মেট্রো রেলের নিরাপত্তায় বিশেষ পুলিশ ইউনিট গঠনে গুরুত্ব দিলেন প্রধানমন্ত্রী
মেট্রো রেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আলাদা বিশেষ পুলিশ ইউনিট গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার সকালে গণভবনে মেট্রো রেল বা ‘ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট’ (এমআরটি)-এর অগ্রগতির ওপর একটি প্রেজেন্টেশনের সময় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
সকালে প্রধানমন্ত্রীর সামনে ‘টাইম বাউন্ড অ্যাকশন প্ল্যান ২০৩০ ফর কন্সট্রাকশন অফ দ্য এমআরটি লাইনস ইন ঢাকা সিটি এন্ড ইটস অ্যাডজয়েনিং এরিয়াস’ শীর্ষক প্রকল্পটির সামগ্রিক অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন ডিএমটিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক। পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তিনি মেট্রো রেল রুট-৬-এর পাশাপাশি, মেট্রো রেল রুট- ১, ২, ৩, ৪ ও ৫-এর কাজের বিবরণও সভায় উপস্থাপন করেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই মেগা প্রকল্পের দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কিছু নির্দেশনা দেন।
প্রসঙ্গত, ঢাকায় নির্মিতব্য ভূ-উপরিস্থ রেল-ব্যবস্থার নাম সংক্ষেপে ‘ঢাকা মেট্রো’। এমনিতে এর নাম ‘ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট’ (এমআরটি)। ২০৩০ সালের মধ্যে আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে ছয়টি মেট্রো রেলের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
ওদিকে, ‘ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট’ (এমআরটি) বা মেট্রো রেলের পরিকল্পনা, জরিপ, নকশা প্রণয়ন, অর্থায়ন, নির্মাণ, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২০১৩ সালের ৩ জুন গঠন করা হয় ‘ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি’ (ডিএমটিসিএল)।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এ প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা করছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। প্রকল্পের মোট ২২,০০০ কোটি টাকা খরচের মধ্যে জাইকা দিচ্ছে ১৬,৫০০ কোটি টাকা।
ইতোমধ্যে মেট্রো রেল রুট-৬-এর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের কাজ সবচেয়ে বেশি এগিয়েছে। আগস্টের মধ্যে রুট-৬-এর (উত্তরা-আগারগাঁও-মতিঝিল) ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আলাদাভাবে এ রুটের উত্তরা-আগারগাঁও অংশের কাজ সম্পন্নের হার ৪৬ শতাংশ এবং আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের ক্ষেত্রে এটি ২৪ শতাংশ বলে সভায় জানানো হয়।
মেট্রো রেল রুট-৬-এর প্রতিটি ট্রেন উত্তরা থেকে মিরপুর ও ফার্মগেট হয়ে মতিঝিল অব্দি আসবে। এ পথে আসতে ট্রেনগুলো প্রতি চার মিনিটে একটি স্টেশনে থামবে। আর প্রতিটি ট্রেন ঘণ্টায় বহন করবে ৬০ হাজার যাত্রী।
১৬টি স্টেশন পড়বে এখানে। উত্তরা নর্থ, সেন্ট্রাল ও সাউথ, পল্লব, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণী, ফার্মগেট, সোনারগাঁও, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম ও বাংলাদেশ ব্যাংক।
মেট্রো রেল রুট-৬ চালু হলে উত্তরা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে আসতে মাত্র ৩৮ মিনিট লাগবে।
প্রথম পর্যায়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময় ধরা হলেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পরে তা এগিয়ে আনা হয় বলে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন।
প্রকল্পের প্রথম ধাপ, উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ে এ বছরের শেষ নাগাদ ট্রেন চালুর আশা করছেন সরকারি কর্মকর্তারা। দ্বিতীয় ধাপ, আগারগাঁও থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে গত বছরের অক্টোবরে জানিয়েছিলেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তবে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী জাপান সরকারের দাতা সংস্থা জাইকার একটি প্রতিনিধিদল গত ফেব্রুয়ারিতে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সঙ্গে সাক্ষাত করে এমআরটি-৬ প্রকল্পের কাজ ২০২২ সালে শেষ হবে বলে জানিয়েছিলেন।
সোমবারের অনুষ্ঠানে সাবেক নৌপরিবহন শাহজাহান খান এমপি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোহাম্মদ নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, সড়ক পরিবহন সচিব মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, প্রতিরক্ষা সচিব আখতার হোসেন ভূঁইয়া, ঢাকার সাবেক পুলিশ কমিশনার ও বর্তমানে জাতীয় নিরাপত্তা সেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান মিয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য সচিব ইহসানুল করিমসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে জাইকার প্রধান প্রতিনিধি হিতোশি হিরাতার নেতৃত্বে জাইকার একটি প্রতিনিধিদলও সেখানে ছিলেন। তারা বিভিন্ন বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন।
এ সময় মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান মিয়াকে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।