করোনা ভাইরাসের উচ্চঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে জীবন যেভাবে চলছে
ইতালি এখন অবরুদ্ধ। করোনা প্রতিরোধের সর্বাত্মক চেষ্টার অংশ হিসেবে সেখানকার সরকার পুরো দেশেই কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
এই নিষেধাজ্ঞায় বন্ধ হয়েছে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা বন্ধ। জনশুন্য সব জনসমাগমের স্থান। খাদ্য আর ওষুধ ছাড়া অন্যান্য পণ্য বিক্রয়কারী দোকানপাটেও তালা ঝুলছে।
আর ঘরের বাইরে যে কোন স্থানে ভ্রমণের ওপর আরোপ করা হয়েছে কঠোর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন উত্তর ইতালির লমবার্ডি অঞ্চলে। সেখানকার এক ছোট্ট শহর সান ফিওরানোতে স্বপরিবারে বসবাস করেন স্কুল শিক্ষক মারজিও টিনোলো।
তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জরুরি পণ্য এবং কাজ ছাড়া বাড়ির বাইরে পা রাখা এখন প্রায় অসম্ভব। আর যখন বাইরে যেতে হয় তখন বিশেষ অনুমতি নিয়ে এবং নিজের প্রয়োজনের স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ দেখিয়েই তা করতে হয়।
মারজিও টিনোলো স্ত্রী চিয়ারা; তাদের ২ বছরের কন্যা বিয়াঙ্কা এবং দাদা-দাদীর সঙ্গে একত্রে বসবাস করেন।
মারজিও নিজে একজন চিত্রগ্রাহক। গত ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে সান ফিওরানোবাসী চলাচল নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়েন। তখন থেকেই নিজ পরিবারের দৈনন্দিন জীবনের ছবি তুলে রাখছেন মারজিও। তিনি দুর্গত অঞ্চল থেকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের হয়েও কাজ করেন।
সিএনএনকে পাঠানো এক ইমেইলে মারজিও বলেন, ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখেই আমাদের সকলের জীবনে যে বড় এক পরিবর্তন আসতে চলেছে আমি তা বুঝতে পারি। কিন্তু এই অবস্থা আমরা কিভাবে কাটিয়েছি তার এক উজ্জ্বল স্মৃতি আমি আমার কন্যাকে উপহার দেওয়ার চিন্তা করি। সুতরাং একসঙ্গে কাটানো সময় আর স্মৃতির ডায়েরি হয়ে থাকবে এই ছবিগুলো।
গত সপ্তাহে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিসেপে কন্তে উত্তর ইতালির পাশাপাশি এখন সমগ্র দেশকেই জরুরি অবস্থার আওতায় ফেলেন। গত শুক্রবার নাগাদ দেশটিতে ১৫ হাজার মানুষের দেহে সংক্রমণ নিশ্চিত করা গেছে। আর মারা গেছেন এক হাজারের বেশি মানুষ।
মারজিও জানান, সান ফিওরানোতেও অনেকে মারা গেছেন।
'আমাদের শহরটি খুব ছোট। সবাই সবাইকে খুব ভালো করে চিনি। পারস্পরিক যোগাযোগ আর সামাজিক বন্ধনটাও খুব মজবুত। এই অবস্থায় কারও মৃত্যু আমাদের সকলকেই বিষাদগ্রস্ত করে' বলছিলেন তিনি।
মারজিও এবং তার স্ত্রী চিয়ারা দুজনেই শিক্ষক। তারা এখন ঘরে বসেই অনলাইনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন। এর পাশাপাশি রয়টার্সের হয়ে সাংবাদিকতা করার কাজেও ব্যস্ত সময় কাটে মারজিওর।
স্ত্রী চিয়ারার তার অবসর সময়টা বই পড়া, রান্না বা বাগানে কাজ করতে ব্যয় করেন। আর সারাক্ষণ মা বাড়িতে থাকার সুবাদে সবচেয়ে বেশি সময়টা যে শিশু বিয়াঙ্কাই পাচ্ছে তা বলাই বাহুল্য।
মারজিও বলেন, আমরা তাকে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি যতোটা সম্ভব তার মতো করে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করেছি। ওর কাছ থেকে কিছুই লুকিয়ে রাখা হয়নি। এসব সে নিজের মতো করে কিছু কিছু বুঝেছে। আর সেই অনুসারে বিয়াঙ্কা এখন সতর্ক থাকার পদক্ষেপগুলো মেনে চলে। তার স্বাস্থ্যের জন্য যে ঝুঁকি আছে এটা সে বুঝতে পেরেছে।
মারজিও বলেন, প্রধান সড়কগুলোতে এখন বসানো হয়েছে সেনা চেকপোস্ট । নিয়ম ভঙ্গকারীদের সঙ্গে সঙ্গে জরিমানা বা জেলে দেওয়া হচ্ছে।
'ইতালির মানুষের জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে সামাজিক সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা। বা একে অন্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা। এমনকি আমরা এখন কাউকে জড়িয়ে ধরে চুমুও দিতে পারি না'
'এখন আমাদের একে অপর থেকে শারীরিক সংস্পর্শের দূরত্ব বজায় রাখতে হয়, ইতালিবাসীর জন্য এটা মোটেও স্বাচ্ছন্দের বিষয় নয়। সবাইকেই এখন সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখতে হবে, তাদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে। এসবে আমরা একদমই অভ্যস্ত নই।'