খুলনা রেলওয়ে থানায় ‘গণধর্ষণ’ : ওসিসহ ৫ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা
মাদকদ্রব্যের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো খুলনার এক গৃহিণী ‘থানায় আটকে তাকে গণধর্ষণের’ অভিযোগ তোলার পর এবার খুলনার রেলওয়ে থানার ওসিসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন ওই নারী।
অভিযোগ ওঠার ছয়দিন পর শুক্রবার আদালতের নির্দেশে নিজেই বাদী হয়ে জিআরপি থানায় ওই নারী মামলা করেছেন বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন এ ঘটনার গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান কুষ্টিয়া সার্কেলের এএসপি ফিরোজ আহমেদ।
তিনি বলেন, জিআরপি থানায় গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় আদালতের নির্দেশে ওসি উছমান গণিসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও হত্যা নিবারণ আইনে মামলা হয়েছে।
“তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো। তবে এ সময় আরো বাড়তে পারে।”
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্যাতনের শিকার নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত কমিটি। জিজ্ঞাসাবাদের পরেই আদালতের নির্দেশে পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
গত বুধবার এই অভিযোগের ‘সুষ্ঠু তদন্তের’ স্বার্থে খুলনায় জিআরপি থানার ওসি উসমান গণি পাঠান ও এসআই নাজমুল হককে তাদের কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করা হয়।
তিন সন্তানের মা এই গৃহবধুর আদালতে দেয়া জবানবন্দি অনুযায়ী, গত ২ আগস্ট যশোর থেকে ট্রেনে খুলনায় আসার পথে খুলনা রেলস্টেশনে এই নারীকে আটক করেন কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা। পরে গভীর রাতে জিআরপি থানার ওসি উছমান গনি পাঠান ও এসআই গৌতম কুমার পালসহ ৫ পুলিশ সদস্য তাকে ধর্ষণ করে।
পরদিন শনিবার তাকে ৫ বোতল ফেন্সিডিলসহ একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে খুলনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত ফুলতলায় প্রেরণ করে।
৪ আগস্ট আদালতে জামিন শুনানীকালে জিআরপি থানায় গণধর্ষণের বিষয়টি আদালতের সামনে তুলে ধরেন এই নারী। এরপর আদালতের নিদের্শে সোমবার তার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।
তবে গণধর্ষণের বিষয়টি গণমাধ্যমের কাছে অস্বীকার করে ওসি উছমান গনি পাঠান বলেছিলেন, ওই নারীকে মহিলা এসআই ও মহিলা কনস্টেবল পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করে। রাতে তিন নারী পুলিশসহ আট পুলিশ সদস্য থানায় পাহারায় ছিল সেখানে তাকে ধর্ষণের কোনো সুযোগ নেই।
এ ঘটনায় পরপরই পাকশী রেলওয়ে জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের নির্দেশে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রধান হিসবে দায়িত্ব পান কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদ।
ফিরোজ আহমেদ তখন বলেছিলেন, “পুলিশের সুনাম ক্ষুণ্ণ হওয়া এবং অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে তাদের ক্লোজ করা হয়েছে। বাকি তিন পুলিশ সদস্যের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।”
তবে, তদন্ত কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত ধর্ষণের বিষয়ে সেসময় কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।