জ্যাকস-হাওয়েলের ব্যাটিং তাণ্ডবের পর মৃত্যুঞ্জয়ের হ্যাটট্রিক, চট্টগ্রামের রোমাঞ্চকর জয়
আগে ব্যাটিং করতে নেমে তাণ্ডব চালালেন উইল জ্যাকস, বেনি হাওয়েলরা। তাতে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স চড়লো রান পাহাড়ে। বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সিলেট সানরাইজার্সও চার-ছক্কার ফুলঝুরি সাজালো। কলিন ইনগ্রাম হাফ সেঞ্চুরি করে থামলেও এনামুল হক বিজয় মারকাটারি ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকলেন।
যদিও ১৮তম ওভারে চোখের পলকে সব পাল্টে দিলেন চট্টগ্রামের মৃতুঞ্জয় চৌধুরী। বিপিএলে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নেমেই হ্যাটট্রিক করে বসলেন বাঁহাতি এই পেসার। একে একে বিজয়, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও রবি বোপারাকে ফিরিয়ে দিলেন মৃত্যুঞ্জয়। আশা জাগিয়েও পারলো না সিলেট। রান বন্যার ম্যাচে সিলেটকে ১৬ রানে হারালো চট্টগ্রাম। পাঁচ ম্যাচে তিন জয়ে ছয় পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে উঠলো চট্টগ্রাম।
শনিবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। উইল জ্যাকসের রেকর্ড গড়া হাফ সেঞ্চুরি এবং আফিফ হোসেন, সাব্বির রহমান ও বেনি হাওয়েলের দারুণ ব্যাটিংয়ে ৫ উইকেটে ২০২ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে স্বাগতিক দলটি। জবাবে এনামুল হক বিজয় ও কলিন ইনগ্রামের ব্যাটে লড়াই করলেও শেষ পর্যন্ত জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে পারেনি। তাদের ইনিংস শেষ হয় ১৮৬ রানে।
বিপিএলের ইতিহাসের ষষ্ঠ ও বাংলাদেশের তৃতীয় বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করলেন ম্যাচসেরা মৃত্যুঞ্জয়। তার আগে বিপিএলের হ্যাটট্রিক করেছেন মোহাম্মদ শামি (২০১২), আল-আমিন হোসেন (২০১৫), আলিস আল ইসলাম (২০১৯), ওয়াহাব রিয়াজ (২০১৯) ও আন্দ্রে রাসেল (২০১৯)। বিপিএলের অভিষেকেই হ্যাটট্রিক করা দ্বিতীয় বোলার মৃত্যুঞ্জয়। প্রথম বোলার হিসেবে বিপিএলের অভিষেকে হ্যাটট্রিক করেন আলিস।
২০৩ রানের বিশাল লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই দিক হারায় সিলেট। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা লেন্ডল সিমন্স এদিন ৯ রান করেই বিদায় নেন। শুরুর চাপ সহজেই সামলেন নেন বিজয় ও ইনগ্রাম। চট্টগ্রামের বোলারদের ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ১১২ রানের জুটি গড়ে তোলেন তারা। ৩৭ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫০ রান করা ইনগ্রামের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি।
পরের ওভারেই ফিরে যান আলাউদ্দিন বাবু। অন্য প্রান্তে ভাঙন শুরু হলেও অবিচল ছিলেন চোখ ধাঁধানো ব্যাটিং করতে থাকা বিজয়। রবি বোপারাকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি। হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর আরও দ্রুত ব্যাট চালানো বিজয় দলকে জয়ের স্বপ্নই দেখাচ্ছিলেন। কিন্তু ১৮তম ওভারেই সব শেষ!
ওভারটির শেষ তিন বলে বিজয়, মোসাদ্দেক ও বোপারাকে ফিরিয়ে সিলেটের পথ ভুলিয়ে দেন মৃত্যুঞ্জয়। বাঁহাতি এই পেসারের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৪৭ বলে ৯টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৭৮ রানের ঝলমলে এক ইনিংস খেলেন বিজয়। বোপারা করেন ১৬ রান। ৪ ওভারে ৩৩ রান খরচায় মৃত্যুঞ্জয়ের শিকার ৩ উইকেট। এ ছাড়া নাসুম আহমেদ ২টি ও মেহেদী হাসান মিরাজ একটি উইকেট পান।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ঝড় তোলেন চট্টগ্রামের ইংলিশ ওপেনার উইল জ্যাকস। সানজামুল ইসলামের করা প্রথম ওভারে প্রথম বাউন্ডারি মারেন তিনি। তাসকিন আহমেদের করা পরের ওভারে এক চার ও ইনিংসের প্রথম ছক্কা মারেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। সানজামুলের করা পরের ওভারে দুই ছক্কায় তুলে নেন ১৫ রান।
চতুর্থ ওভারে বোলিংয়ে এসে জ্যাকসের তিন বলে তিন চার হজম করেন আলাউদ্দিন বাবু। এই ওভারেই চট্টগ্রামের দলীয় পঞ্চাশ পূর্ণ হয়। পঞ্চম ওভারে আবারও আক্রমণে আসেন তাসকিন, দ্বিতীয় বলেই বাউন্ডারি মারেন জ্যাকস। এরপর বাইরে থেকে আসা ধোঁয়ার কারণে কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ থাকে।
খেলা শুরু হওয়ার পর প্রথম বলেই চার মেরে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন জ্যাকস। পঞ্চাশে পৌঁছাতে মাত্র ১৮ বল নেন তিনি। বিপিএলের ইতিহাসে এটা দ্বিতীয় দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড। দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড পাকিস্তানের আহমেদ শেহজাদের দখলে, ১৬ বলে ৫০ ছুঁয়েছিলেন তিনি।
হাফ সেঞ্চুরি করেই থামতে হয় জ্যাকসকে। তাসকিনের বলে স্কুপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে লেন্ডল সিমন্সের হাতে ধরা পড়েন তিনি। এর আগে ১৯ বলে ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন তিনি।
জ্যাকসের ব্যাটিং তাণ্ডবে পাওয়ার প্লেতে ৭১ রান পায় চট্টগ্রাম। যদিও আরেক ওপেনার কেনার লুইস ১২ বলে করেন মাত্র ৮ রান। এরপর সাব্বির রহমান ও আফিফ হোসেন ধ্রুবর কারণে কমে আসে রানের গতি। এ দুজন ৭.৩ ওভারে মাত্র ৪৭ রান যোগ করেন। দলীয় ১১৩ রানের মাথায় আউট হন সাব্বির। ২৯ বলে ৩১ রান করেন তিনি।
সাব্বিরের বিদায়ের পর রান তোলার গতি বাড়ান আফিফ। মুক্তার আলীর করা ১৫তম ওভারে পরপর দুই বলে ছক্কা ও চার মারেন আফিফ। পরের ওভারে রবি বোপারার বলেও বিশাল ছক্কা মারেন তিনি। ২৮ বলে ৩৮ রান করে বিদায় নেন আফিফ।
নতুন অধিনায়ক নাইম ইসলাম কিছু করতে পারেননি, ৮ রান করে ফিরে যান তিনি। বিপিএলে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা বেনি হাওয়েল ২১ বলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় অপরাজিত ৪১ রান করেন। দুই ছক্কায় ৪ বলে ১৩ রান করেন অধিনায়কত্ব হারানো মেহেদী হাসান মিরাজ। সিলেটের পক্ষে একটি করে উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ, সোহাগ গাজী, মুক্তার আলী, রবি বোপারা ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।