কেন ‘নিজের মন ভেঙে দিতে’ সময় ব্যয় করেছেন মেলিন্ডা গেটস
যুক্তরাষ্ট্রের ডালাস হাই স্কুলে গ্র্যাজুয়েশনের পর বিদায়ী বক্তৃতায় মেলিন্ডা গেটস সহপাঠীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, 'আপনি আছেন বলে অন্তত একটি জীবন ভালোভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারছে, এটা জানতে পারাই সফলতা।'
বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস নব্বইয়ের দশকের শেষভাগ থেকেই সংক্রামক রোগের সতর্কবার্তা প্রচার করে আসছেন। ভ্যাকসিনের জন্য তহবিল গঠনের প্রচারণাও করে আসছেন তারা। আফ্রিকা ও ভারত ভ্রমণকালে চরম দারিদ্র্য প্রত্যক্ষ করেন বিল ও মেলিন্ডা। সেখান থেকেই পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে নিজেদের বিপুল পরিমাণ অর্থকে কাজে লাগানোর কথা ভাবেন তারা।
তখন থেকে গেটস ফাউন্ডেশন উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পোলিওর মতো বিভিন্ন রোগ নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে ৫৫ বিলিয়ন ডলারেরও অধিক অর্থ ব্যয় করেছে।
করোনাভাইরাস মহামারি আঘাত হানার পর বিল-মেলিন্ডা ফাউন্ডেশন নতুন ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর ভ্যাকসিন উৎপাদনের সবচেয়ে জটিল এবং বিশাল পরিসরের পরিকল্পনার দিকে নজর দেয়। একইসঙ্গে সর্বত্র যেন ভ্যাকসিনের বিতরণ সম্ভব হয়, সেদিকেও নজর রাখে এই ফাউন্ডেশন। ভ্যাকসিনের পেছনে ফাউন্ডেশনটির তড়িৎ বিনিয়োগ বায়োএনটেককে সফলভাবে ফাইজার ভ্যাকসিন নিয়ে আনতে সাহায্য করেছে।
তবে এতকিছুর পরও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব তাদের পিছু ছাড়েনি। বাণিজ্যিক স্বার্থে মহামারির পেছনে বিল-মেলিন্ডার প্ররোচণা ছিল বলে অভিযোগ তুলেছেন অনেকেই।
নিউইয়র্ক টাইমসের ডেভিড গেলেসের সঙ্গে সাক্ষাৎকারকালে বিতর্কিত সব বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন মেলিন্ডা।
সাক্ষাৎকার
প্রশ্ন: বিল ও আপনি দীর্ঘসময় ধরে মহামারির ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে সতর্ক করে আসছেন। মহামারির প্রথম বছরটি আপনাদের অনুমান থেকে কতটুকু ব্যতিক্রম ছিল?
মেলিন্ডা গেটস: মহামারি কেমন হতে পারে তা নিয়ে বহু ধরনের অনুমান করা সম্ভব। তবে যখন সত্যিই মহামারির মধ্য দিয়ে আপনাকে যেতে হবে, তখন বাস্তবতা প্রকৃত অর্থেই বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। আমার মনে হয় আমরা বেশ ভালোই আন্দাজ করতে পেরেছিলাম। আমরা অনুমান করেছিলাম নতুন এই অসুখ খুব দ্রুততার সঙ্গে সংক্রমিত হবে। সংক্রমণের বিষয়টি আমাদের অবাক করেনি।
আমাদের যা অবাক করেছে, তা হলো অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া। আমরা বিষয়টি নিয়ে সেভাবে ভাবিনি। বিশ্বে দ্রুত মহামারি ছড়াতে শুরু করলে কী ঘটে? আমরা সবাই ঘরে থাকব। যাদের ঘরে থেকে কাজ করার সুযোগ আছে তারা সেটা করতে পারবে। আমার মনে হয়, এই বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রস্তুত ছিলাম না।
প্রশ্ন: বিল ও আপনাকে ঘিরে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সৃষ্টি হয়েছে। আপনার কেন মনে হয় আপনাদের বিশেষভাবে টার্গেট করা হয়েছিল?
মেলিন্ডা: আমি জানি না। আমার মনে হয় মানুষের মনে ভীতি কাজ করে। আর তাই তারা অন্য কারও ওপর বা কোনো জিনিস বা প্রতিষ্ঠানের ওপর আঙুল তোলে। একবার কোনো প্রতিষ্ঠানের দিকে আঙুল তোলা হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে প্রতিক্রিয়া অতিরঞ্জিত হয়ে তীব্র রূপ ধারণ করে। আমাদের সমাজের জন্য বিষয়টি গভীরভাবে উদ্বেগজনক। আমাদের গণতন্ত্র তথ্যপ্রাপ্তির ওপর নির্ভর করে। নিজেদের সুস্থ ও সুরক্ষিত রাখতে আমাদের সঠিক তথ্যের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়।
প্রশ্ন: আপনার কি মনে হয় মহামারির মতো সময়ে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর লাভের উদ্দেশ্যে ভ্যাকসিন বিক্রি করা উচিত?
মেলিন্ডা: আমার মনে হয় এক্ষেত্রে তাদের খুব সামান্য পরিমাণে লাভ রাখা উচিত। কেননা, আমরা চাইব তারা যেন তাদের ব্যবসা ধরে রাখতে পারে। দিনশেষে, তারা তাদের অংশীদারদের কাছে জিম্মি। প্রশ্ন হলো, লাভের পরিমাণ কী হবে? আমি মনে করি মহামারির মতো সময়ে ভ্যাকসিন উৎপাদনের মার্জিনাল খরচের কাছাকাছি মূল্য রাখা উচিত।
প্রশ্ন: আপনার নিজের সুযোগ-সুবিধার প্রাচুর্যের সঙ্গে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির মধ্যে কীভাবে সমন্বয় সাধন করেন?
মেলিন্ডা: বিষয়টি নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি। উন্নত অবস্থানে থেকে আপনার কী করা উচিত সে সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা নেই। তবে মহামারির আগে আমি আমার প্রচুর সময় মানুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে এবং ঘুরে বেড়ানোর পেছনে ব্যয় করেছি। আমি নিজেই নিজেকে মন ভেঙে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছি। মাদার তেরেসার আশ্রমে মুমূর্ষু রোগীদের জন্য কাজ করেছি। আফ্রিকার কৃষকদের কুঁড়েঘরে ঘুমিয়েছি।
আমি প্রতিদিন সকালে মেডিটেশন করি। মানুষের আপনজন হারানোর খবরে আমি দিনের পর দিন কান্নাকাটি করেছি। কেবল নিজের কিছু হারানোর বোধ নিয়ে ব্যথিত হলে চলে না। আমার মন সেখানে যায়, যেখানে গেলে সত্যিই মানুষের জন্য আপনার মন কাঁদবে।
-
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস