গুগল ও ফেসবুককে ৯ হাজার কোটি টাকা দিল গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও রবি
গুগল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনলাইন বিজ্ঞাপন বাবদ ৮ হাজার ৭৪৪ কোটি ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছে মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও রবি।গত পাঁচ বছরে এই অর্থ পেয়েছে গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)’র একটি প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ প্রতিবেদন দাখিল করে বিটিআরসি।
আদালতে বিটিআরসি’র পক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করেন আইনজীবী এ কে এম আলমগীর পারভেজ। রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
শুনানিকালে বিটিআরসি’র সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের উপ-পরিচালক প্রকৌশলী মো. নাহিদুল হাসান স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
হাইকোর্টে দেওয়া বিটিআরসির প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, অনলাইনে বিজ্ঞাপন প্রচার বাবদ গ্রামীণফোন খরচ করেছে ৪৩ কোটি ৩১ লাখ ২৫ হাজার ৬২৯ ডলার। এরপর রবি খরচ করেছে ৩২ কোটি ১৩ লাখ ৩৮ হাজার ডলার এবং বাংলালিংক খরচ করেছে ২৮ কোটি ৬৪ লাখ ৬৯ হাজার ৯৬৭ ডলার। অর্থাৎ, এই তিন প্রতিষ্ঠান ব্যয় করেছে ১০৪ কোটি ৯ লাখ ডলারের বেশি।
এর আগে হাইকোর্টের নির্দেশনার পর বিটিআরসি কর্তৃপক্ষ এ–সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে তিনটি ফোন কোম্পানিকে চিঠি লেখে। ৭ আগস্টের মধ্যে এই তথ্য দিতে বলা হয়।
এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ফোন কোম্পানিগুলো অনলাইন বিজ্ঞাপন বাবদ খরচের হিসাব জমা দেয় বিটিআরসিকে।
হাইকোর্টে জমা দেওয়া ফোন কোম্পানিগুলোর প্রতিবেদন অনযায়ী, গুগল, হোয়াটসঅ্যাপ, ইয়াহু, আমাজন, ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যমে তারা বিজ্ঞাপন প্রচার করে আসছে।
আগামী ৩০ অক্টোবর এই মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ঠিক করেছেন হাইকোর্ট।
এর আগে গত ৯ এপ্রিল রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ এনে বিদেশি প্রতিষ্ঠান গুগল, আমাজন, ফেসবুক ও ইউটিউবের বিরুদ্ধে রিট দায়ের করেন হাইকোর্টের ছয়জন আইনজীবী।
রিটে ইন্টারনেটভিত্তিক সব প্রতিষ্ঠানকে করের আওতায় আনা, প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে পরিচালনার জন্য নীতিমালা প্রস্তুত করার নি্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলো কী পরিমাণ টাকা নিচ্ছে তার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ অর্থ নেয়া হয়েছে তা নিরূপণের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
পরে ১৮ এপ্রিল সার্চ ইঞ্জিন গুগল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ ইন্টারনেটভিত্তিক সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব ফাঁকির তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি গঠন করে অর্থ মন্ত্রণালয় সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এনবিআর চেয়ারম্যান, আইন মন্ত্রণালয় সচিব, তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সচিব, বিটিআরসর চেয়ারম্যান এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে এই নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
এ ছাড়া ইন্টারনেট মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে বিজ্ঞাপন, ডোমেইন বিক্রি এবং বিভিন্ন প্রকার লাইসেন্স বিক্রির ফিসহ যেকোনো লেনদেনের বিপরীতে যে পরিমাণ টাকা পরিশোধ করা হয় তার থেকে আদায়যোগ্য রাজস্ব সংগ্রহ করতে বলা হয়।
একইসঙ্গে ইন্টারনেটভিত্তিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় রাজস্ব আদায়ের কেন নির্দেশনা দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।