ছুটি আদায় করে ছাড়লেন সাকিব, যাচ্ছেন না দক্ষিণ আফ্রিকা
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে আলোচনা করেই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের দল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু দল ঘোষণার তিনদিন পর সাকিব জানান, সফরটিতে যেতে চান না তিনি। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডারের মতে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার মতো মানসিক-শারীরিক অবস্থা তার নেই। এরপর শুরু আলোচনা, সমালোচনার ঝড়।
পরের দিনই বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন কড়া ভাষায় সাকিবের বক্তব্যের সমালোচনা করেন। মঙ্গলবার একই সুরে কথা বলেন জাতীয় দলের টিম ডিরেক্টর ও বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন। সাকিব প্রসঙ্গে কথা বলেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস। টানা তিনদিন অনেক জল ঘোলা হওয়ার পর বুধবার এলো সিদ্ধান্ত, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাচ্ছেন না সাকিব। অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার তার আগের সিদ্ধান্তেই অনড় থাকায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) এই পদক্ষেপ।
আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের ক্রিকেট থেকে তাকে বিশ্রাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে বিসিবি। বুধবার বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কর্মস্থল বেক্সিমকোতে বৈঠকে বসেন বিসিবির কর্তারা। ওই বৈঠকের মাঝেই দুবাইয়ে থাকা সাকিবের সঙ্গে কথা বলা হয় বিসিবির পক্ষ থেকে। এরপর নেওয়া হয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। বৈঠক শেষে সাকিবকে বিশ্রামের ঘোষণা দেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস।
বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান বলেন, 'সাকিব দুবাই যাওয়ার আগে আমাকে বলেছিল, সে শারীরিক ও মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত বিপর্যস্ত। সে আমাকে ফোন করেছিল এবং বলেছে যে এই মুহূর্তে কোনো ধরনের ক্রিকেট সে উপভোগ করছে না। তো আমি বলেছি, মাত্র আফগানিস্তান সিরিজ শেষ করেছো, এ জন্য এটা হতে পারে। তুমি দুই দিন সময় নাও, চিন্তা করো। তারপর জানাও। তো আজ দুই দিন শেষ হওয়াতে আমি নিজে ফোন করে তার কাছ থেকে সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছি, তোমার পরিকল্পনা বলো। সে বলল, 'এখনও মনে করি শারীরিক ও মানসিকভাবে আমি আনফিট।' সে জন্য সে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যেতে চাচ্ছে না। সে এটা স্কিপ করতে চাচ্ছে।'
'এরপর আমরা আমাদের বোর্ড সভাপতির সাথে বসেছি, সিইও ছিল, বোর্ড পরিচালকও ছিল কয়েকজন। তো সাকিবের নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা করে আমরা সিদ্ধান্ত দিয়েছি, যেহেতু সে শারীরিক ও মানসিকভাবে আনফিট বলছে, তো তাকে বিশ্রাম দেওয়া দরকার। এ জন্য আমরা তাকে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের ক্রিকেট থেকে বিশ্রাম দেওয়ার জন্য সম্মতি দিয়েছি। সে ওই ৩০ তারিখ পর্যন্ত সর ফরম্যাটের ক্রিকেট থেকে পুরোপুরি বিশ্রামে থাকবে।' যোগ করেন জালাল ইউনুস।
আইপিএলে খেলতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট খেলবেন না বলে জানান সাকিব, নেন ছুটিও। কিন্তু আইপিএলে দল না পাওয়ায় তার খেলা নিয়ে শুরু হয় নতুন আলোচনা। সাকিবের সঙ্গে কথা বলে তাকে নিয়েই ওয়ানডে ও টেস্ট দল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তিন দিন পরে সাকিব জানান, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার মতো মানসিক ও শারীরিক অবস্থায় তিনি নেই। এই অবস্থায় গেলে দলের ক্ষতি হবে।
ব্যক্তিগত কাজে দুবাই যাওয়ার আগে রোববার বিমানবন্দরে সাকিব বলেন, 'দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ নিয়ে যেটা বলতে হয়, মানসিক ও শারীরিক যে অবস্থায় আছি, আমার কাছে মনে হয় না আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা সম্ভব খুব একটা। এই কারণে আমার মনে হয়, যদি আমি একটা বিরতি পাই, আমি যদি ওই আগ্রহটা ফিরে পাই, তাহলে আমার খেলাটা সহজ হবে।'
'আফগানিস্তান সিরিজে আমার কাছে মনে হয়েছে আমি একজন যাত্রী, যেটা আমি হয়ে কখনই হয়ে থাকতে চাই না। আমি খেলাটা একদমই উপভোগ করতে পারিনি। পুরোটা সিরিজটাই, টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে। আমি চেষ্টা করেছি, কিন্তু হয়নি। আমার মনে হয় না এ রকম মন মানসিকতা নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ খেলাটা ঠিক হবে।' যোগ করেন সাকিব।