কৃষকের বন্ধু ‘সয়েল টেস্টিং কিট’
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/01/12/mymensingh.jpg)
কৃষক মাটি পরীক্ষা করে নিজেরাই বলে দিচ্ছেন এর গুণাগুণ। সারের পরিমাণ ঠিক করে নিচ্ছেন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সহায়তা ছাড়াই। এমন হলে কেমন হতো?
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ ও জার্মানির হামবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ প্রচেষ্টায় এমনই একটি সরঞ্জাম উদ্ভাবিত হয়। সরঞ্জামটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘সয়েল টেস্টিং কিট’। বর্তমানে এটির ব্যবহার বাড়াতে মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও প্রচারণা চালাচ্ছেন গবেষকরা।
বাম্পার ফলনের জন্য জমিতে অবাধে রাসায়নিক সার দিতে দেখা যায় বেশিরভাগ চাষিকে। এতে উৎপাদন বাড়লেও ক্ষতি হচ্ছে মাটির। আধুনিক ব্যবস্থাপনায় মৃত্তিকার স্বাস্থ্য রক্ষার বিষয়ে কতটুকু জানেন বংশ পরম্পরায় চাষাবাদ শেখা কৃষক?
কথা হয় ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র চড় এলাকার কৃষক জামিল মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘বাপ দাদারা যেভাবে জমি চাষ করেছেন আমরাও তাদের কাছ থেকে দেখে দেখে শিখেছেন। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনা আমাদের কাছে জটিল।’’
আরেক কৃষক আজগর আলী জানান, কম জমিতে কিভাবে বেশি ফলন পাওয়া যায় সেদিকে নজর তাদের। সেজন্য রাসায়নিক সার ব্যবহারে আগ্রহী তারা। তবে কী পরিমাণ জমিতে কতটুকু সার দিতে হবে তা জানেন না তারা। এটি ঠিক করে দেন সারের ডিলার বা খুচরা বিক্রেতারা। মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাটিতে কি গুনাগুন আছে বা দরকার তা জানার সুযোগ নেই তাদের।
ময়মনসিংহ সদরের সুতীয়াখালী গ্রামের কৃষক গোলাম মোস্তফা। স্কুলের গণ্ডি না পেরুলেও এখন অনেকটা গবেষকের মতই মাটির গুণাগুণ পরীক্ষায় সয়েল টেস্টিং কিট ব্যবহার করেন তিনি। জেনে নিচ্ছেন জমিতে কোন সার কতটুকু ব্যবহার করতে হবে। তিনি জানালেন কিভাবে তার হাতে আসলো এই প্রযুক্তি।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৫ হাজার টাকায় সংগ্রহ করেছেন ‘সয়েল টেস্টিং কিট বক্স’। কিভাবে এটি ব্যবহার করতে হবে তাও শিখিয়েছে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সহজে ও স্বল্প খরচে মাটি পরীক্ষা করতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত এই ‘সয়েল টেস্টিং কিট’ ব্যবহারে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণও পাচ্ছেন চাষিরা। যে কোনো চাষি সরাসরি মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগে যোগাযোগ করে সহজেই সব জানতে ও শিখতে পারবেন।
ওই বিভাগের সহযোগী গবেষক এ বি এম ফেরদৌস হাবিব বলেন, ‘‘কিট ব্যবহারে জটিল কোনো নিয়ম-কানুন নেই। কৃষক সহজেই কিট ব্যবহার করতে পারবে।’’
মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, এই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পর দীর্ঘ সময় ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা হয়েছে। তারপর কৃষকের হাতে দেওয়া হয়েছে। কৃষকরা দিন দিন এটি ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। মাটির গুণাগুণ না জানায় কোন সার কতটুকু দিবে বা সার দিতে হবে কিনা তা জানার ফলে উৎপাদন খরচও কমছে।
তিনি আরও বলেন, সয়েল টেস্টিং কিট ব্যবহারে কৃষকদের অভ্যস্ত করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ চলছে। বর্তমানে সাতক্ষীরা, খুলনা ও রাজশাহীতে কৃষকদের এই কিট বক্স ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এই কিট দিয়ে মাটির অম্ল রক্ষা, নাইট্রোজেন, অ্যামোনিয়া, পটাশিয়াম, সালফার, ফসফরাস ও অনুজীবের পরিমান প্রভৃতি খুব কম সময়ে নির্ণয় করা যাবে। এতে খরচ পরবে মাত্র ৫০ টাকা। পাঁচ হাজার টাকায় এই কিট বক্স বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগ্রহ করা যাবে।