অবৈধ মাছ ধরা বন্ধ করতে পানির নিচে ভাস্কর্য
ট্রলারে করে মাছ ধরা বেশ জনপ্রিয় একটি মৎস্য শিকার পদ্ধতি। বড় ট্রলারে করে মাছ ধরার জনপ্রিয়তম পদ্ধতি হচ্ছে 'বটম ট্রলিং', যা বিশ্বের অনেক জায়গাতেই অবৈধ।
এ পদ্ধতিতে মাছ ধরা হয় এভাবে- ট্রলারের পিছনে সমুদ্রতল বরাবর ভারী ওজনের একটি জাল ফেলা হয়। সে জাল তার পথে সমুদ্রের পানিতে থাকা সবকিছু টেনে নেয়। শিকারিদের জন্য এ পদ্ধতি বেশ লাভজনক হতে পারে।
কিন্তু এভাবে মাছ শিকার করলে একটি এলাকায় মাছের মজুদ দ্রুত হ্রাস পায়। কখনও কখনও এর ফলে বিপন্ন হাঙ্গর বা কচ্ছপও ধরা পড়ে মাছের জালে। এছাড়া ধরা পড়ে অল্প বয়স্ক অনেক মাছ, যেগুলো বাজারজাত করার মতো যথেষ্ট বড় হয়নি। এতে করে একটি এলাকায় মাছের একাধিক প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে কারণে পরবর্তী বছরে সে এলাকায় মাছের মজুদ কমে যায়।
বড় জালগুলো সমুদ্রতলের অবকাঠামোকেও নষ্ট করে দেয়। কেননা, এসব জাল একদম নিচ থেকে সবকিছু টেনে নিয়ে যায়।
অলাভজনক মৎস্য সংরক্ষণ সংস্থা ওশেনারের সিনিয়র উপদেষ্টা রিকার্ডো আগুইলা বলেন, "তারা শুধু মাছ ধরার জন্য প্রবাল ধ্বংস করে, স্পঞ্জ ধ্বংস করে, সামুদ্রিক শৈবাল ধ্বংস করে, সাগরতলের ঘাসও ধ্বংস করে।"
প্রবাল, স্পঞ্জের মতো উপাদানগুলোর উপর নির্ভরশীল মাছগুলোও প্রায়ই এ কারণে অদৃশ্য হয়ে যায়।
"তারা যেখানে বাস করছে আপনি সেই জায়গাটিই ধ্বংস করে দিচ্ছেন," বলেন আগুইলা।
সাধারণত সমুদ্রতলে জালের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন সংবেদনশীল প্রবাল, সমুদ্রের ঘাস বা অন্যান্য বিশেষ বৈশিষ্ট্যের উপাদান থাকলে সে জায়গায় মাছ ধরা ট্রলারকেই নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। যেমন, ইতালিতে উপকূলের তিন নটিক্যাল মাইলের মধ্যে ট্রলারে মাছ ধরা নিষেধ।
কিন্তু সব ট্রলার এই আইনকে পাত্তা দেয় না। ইতালির অনেক জায়গাতেই ট্রলারের সিন্ডিকেট রয়েছে যারা একটি এলাকার মৎস্য সম্পদকে শূন্য করে আরেক এলাকায় চলে যায়।
এরকম অবৈধ ট্রলারের আগ্রাসন থেকে নিজেদের মৎস্য এলাকাকে রক্ষা করতে এবার নতুন বুদ্ধি এঁটেছে ইতালির তুস্কান উপকূলের স্থানীয় জেলেরা।
অবৈধ ট্রলারগুলো আটকাতে প্রথমে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছেন তারা। কিন্তু এতে করে ট্রলার সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত স্থানীয় গডফাদারদের হুমকি-ধামকি শুনতে হয় তাদের। তখন তারা চিন্তা করা শুরু করেন নতুন কিছু করার।
সেসময় সরকারের পক্ষ থেকে কিছু কংক্রিটের ব্লক ফেলা হয় এই সমুদ্র এলাকায়। কিন্তু সেগুলো এতোই দূরে দূরে ফেলা হয় যে তা ট্রলারের জালগুলোকে আটকাতে সক্ষম হচ্ছিল না।
স্থানীয়রা তখন টাকা জমিয়ে কংক্রিটের ভাস্কর্য তৈরি করার জন্য শিল্পী যোগাড় করে। ভাস্কর্যরূপী এই কংক্রিটের ব্লকগুলো ফেলা হয় সমুদ্রে।
এই কংক্রিটের ব্লকের সুবিধা হচ্ছে, এরা ভারী ওজনের ট্রলারের জালগুলোকে ছিঁড়ে ফেলে। এছাড়া এগুলো কৃত্রিম প্রাচীর হিসেবেও কাজ করতে পারে; যেখানে প্রবাল, স্পঞ্জ এবং অন্যান্য সামুদ্রিক জীবন বাস করতে পারবে। এসব কংক্রিটের ফলে কিশোর মাছ এবং ক্রাস্টেসিয়ানদের মৃত্যুহার হ্রাস পায়।
পানির নিচের এই ভাস্কর্যগুলো বিভিন্ন ধরণের ছায়া এবং আলোর সূত্রপাত করে, যা তাদের চারপাশের তাপমাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে এবং আরও কিছু প্রজাতির জীবনধারণে সাহায্য করতে পারে।
স্থানীয় এক জেলে বলেন, "এই ভাস্কর্যগুলোর জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এমন কিছু প্রজাতিকে পাওয়া গেছে যাদের আমরা অনেকদিন দেখি না। যেমন গ্রুপার এবং গলদা চিংড়ির মতো মাছগুলো আবার ফিরে এসেছে।"
চলমান "হাউস অফ ফিশ" প্রকল্পের অংশ হিসেবে তুস্কান উপকূলের তালামোন এলাকার পানিতে বর্তমানে প্রায় ৪০টি ভাস্কর্য ফেলা হয়েছে। স্থানীয়দের লক্ষ্য, অর্থ যোগাড় করে মোট ১০০টি ভাস্কর্য ফেলার ব্যবস্থা করা।
সূত্র: ডিসকভার ম্যাগাজিন।