কাশ্মীর নিয়ে জাতিসংঘের বৈঠক আজ
জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপের মধ্য দিয়ে কাশ্মীরিদের সায়ত্ত্বশাসন কেড়ে নেয়ার বিষয়ে ভারতের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বৈঠকে বসছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ।
আজ শুক্রবার (১৬ আগস্ট) ১৫ সদস্যের এই রুদ্ধদ্বার বৈঠক বসতে চলেছে। ৭০ বছরের এই বিরোধ নিয়ে ৫০ বছর পর আজ প্রথম নিরাপত্তা পরিষদ এ বৈঠক করবে।
চীন ও পাকিস্তানের অনুরোধে বৈঠকটি হচ্ছে বলে কূটনীতিকদের বরাতে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এর আগে বুধবার (১৪ আগস্ট) নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সভাপতি পোল্যান্ডের প্রতিনিধি জোয়ানা রনেকা সাংবাদিকদের বলেন, জম্মু কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে ১৬ আগস্ট রুদ্ধদ্বার বৈঠকের জোর সম্ভাবনা রয়েছে।
পাকিস্তান চায় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হোক। এর জন্য গত মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) পোল্যান্ডকে চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানায় ইসলামাবাদ। চিঠিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি নিজে উপস্থিত থাকার অনুমতি চেয়েছেন।
কুরেশি চিঠিতে লেখেন, “পাকিস্তান কাশ্মীরে যুদ্ধের উস্কানি দেবে না। কিন্তু ভারত যেন আমাদের সংযমকে দুর্বলতা না ভাবে। ভারত যদি ফের শক্তি প্রয়োগ করার পথে যায়, আত্মরক্ষার জন্য সর্বশক্তি নিয়ে পাকিস্তান জবাব দিতে বাধ্য হবে।”
পাকিস্তানের চিঠিতে নিরাপত্তা পরিষদ সাড়া না দেওয়ায় বুধবার (১৪ আগস্ট) চীনের পক্ষ থেকে একই প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে ইন্ডিয়া টুডে’র খবরে জানানো হয়, এই বৈঠকে পাকিস্তানের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত থাকছেন না।
গত ৫ আগস্ট ভারতের পার্লামেন্টে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করা হয়। এ কারণে সায়ত্বশাসন হারায় কাশ্মীরিরা। সেখানে কেন্দ্রীয় শাসন জারি করা হয়। এর ফলে কাশ্মীরে স্থানীয় বাসিন্দা নন এমন নাগরিকদের সম্পত্তি কেনা ও বিয়ে করার সুযোগ করে দিয়েছে ভারত।
এর প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে কাশ্মীরিরা। তারা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে। অবরোধও চলছে।
এদিকে ওই দিনটি থেকে কাশ্মীরের টেলিফোন লাইন, ইন্টারনেট ও টেলিভিশন নেটওয়ার্ক বন্ধ করে রেখেছে দিল্লি এবং লোকজনের অবাধ চলাচল ও জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে। দুইজন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও ওমর আব্দুল্লাহসহ কয়েক’শ কাশ্মীরি নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
এর প্রতিক্রিয়ায় গত মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বরাবর চিঠি লিখেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি।
জাতিসংঘে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মালিহা লোদি বলেছেন,”কাশ্মীরে এখন এক কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষ মাারাত্মক বেদনায়, দুর্ভোগে এবং দুর্দশার শিকার। তাদের এসব বিষয় নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে ইস্যু করা হয়েছে।”
এদিকে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকতে ভারত ও পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। কাশ্মীরের ভারতীয় অংশে বিধিনিষেধ আরোপের খবরে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন মহাসচিব।
১৯৪৭ সালের ভারত-পাকিস্তান ভাগ হবার পর থেকেই এই দুটি দেশের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে।
১৯৪৮ সালে ও ১৯৫০-র দশকে কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের বিরোধের বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। এর মধ্যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গণভোট নেয়ার কথাও ছিল।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অস্ত্রবিরতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য ১৯৪৯ সাল থেকে জম্মু ও কাশ্মীরে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মোতায়েন আছে।