ফেরার দিনে ‘কৃপণ’ সাকিব, অস্বস্তির নাম ম্যাথুস
ইশ, ওই রিভিউ দুটি যদি জলে না যেত! শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন শেষে এমন আক্ষেপ হতেই পারে বাংলাদেশের। ভুল সময়ে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দুটি রিভিউ খুইয়েছে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসের বাকি সময়ে বাংলাদেশের ঝুলিতে জমা একটি রিভিউ। এটা নিয়ে হাসফাঁস থাকতে পারে বাংলাদেশ শিবিরে। তবে দিনশেষে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অস্বস্তির নাম অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ১৫ মে শুরু হওয়া টেস্টের প্রথম দিনটায় বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি অস্বস্তি দেওয়া ব্যাটসম্যানও ম্যাথুস। কুশল মেন্ডিসের সঙ্গে জুটি গড়ার পর দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েও অপরাজিত শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
সাগরিকায় শেষ বিকালে যোগ্য সঙ্গ দেওয়া দিনেশ চান্দিমালও এখন লঙ্কানদের আশা-ভরসার প্রদীপ। ম্যাথুস-চান্দিমাল মিলে অনেকটা সময় ব্যাটিং করে প্রথম দিন শেষ করেছেন, ৯০ ওভারে ৪ উইকেটে সফরকারীদের সংগ্রহ ২৫৮ রান। টেস্ট ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরি পাওয়া ম্যাথুস ১১৪ ও চান্দিমাল ৩৪ রানে অপরাজিত আছেন।
প্রথম দিনে বাংলাদেশের স্বস্তির জায়গা হতে পারে সাকিব আল হাসানের প্রত্যাবর্তন। পাঁচ মাস পর টেস্ট ক্রিকেটে ফিরলেন তিনি। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট খেলেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। এরপর বাংলাদেশ চারটি টেস্ট খেললেও বিভিন্ন কারণে খেলা হয়নি সাকিবের।
এই টেস্টেও তার খেলা নিয়ে শঙ্কা ছিল। ১০ মে আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে করোনা পজিটিভ হন সাকিব। যদিও ১৩ মে করোনামুক্ত হন তিনি, ছিল ফিটনেস ইস্যু। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের পর ১৫ দিন ব্যাটিং-বোলিংয়ের বাইরে থাকা এবং করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় সাকিবের ফিটনেস আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ১৪ মে'র অনুশীলন তার জন্য ফিটনেস পরীক্ষা ছিল। কিন্তু ফিটনেস নিয়ে কাজ না করে, স্ট্রেচিং, বোলিং না করা বাংলাদেশ অলরাউন্ডার ৩০ মিনিটের ব্যাটিং দিয়েই বুঝিয়ে দেন, খেলতে সমস্যা হবে না তার।
প্রথম দিন তার বোলিং দেখে তেমনই মনে হয়েছে। ১০ ওভারের প্রথম স্পেলে ৫টি মেডেনসহ মাত্র ৯ রান খরচা করেন তিনি। দ্বিতীয় স্পেলে ৬ ওভারে তার খরচা ১৩ রান, শিকার এক উইকেট। দিনের শেষ দিকে ৩ ওভারে দেন ৫ রান। সব মিলিয়ে সাকিবের বোলিং ফিগার ১৯-৭-২৭-১। করোনা থেকে সেরে উঠে, কোনো ধরনের অনুশীলন ছাড়াই এমন বোলিং কম কীসে! লঙ্কানদের রানের চাকা তো তিনিই চেপে ধরেছিলেন, সবচেয়ে কম ১.৪২ ইকোনমিতে রান খরচা করেছেন তিনি।
প্রথম দিনের শুরু থেকে হিসাব কষলে টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নামা বাংলাদেশের শুরুটা মন্দ ছিল না। সাবলীল শুরুর পরও দলকে বেশি পথ এগিয়ে দিতে পারেননি শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার ওশাদা ফার্নান্দো ও দিমুথ করুনারত্নে। অষ্টম ওভারে দারুণ এক ডেলিভারিতে লঙ্কান অধিনায়ক করুনারত্নেকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন নাঈম হাসান। ২২তম ওভারে গিয়ে দ্বিতীয় উইকেট তুলে নেন বাংলাদেশের ডানহাতি স্পিনার। তার অফ স্টাম্পের ঠিক বাইরে করা ডেলিভারিতে ব্যাট চালিয়ে লিটন কুমার দাসের হাতে ধরা পড়েন ওশাদা, তার ব্যাট থেকে আসে ৩৬ রান।
৬৬ রানে ২ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন মেন্ডিস ও ম্যাথুস। তৃতীয় উইকেট ৯২ রানের জুটি গড়েন তারা। ৫৪ রান করা মেন্ডিসকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। এরপর ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে উইকেটে থিতু হতে পারেননি, ৬ রান করেই সাকিবের শিকারে পরিণত হন তিনি। এরপর ৭৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দিনের বাকি অংশটা কাটিয়ে দেন দুই সাবেক অধিনায়ক ম্যাথুস-চান্দিমাল।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির পর বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট খেলতে নামা নাঈম দিনের সেরা বোলার। রান বেশি খরচা করলেও প্রথম দুই উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে লড়াইয়ে রাখেন তিনিই। ১৬ ওভারে ২ উইকেট নিতে তার খরচা ৭১ রান। ৩১ ওভার করা তাইজুল ৭৩ রানে নেন এক উইকেট। তরুণ পেসার শরিফুল ইসলাম ১৩ ওভারে ৩৮ রানে উইকেটশূন্য থাকেন। আরেক পেসার খালেদ আহমেদ তুলনামূলক খরুচে ছিলেন। ১১ ওভারে ৪৫ রানে কোনো উইকেট পাননি তিনি।