নিজের মধ্যে কিছু আছে কিনা, এতোদিন নিশ্চিত ছিলেন না সাইফউদ্দিন
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন হবেন সত্যিকারের পেস বোলিং অলরাউন্ডার, তার কাছ থেকে অন্তত ১০ বছর সেবা পাবে বাংলাদেশ; এমন ভবিষ্যদ্বাণী অনেকেই করেছেন। সেই তালিকায় ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের সফলতম অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও। কিন্তু চোটের কারণে সেই স্বপ্ন রং হারিয়েছে অনেকটাই। বারবার ইনজুরিতে পড়ায় সাইফউদ্দিনের মনে হয়েছিল, শরীরে কোনো রোগ বাসা বেধেছে কিনা। যদিও লন্ডনে চিকিৎসা করিয়ে আসার পর সেই দ্বিধা কেটে গেছে তার। এখন তিনি নিজের সেরাটা দেওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।
বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন সেবা দেওয়ার লক্ষ্যই সাইফউদ্দিনের, সেই সামর্থ্যও তার আছে। জাতীয় দলে অভিষেকের কিছুদিনের মধ্যেই ডেথ ওভারের বোলিংয়ে ভরসা হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু পথটা মসৃণ হয়নি সাইফউদ্দিনের। চোট বারবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৭ সালে সাইফউদ্দিনের অভিষেকের পর সীমিত ওভারে ১৩০টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ, সাইফউদ্দিন খেলেছেন মাত্র ৫৮ ম্যাচে। কিছু ম্যাচে একাদশে জায়গা হয়নি, তবে বেশিরভাগ সময়ই ইনজুরির কারণে দর্শক সারিতে থাকতে হয় তাকে।
সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলের অন্যতম অস্ত্র ছিলেন সাইফউদ্দিন। কিন্তু বাংলাদেশের হয়ে সব ম্যাচ খেলা হয়নি তার। পিঠের চোটের কারণে টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার আগেই দেশে ফিরে আসেন সব্যসাচী (ডানহাতে বোলিং, বাঁহাতে ব্যাটিং) এই অলরাউন্ডার। দীর্ঘদিন বাইরে থাকার পর প্রিমিয়ার লিগে দিয়ে মাঠে ফেরেন তিনি। ডাক পেয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলে।
টেস্ট দল ওয়েস্ট ইন্ডিজে গেছে কয়েক দিন আগে। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলের সদস্যরা মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের একজন সাইফউদ্দিন। রোববার অনুশীলনের পর নিজের শরীর নিয়ে দ্বিধায় থাকার কথা জানান তিনি।
২৫ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার বলেন, 'এতোদিন কিছুটা দ্বিধায় ছিলাম যে আমার ভেতর কিছু আছে কিনা। ইংল্যান্ডে গেলাম বিসিবির অধীনে, স্ক্যান করানোর জন্য। তো স্ক্যান দেখে দেখা যায় আমার কিছু হয়নি। তাই কিছুটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বোলিং করছি এখন। কিন্তু জানি না কতদিন সুস্থ থাকতে পারব। চেষ্টা করছি যতদিন খেলতে পারি, সামনে বিশ্বকাপ আছে। ২০২৩ বিশ্বকাপ আছে, তো পারফরম্যান্সের পাশাপাশি সুস্থ থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ আমার জন্য।'
টানা খেলে যাওয়াটা পেসারদের কাছে চ্যালেঞ্জিং, স্বপ্নের মতোও। প্রায়ই চোটে পড়তে হয় তাদের। সাইফউদ্দিনই যেমন ৫ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকবার মাঠ থেকে ছিটকে গেছেন। এটাকে দুর্ভাগ্য বলে মনে করেন বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার, 'কিছুটা দুর্ভাগা তো বটেই। হয়তো আর পাঁচজন পেস বোলারের চেয়ে আমি কিছুটা দুর্ভাগা। কিন্তু এটা জীবনেরই অংশ। এটা মেনে নিয়েই চলতে হবে।'
পেসারদের ক্যারিয়ারের বিভিন্ন বাঁক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ঢাকার যানজটের উদাহরণ দেন সাইফউদ্দিন, 'প্রতিটা মানুষের জীবনেই বিরতি থাকে। ঢাকাতে যদি গাড়ি চালান, একই গতিতে গাড়ি চালাতে পারবেন না। বিরতি দিতেই হবে। যারা অনেক ভাগ্যবান, তারা ইনঞ্জুরি ছাড়া অনেক দিন খেলে যেতে পারে। বেশিরভাগ পেস বোলারেরই এমন থাকে। জানি না আবার কয়দিন খেলতে পারব। পারফরম্যান্স ও ইঞ্জুরির ব্যাপার আছে। চেষ্টা করছি, কী হবে তা কারও হাতে নেই।'