কত সময় লাগে খাবার হজম হতে?
আমাদের দেহের স্বাস্থ্য ভালো রাখার ও ভালো থাকার পেছনে হজম প্রক্রিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হজম প্রক্রিয়ার মানে শুধু খাদ্য ভাঙা এবং দেহকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করা নয়। ভালো হজম প্রক্রিয়ার মানে হলো একটি দীর্ঘ ও রোগমুক্ত জীবন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্যবান হওয়ার রহস্য লুকিয়ে থাকে মূলত অন্ত্রে। সাধারণত, খাদ্য পরিপাকনালীর ভেতর দিয়ে যেতে ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা সময় নেয়। এটি নির্ভর করে খাদ্যের ধরন ও পরিমাণের ওপর। আমরা কী খাচ্ছি তার ওপরও নির্ভর করে হজমের হার। যেমন, প্রোটিন ও স্নেহপদার্থ থাকার কারণে মাংস-মাছ পুরোপুরি হজম হতে দুদিন লেগে যায়। অপরদিকে, অত্যধিক আঁশজাতীয় খাদ্য, যেমন- সবজি, ফলমূল হজম হতে একদিনেরও কম সময় লাগে।
আসলে, এই উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার হজম প্রক্রিয়াকে আরও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালিত হতে সহায়তা করে।
হজম এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে খাদ্য ভেঙ্গে দেহের সঞ্চালনের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি বের করে দেয় এবং বর্জ্য পদার্থকে সরিয়ে দেয় দেহ থেকে।
মুখ, খাদ্যনালী, পেট, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্র- মূলত এই পাঁচটি প্রধান অংশ নিয়ে হজম ব্যবস্থার গঠন। গবেষণায় দেখা গেছে, শ্বেতসার (ভাত, রুটি) খাদ্য, ফল ও সবজি হজম করতে যে পাচক রসের প্রয়োজন, তার চরিত্র ক্ষারধর্মী ।
ক্ষাররস আমাদের মুখের লালা থেকে এবং অম্লরস পাকস্থলী থেকে উৎপন্ন হয়। খাবার সময় আমাদের মুখের দুই পাশের মাড়ির পাশ দিয়ে প্রচুর পরিমাণে এক ধরনের লালা ক্ষরণ হয়। সেটি ভাত ও শাক-সবজি হজম করতে সাহায্য করে। মাছ, মাংস, ডাল হজম হয় পাকস্থলী থেকে নির্গত অম্লরসের মাধ্যমে।
হজমে অগ্ন্যাশয় একটি বড় ভূমিকা পালন করে। হজমের সময় অগ্ন্যাশয় রসকে এনজাইম বলে। এই এনজাইমগুলো চিনি, চর্বি ও স্টার্চগুলো ভেঙে দেয়। অগ্ন্যাশয় থেকে যে হরমোন তৈরি হয়, তা পাচনতন্ত্রকেও সহায়তা করে। অগ্ন্যাশয় থেকে তৈরি হওয়া হরমোন রক্তে শর্করার মাত্রা এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
চিবিয়ে গিলে ফেলার পর পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অ্যাসিডের সহায়তায় যান্ত্রিক পরিপাক শুরু হয়। এরপর ক্ষুদ্রান্ত্রের বিভিন্ন এনজাইমের মাধ্যমে পুষ্টি শুষে নিয়ে দেহের কাজে লাগানো হয়।
ক্ষুদ্রান্ত্রে রয়েছে তিনটি অংশ। বলে রাখা ভালো, সব ধরনের খাদ্যের চূড়ান্ত পরিপাক ক্ষুদ্রান্ত্রেই সংঘটিত হয়। তাই ক্ষুদ্রান্ত্রই মূলত খাদ্য পরিপাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অন্যদিকে, বৃহদান্ত্র আমাদের শরীরের তরল বর্জ্য উপাদানগুলোকে মূত্রে পরিণত করে এবং খাদ্য থেকে প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি ও পানি শোষণ করে নেয়। তবে কিছু কারণে হজমে প্রায়ই সমস্যা হয়। তখন অম্বল, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়ার মতো অপ্রীতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
এ রকম কিছু মুসিবতের কথা জানা যাক:
অ্যাসিডিটি
মানুষের শরীরে রয়েছে অম্ল ও ক্ষার। এই অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে অম্লের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে অ্যাসিডিটি হয়। বারবার ভাজাপোড়া খাওয়ার ফলে অম্বল হতে পারে। অ্যাসিডের পরিমাণ অতিরিক্ত হলে বুক জ্বলা, ঢেকুরের মতো সমস্যা হতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য
খাদ্যতালিকায় আঁশজাতীয় খাবারের ঘাটতি ও অপর্যাপ্ত পানি পান করার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
ডাইভার্টিকিলিউটিস
কম আঁশযুক্ত খাবার খেলে এবং বার্ধক্যের কারণে এই রোগ হয়ে থাকে। জিনগত কারণেও হতে পারে পঘ্গঠহ। বৃহদান্ত্র প্রাচীরের দুর্বল এলাকাগুলোতে যে ছোট ছোট পিণ্ড তৈরি হয়, তাকে বলে ডাইভার্টিকুলা। এ থেকে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। এতে ধীরে ধীরে সংক্রমণ ঘটে। তা থেকে শরীরে ফোড়া হয়।
এই রোগের সঠিক কারণ জানা না থাকলেও সাধারণত যাদের মেদ বেশি, দীর্ঘদিন ধরে কোনো বেদনানাশক ওষুধ সেবন করছেন বা কোষ্ঠকাঠিন্যের ধাচ রয়েছে, তাদের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
ইরিট্যাবল বাউয়েল সিনড্রোম
দীর্ঘমেয়াদি আমাশয় সমস্যার একটি হলো ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা আইবিএস। এটি অন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্রের একটি সমস্যা। ২০ থেকে ৪০ বছরের নারীদের এবং মানসিক অস্থির প্রকৃতির পুরুষের মধ্যে আইবিএসের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। তবে পুরুষের চেয়ে নারীরা প্রায় দুই থেকে তিন গুণ বেশি এ সমস্যায় ভোগে।
ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স
ক্ষুদ্রান্ত্রে ল্যাকটোজ এনজাইমের অভাবে এ রোগ হয়। এ অঞ্চলে পূর্ব এশীয় অঞ্চলে এই রোগ বেশি হয়। দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য খেলে পেট ফুলে ওঠা, গ্যাস, বমি-বমি ভাব, পাতলা পায়খানার মতো লক্ষণ দেখা দেয়।
ইনফ্লামেটরি বাওয়েল ডিজিস
এটি বলতে সাধারণত আলসারেটিভ কোলাইসিস ডিজিস বা ক্রোনস ডিজিসকে বোঝায়।এটি একদিনে হয় না। ধীরে ধীরে প্রদাহের কারণে এ অসুখ হয়।
ভীষণ দুর্বল অনুভব করা, রক্ত আমাশয়, ওজন হ্রাস পাওয়া, পেট কামড়ে ধরা, ফুলে যাওয়া- এসব এ রোগের লক্ষণ। সঠিক কারণ জানা না থাকলেও সাধারণত জিনগত কারণে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় কোনো ঘাটতি দেখা দিলে এ রোগ হয়ে থাকে।
- সূত্র: হেলথ লাইন ডটকম