ভারতে খাবারে থুতু ও শাস্তি বিতর্ক: কর্মী যাচাই, নাম লিখে রাখা, বাধ্যতামূলক হচ্ছে সিসিটিভি!
চলতি মাসে ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) শাসিত দুটি রাজ্য উত্তরাখণ্ড ও উত্তর প্রদেশে থুতু, প্রস্রাব ও ময়লা দিয়ে খাবার দূষিত করলে মোটা অঙ্কের জরিমানা ও কারাদণ্ডের ঘোষণা দেওয়া হয়। খবর বিবিসির
উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তরাখণ্ড দোষীদের এক লাখ রুপি (১,১৯০ ডলার; ৯২০ পাউন্ড) পর্যন্ত জরিমানা করার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে প্রতিবেশী উত্তর প্রদেশ এই সমস্যা সমাধানের জন্য কঠোর আইন প্রবর্তন করতে চলেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্থানীয় স্টল ও রেস্তোরাঁয় বিক্রেতাদের খাবারে থুতু দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, একজন গৃহকর্মী তার প্রস্তুত করা খাবারে প্রস্রাব মেশাচ্ছেন।
ভিডিওগুলো জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। অনেকে এই রাজ্যগুলোতে খাদ্য সুরক্ষা সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কিছু ভিডিও আবার মুসলমানদের লক্ষ্য করে দোষারোপ করার হাতিয়ার হয়ে উঠেছে, যা পরে ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইটগুলো ভুয়া বলে বাতিল করেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে অভিযোগ করেছিলেন যে নারীটি খাবারে মূত্র মিশিয়েছেন, তিনি মুসলমান। তবে পুলিশ পরে তাকে হিন্দু বলে শনাক্ত করেছে বলে তারা জানিয়েছে।
তবে বিক্রেতাদের খাবারে থুতু দেওয়ার ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই মানুষ হতবাক ও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এর পরেই উত্তরাখণ্ড অপরাধীদের মোটা অঙ্কের জরিমানা ঘোষণা করে এবং পুলিশকে হোটেল কর্মীদের যাচাই করা এবং রান্নাঘরে সিসিটিভি লাগানো বাধ্যতামূলক করে।
অন্যদিকে, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন, এই ধরনের ঘটনা বন্ধ করতে পুলিশের উচিত প্রত্যেক কর্মীকে যাচাই করা। খাবারের কেন্দ্রগুলোতে মালিকের নাম লেখে রাখা, রাঁধুনি এবং ওয়েটারদের মাস্ক ও গ্লাভস পরা এবং হোটেল ও রেস্তোঁরাগুলোতে সিসিটিভি লাগানো বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, আদিত্যনাথ দুটি অধ্যাদেশ জারির পরিকল্পনা করছেন। এতে খাবারে থুতু দিলে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হতে পারে।
কর্মকর্তারা বলছেন, এসব বন্ধের জন্য কঠোর আইন প্রয়োজন এবং এগুলোর লক্ষ্যে খাবারের স্টল বা দোকানোর চারপাশে অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসে লিপ্ত হওয়া থেকে মানুষকে বিরত রাখা।
তবে বিরোধী দলীয় নেতা এবং আইন বিশেষজ্ঞরা এই আইনগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তারা অভিযোগ করেছেন, একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে হেয় করার জন্য এসব আইনের অপব্যবহার করা হতে পারে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংবাদপত্র উত্তর প্রদেশে প্রস্তাবিত আইনের সমালোচনা করে বলেছে, এসব আইন সংখ্যাগরিষ্ঠের বিশুদ্ধতা ও দূষণের ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করতে এবং ইতোমধ্যে অনিরাপদ সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়। খাদ্য এবং খাদ্যাভাস সাংস্কৃতিকভাবে বৈচিত্র্যময় ভারতে একটি সংবেদনশীল বিষয়। কারণ এগুলো ধর্ম এবং দেশের ঐতিহ্যবাহী বর্ণ ব্যবস্থার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। খাদ্যকে ঘিরে নিয়ম এবং নিষিদ্ধতা কখনও কখনও ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে সংঘর্ষের কারণ হয়ে ওঠে। তাই 'খাদ্য সুরক্ষা' ধারণাটিও ধর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে, এটি কখনও কখনও বিশেষ জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
খাদ্য সুরক্ষা ভারতে একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। দেশটির খাদ্য সুরক্ষা ও মান কর্তৃপক্ষের (এফএসএসএআই) আনুমানিক ধারণা, অনিরাপদ খাদ্যের কারণে দেশটিতে বছরে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন মানুষ সংক্রমণের শিকার হয় এবং ৪ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে।
বিশেষজ্ঞরা ভারতে দুর্বল খাদ্য নিরাপত্তার বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে- খাদ্য সুরক্ষা আইনের অপর্যাপ্ত প্রয়োগ, সচেতনতার অভাব, অস্বাস্থ্যকর রান্নাঘর, নোংরা বাসনপত্র, দূষিত পানি এবং অনুপযুক্ত পরিবহন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রভৃতি।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি