চিটাগংকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার বিপিএল চ্যাম্পিয়ন তামিমের বরিশাল
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/08/barishal.jpg)
কানায় কানায় পূর্ণ গ্যালারি, বেশিরভাগ জায়গাজুড়ে বয়ে যাচ্ছিল লাল সমুদ্রের ঢেউ। গ্যালারিতে চোখ রাখলেই দেখা যাচ্ছিল ফরচুন বরিশালের সমর্থকদের উন্মাদনা। এর মাঝেও ওঠে নীল জোয়ার, খাজা নাফে ও শেষ পর্যন্ত ব্যাট হাতে দাপট দেখানো পারভেজ হোসেন ইমনের ব্যাটে বড় সংগ্রহ গড়ে চিটাগং কিংস। জবাবে ম্যাচসেরা তামিম ইকবালের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে অনেকটা পথ পাড়ি দেন কাইল মেয়ার্স। এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোহাম্মদ নবী ব্যর্থ হলে বাড়ে শঙ্কা। তবে কাণ্ডারী হয়ে সব শঙ্কা উড়িয়ে দলকে আনন্দপুরীতে পৌঁছে দেন রিশাদ হোসেন। রেকর্ড গড়া জয়ে শিরোপা উৎসবে মাতে বরিশাল।
শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ফাইনালে চিটাগং কিংসকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে ফরচুন বরিশাল। টানা দ্বিতীয়বারের মতো আসরটির শিরোপা জিতলো তামিমের দল। এক যুগ পর বিপিএলে ফিরে আরও একবার নিশ্বাস দূরত্বে গিয়েও সোনালী শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হলো না চিটাগংয়ের। ২০১৩ বিপিএলের ফাইনাল খেলে দলটি, সেবার ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হার মানে তারা। এরপর মাঝে আটটি আসরে অংশ নেয়নি চিটাগং কিংস।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে চিটাগং কিংস। দুই ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন ও খাজা নাফের ব্যাটে দুর্বার শুরু হয় তাদের। দাপুটে ব্যাটিংয়ে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া এই দুই ব্যাটসম্যান বিপিএলের ফাইনালে উদ্বোধনীতে জুটিতে রেকর্ড রান তোলেন। পরে গ্রাহাম ক্লার্ক ঝড়ো ইনিংস খেললে ৩ উইকেটে ১৯৪ রান তোলে চিটাগং। জবাবে তামিমের ঝড়ো ইনিংসের পর মেয়ার্সের ব্যাটে ঠিক পথে থাকা করিশালকে শেষ ওভারে রোমাঞ্চকর জয় এনে দেন রিশাদ। বিপিএল ফাইনালের ইতিহাসে এটা সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। টানা দুবার বরিশালের শিরোপা জয়ে নেতৃত্ব দিয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজা ও ইমরুল কায়েসের পাশে নিজের নামটি বসালেন তামিম। অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি ও ইমরুলও টানা দুটি করে শিরোপা জেতেন।
লক্ষ্য তাড়ায় ফরচুন বরিশালের শুরুটাও হয় দুর্দান্ত। তাওহিদ হৃদয়কে এক পাশে রেখে চারের মালা গেঁথে ঝড় বইয়ে দেন তামিম ইকবাল। অধিনায়কের ব্যাটে পাওয়ার প্লের ৬ ওভার থেকে ৫৭ রান পায় বরিশাল। নবম ওভারে গিয়ে গিয়ে তামিম ঝড়। চিটাগং স্পিনার আরাফাত সানিকে ছক্কা মেরে ২৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন বরিশাল অধিনায়ক। এরপর আর বেশি পথ পাড়ি দেওয়া হয়নি তার। ২৯ বলে ৯টি চার একটি ছক্কায় ৫৪ রান করে আউট হন ম্যাচসেরা তামিম।
অধিনায়ককে হারাতেই বিপাকে পড়তে হয় বরিশালকে, একই ওভারে ফিরে যান ডেভিড মালান। দেখেশুনে এগোনো তাওহিদ হৃদয়ও কিছুক্ষণ পর থামলে আরও চাপ বাড়ে তাদের। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ২৮ বলে ৩টি চারে ৩২ রান করেন। পরের জুটিটা জমেছিল, কাইল মেয়ার্স ও মুশফিকুর রহিম দাপুটে ব্যাটিং শুরু করেন। যদিও এই জুটির পথচলা বড় হয়নি। ১৪ বলে ৩৪ রানে থামে এই জুটি। ৯ বলে ৩টি চারে ১৬ রান করে ফিরে যান মুশফিক।
পঞ্চম উইকেটেও জুটি গড়ে ওঠে, দলকে জয়ের পথে নিয়ে যেতে থাকেন মেয়ার্স ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। জুটি বললেও বরিশালের রানচাকা সচল রাখেন মূলত মেয়ার্স। ২৯ বলে ৪২ রানের জুটিতে মেয়ার্সই করেন ২৮ রান। ১৮তম ওভারে গিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন চিটাগংয়ের পেসার শরিফুল ইসলাম। ২৮ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৪৬ রান করা মেয়ার্স ও মাহমুদউল্লাহকে এই ওভারে ফিরিয়ে দেন তিনি। ১২ বলে জয়ের জন্য বরিশালের প্রয়োজন দাঁড়ায় ২০ রান। এই ওভারে রিশাদ একটি ছক্কা মারেন, রান আসে মোট ১২ রান।
১৯তম ওভারের শেষ বলে মোহাম্মদ নবী আউট হয়ে গেলে সব দায়িত্ব গিয়ে পড়ে রিশাদের ওপর। জিততে ৬ বলে বরিশালের দরকার ছিল ৮ রান, হুসেইন তালাতের করা প্রথম বলেই ছক্কা মারেন রিশাদ, পরের বলে নেন এক রান। তানভীর ইসলাম একটি বল ডট দেন, চতুর্থ বলটি তালাত ওয়াইড করতেই শিরোপা উৎসবে মেতে ওঠে বরিশাল। দলটির জয়ের নায়ক বনে যাওয়া রিশাদ ৬ বলে ২টি ছক্কায় অপরাজিত ১৮ রান করেন। শরিফুল ৪ ওভারে ৩৪ রানে ৪টি উইকেট নেন। নাঈম ইসলাম ২টি ও বিনুরা ফার্নান্দো একটি উইকেট পান।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নামা চিটাগং তেড়েফুঁরে শুরু করে। নাফেকে এক পাশে রেখে ঝড় তোলেন ইমন। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নাফের ব্যাটেরও ধার বাড়ে। বরিশালের বোলারদের শাসন করে দারুণ সব শটে দ্রুত রান তুলে যেতে থাকেন তারা। এ দুজনের ব্যাটে পাওয়ার প্লের ৬ ওভার থেকে চিটাগংও ৫৭ রান পায়। দলকে উড়ন্ত শুরু এনে দিয়ে মারকুটে ব্যাটিং-ই করে যেতে থাকেন ইমন-নাফে।
১১ ওভারে দলের স্কোরকার্ডে ১০০ রান জমা করেন এ দুজন। ১৩তম ওভারে গিয়ে ভাঙে এই জুটি, এর আগে ৭৬ বলে ১২১ রান যোগ করেন তারা। বিপিএলের ফাইনালে উদ্বোধনী জুটিতে এটাই সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। আগের সর্বোচ্চ ছিল ৭৬, গত বিপিএলের ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে জুটিটি গড়েন তামিম ও মেহেদী হাসান। এবারে বরিশালের বিপক্ষেই হলো নতুন রেকর্ড।
দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে হাফ সেঞ্চুরি করা নাফে আজও ছিলেন অসাধারণ। পাকিস্তানি এই ওপেনার ৪৪ বলে ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৬৬ রান করেন। চিটাগংয়ের দ্বিতীয় জুটিটাও জমে বেশ। এই জুটিতেও শাসন করে বরিশাল। ৪০ বলে ৭০ রানের জুটি গড়েন ইমন ও ক্লার্ক। চিটাগংয়ের পক্ষে আসরের সর্বোচ্চ রান করা ইংলিশ ব্যাটসম্যান ক্লার্ক ২৩ বলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ঝড়ো ৪৪ রান করেন।
ইনিংস উদ্বোধন করা নামা ইমনকে ফেরাতেই পারিন বরিশাল। শেষ বল পর্যন্ত উইকেটে থাকেন তিনি। বাঁহাতি এই ওপেনার থাকার পরও অবশ্য শেষ ওভারে রান তুলতে পারেনি চিটাগং। এই ওভারে স্ট্রাইকই পাননি ইমন, ৬ রানের ওভারে দল হারায় ২ উইকেট। ৪৯ বলে ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৭৮ রানে অপরাজিত থাকেন ইমন। বরিশালের হয়ে একটি করে উইকেট নেন মোহাম্মদ আলী ও এবাদত হোসেন। দলটির স্পিনার তানভীর ইসলামের ওপর দিয়ে ঝড় যায়, ২ ওভারে ৪০ রান দেন তিনি।