আব্রামোভিচ বাদ, এখন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী স্পোর্টস ক্লাব মালিক কারা?
রোমান আব্রামোভিচের জন্য এ বছরটা খুব ভালো শুরু হয়নি। প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব চেলসি'র 'মালিক' থেকে খুব শীঘ্রই 'সাবেক মালিক'-এ পরিণত হতে যাচ্ছেন তিনি। ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণের পর বিশ্বব্যাপী রাশিয়ান অলিগার্কদের সম্পদ জব্দের হিড়িক পড়ে যায়, আব্রামোভিচও এ ধাক্কা থেকে বাদ যাননি।
২০০৩ সালে ১৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে চেলসিকে কিনেছিলেন আব্রামোভিচ। ক্লাবটি এ সময়ে এসে তিন বিলিয়ন ডলার অর্থমূল্যে পৌঁছেছে (যদিও প্রচুর দেনাও আছে)। এর আগে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন চেলসিকে বিক্রি করে দিয়ে সে আয় দাতব্য কাজে দান করে দেবেন। তবে তার আগেই ব্রিটিশ সরকার আব্রামোভিচের অন্যান্য সম্পদের মতো ক্লাবটিও বাজেয়াপ্ত করেছে।
এর ফলে কোনো ক্রীড়া দলের বিলিয়নিয়ার মালিকের ক্লাব থেকে ছিটকে গেলেন আব্রামোভিচ৷ গত ছয় বছরে এ প্রথমবারের মতো ধনী মালিকের তালিকায় তার নাম উঠলো না। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ফোর্বস-এর হিসাব অনুযায়ী ১৫ বিলিয়ন ডলারের মালিক ছিলেন আব্রামোভিচ। বর্তমানে তার সম্পদ কমে দাঁড়িয়েছে ৬.৯ বিলিয়ন ডলারে।
তবে কেবল আব্রামোভিচ নন যার সম্পদের পরিমাণ কমছে, তীব্র মুদ্রাস্ফীতি ও অস্থির বাজারের কারণে আরও অনেক ক্রীড়াদল মালিকের সম্পদ হ্রাস পেয়েছে। এদের মধ্যে আছেন ২২ বিলিয়ন ডলারের মালিক ড্যানিয়েল গিলবার্ট, ও ২১.৩ বিলিয়ন ডলারের মালিক মাসায়োশি সন।
ব্যবসা সংক্রান্ত বিখ্যাত মার্কিন ম্যাগাজিন ফোর্বস ২০২২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রীড়াদল মালিকদের তালিকা তৈরি করেছে। এ তালিকায় শীর্ষে আছেন লস অ্যাঞ্জেলেস ক্লিপার্স দলের মালিক স্টিভ বলমার। দ্বিতীয় স্থান দখল করে নিয়েছেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স-এর মালিক মুকেশ আম্বানি। ক্রীড়ার দুনিয়ায় এ জুটি গত ২০১৬ সাল থেকেই প্রথম বা দ্বিতীয় স্থান ধরে রেখেছেন।
চলুন দেখে নেওয়া যাক ফোর্বস-এর তালিকাটি।
১. স্টিভ বলমার
দল: লস অ্যাঞ্জেলেস ক্লিপার্স
সম্পদের উৎস: মাইক্রোসফট
মোট সম্পদ: ৯১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেশাদার বাস্কেটবল লিগ দ্য ন্যাশনাল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশন-এর একটি দল লস অ্যাঞ্জেলেস ক্লিপার্স-এর মালিক স্টিভ বলমার।
আট বছর আগে দুই বিলিয়ন ডলার খরচ করে দলটি কিনেছিলেন মাইক্রোসফট-এর সাবেক এ কর্মী। বর্তমানে দলটির মোট বাজারমূল্য ফোর্বস-এর হিসাবে ৩.৩ বিলিয়ন ডলার। কেবল গত বছর স্টিভ বলমারের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ২৩.৭ বিলিয়ন ডলার।
২. মুকেশ আম্বানি
দল: মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স
সম্পদের উৎস: বিভিন্ন
মোট সম্পদ: ৯০.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)-এর অন্যতম সফল দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। এখন পর্যন্ত দলটি রেকর্ড সংখ্যক পাঁচবার শিরোপা জিতেছে। মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ এ দলটির মালিক। শোনা যাচ্ছে, রিলায়েন্স আইপিএল-এর মিডিয়া স্বত্ব কেনারও চেষ্টা করছে।
৩. ফ্রাঁসোয়া পিনো
দল: স্টেড রেনেস ফুটবল ক্লাব
সম্পদের উৎস: বিলাসবহুল পণ্য
মোট সম্পদ: ৪০.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
লিগ ১-এর এ দলটির মালিক ফরাসি ব্যবসায়ী ফ্রাঁসোয়া পিনো। লিয়ন আর প্যারিস সেইন্ট-জার্মেই; এ দুই দলের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্টেড রেনেসকে ১৯৯৮ সালে কিনেছিলেন কেরিং ও আর্টেমিস-এর মতো প্রতিষ্ঠানের মালিক পিনো।
৪. দিয়েত্রিশ মেটশিজ
দল: নিউ ইয়র্ক রেড বুলস, রেড বুল রেসিং, আরবি লিপজিগ
সম্পদের উৎস: রেড বুল
মোট সম্পদ: ২৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকার (এমএলএস)-এর দল নিউ ইয়র্ক রেড বুলস ও ও বুন্দেসলিগা'র দল আরবি লিপজিগ থেকে চলনসই মানের সাফল্য পেয়েছেন মেটশিজ। তবে তার ক্রাউন জুয়েল হচ্ছে ফর্মুলা ১-এর দল রেড বুল রেসিং। ২০১৩ সালের পর গত বছর রেড বুল রেসিং শিরোপা অর্জন করেছে। এর মাধ্যমে টানা সাতবার জেতা মার্সিডিজকে পরাজিত করতে পেরেছে এটি।
৫. ড্যানিয়েল গিলবার্ট
দল: ক্লিভল্যান্ড ক্যাভেলিয়ার্স
সম্পদের উৎস: কুইকেন লোনস/রকেট কোম্পানিজ
মোট সম্পদ: ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রিয়াল এস্টেট, মর্টগেজ, ও অর্থনৈতিক সেবাসংক্রান্ত কোম্পানি রকেট কোম্পানিজ-এর শেয়ারে পতনের পর ড্যানিয়েল গিলবার্ট তার অর্ধেকের বেশি সম্পদ হারিয়েছেন। এনবিএ-এর ক্লিভল্যান্ড ক্যাভেলিয়ার্স দলটির মালিক তিনি।
৬. মাসায়োশি সন
দল: ফুকুয়োকা সফটব্যাংক হকস
সম্পদের উৎস: ইন্টারনেট, টেলিকম
মোট সম্পদ: ২১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
নিপ্পন প্রফেশনাল বেইজবল-এর দল হকআই-কে ২০০৫ সালে কিনে নেয় সনের সফটব্যাংক গ্রুপ। এরপর থেকে ওই লিগের অন্যতম সফল দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে দলটি। এখন পর্যন্ত জাপান সিরিজ-এর সাতটি শিরোপা জিতেছে তারা।
৭. স্টিভ কোহেন
দল: নিউ ইয়র্ক মেটস
সম্পদের উৎস: হেজ ফান্ড
মোট সম্পদ: ১৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
বেইজবলের দুনিয়ায় সবচেয়ে ধনী একক মালিক হচ্ছেন স্টিভ কোহেন। তার মালিকানাতেই খরচের দিক থেকে আরেক বিখ্যাত বেইজবল দল নিউ ইয়র্ক ইয়াঙ্কিস-কে পেছনে ফেলেছে নিউ ইয়র্ক মেটস। লস অ্যাঞ্জেলেস ডজার্স-এর পরে সবচেয়ে বেশি বেতন দেওয়া হয় মেটস-এ।
৮. ডেভিড টেপার
দল: ক্যারোলাইনা প্যান্থার্স
সম্পদের উৎস: হেজ ফান্ড
মোট সম্পদ: ১৬.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
মার্কিন ফুটবল দল ক্যারোলাইনা প্যান্থার্স-কে ২০১৮ সালে ক্রয় করেন ডেভিড টেপার। মিডিয়া স্বত্ব বিক্রি করে ইতোমধ্যে ভালোই কামিয়ে নিয়েছেন তিনি। দ্য প্যান্থার্স এখন আনুমানিক ২.৯১ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের একটি দলে পরিণত হয়েছে।
৯. রবার্ট পেরা
দল: মেম্ফিস গ্রিজলিস
সম্পদের উৎস: তারবিহীন নেটওয়ার্ক যন্ত্র
মোট সম্পদ: ১৪.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
রবার্ট পেরা'র মালিকানাধীন এ দলটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ন্যাশনাল বাস্কেটবল এজেন্সির সবচেয়ে কম মূল্যের দল। তা-ই বলে যে পেরা কোনো লাভের মুখ দেখেননি, তা নয়। ২০১২ সালে ৩৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে কেনা গ্রিজলিস এখন দেড় বিলিয়ন ডলারের একটি দল।
১০. ফিলিপ আঁশুজ
দল: লস অ্যাঞ্জেলেস কিংস, এলএ গ্যালাক্সি
সম্পদের উৎস: বিনিয়োগ
মোট সম্পদ: ১০.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
২০১০-এর পর দুইবার স্টেইনলি কাপ নিয়ে উদযাপন করার সুযোগ পেয়েছিলেন আঁশুজ। আইস হকি দল লস অ্যাঞ্জেলেস কিংস আবারও শিরোপা যেতার সম্ভাবনা ধরে রেখেছে। আর এলএ গ্যালাক্সি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকার (এমএলএস)-এর একটি দল।