন পেসার একজন ব্যাটসম্যানের পরিবর্তে নামতে পারে! যে কিনা পার্ট-টাইম বোলিং করে!' একই রকম বিস্ময় প্রকাশ করেন কুক। বিষয়টি বুঝতে পারেননি জানিয়ে সাবেক এই ব্যাটসম্যান বলেন, 'আমি বুঝতে পারলাম না যে, কীভাবে শিবম দুবের জায়গায় কনকাশন সাব হিসেবে হর্ষিত রানাকে আসতে দেওয়া হলো?'