গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে আটক কবুতর ফেরত চাইলেন পাকিস্তানি মালিক
গত পরশু প্রতিবেশী পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িত থাকার দায়ে একটি কবুতরকে আটক করে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, এখন কবুতরটিকে নির্দোষ দাবি করে এর পাকিস্তানী মালিক তার মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন।
তথাকথিত এই গুপ্তচর পাখিটি গত রোববার দুই দেশের মধ্যে বিরোধপূর্ণ অঞ্চল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে আসলে এটিকে ধরে ফেলে স্থানীয় গ্রামবাসী। গ্রামটি সীমান্ত লাগোয়া হওয়ায় পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর থেকেই যে সেটি এসেছে তা বুঝতে কারো বাকি ছিল না।
কবুতরের বিশেষ কিছু বিশেষত্বও চোখে পড়ার মতো। এর ডানায় ছিল গোলাপি রঙ লাগানো । এক পায়ে পড়ানো ছিল একটি আংটি। সেই আংটিতে সাংকেতিক ভাষায় কিছু লেখা আছে মনে হলে তক্ষনাৎ স্থানীয় পুলিশকে খবর দেয় গ্রামবাসী।
পুলিশ এসেই কবুতর বেচারাকে গ্রেপ্তার করে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে খাঁচায় পুড়লো আর আংটির সংকেত উদ্ধার করতে শুরু হলো গবেষণা।
এই অবস্থায় কবুতরটির প্রকৃত মালিক এগিয়ে এসেছে। তার দাবি, কবুতরের পায়ের আংটিতে কোনো গুপ্তবার্তার সংকেত নয়, বরং লেখা ছিল তার মুঠোফোনের নাম্বার। যাতে অপরিচিত কারো হাতে পড়লে সেই ব্যক্তি যোগাযোগ করে কবুতর ফেরত দিতে পারে।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী পাকিস্তানী গুপ্তচর কবুতর আটকের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই পাকিস্তানের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক ডন এক অনুসন্ধানের মাধ্যমে এর মালিককে খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়।
হাবিব উল্লাহ নামের ওই ব্যক্তি পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বাগগাঁ-শাকেরগড় গ্রামের বাসিন্দা। সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে গ্রামটি মাত্র চার মাইল দূরে অবস্থিত।
হাবিব জানান, ঈদুল ফিতরের আনন্দ উদযাপনের উদ্দেশ্যেই তিনি তার সকল পোষা কবুতরের ডানায় গোলাপি রঙ লাগিয়ে তাদের কয়েকটিকে উড়িয়ে দেন। এর মাধ্যমে তিনি ঈদের শান্তি, সম্প্রীতি এবং সহনশীলতার বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছেন মানুষের কাছে। কিন্তু, এর মধ্য থেকে একটি কবুতর যে উড়ে গিয়ে সীমান্তের ওপাড়ে যাবে, এরপর গুপ্তচর হিসেবে আটকও হবে, তা কল্পনাও করতে পারেননি তিনি।
এদিকে স্থানীয় সূত্রের বরাতে জানা গেছে, কবুতরটি উড়ে এসে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে এক মহিলার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। ওই মহিলাই সেটিকে ধরে সীমান্তরক্ষীদের হাতে তুলে দেন। যারা তাকে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে খাঁচায় পুড়ে আটক করে রেখেছে।
এদিকে ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, সত্যিকার অর্থে পাখিদের তো আর কোনো সীমানা নেই। আন্তর্জাতিক সীমানার তোয়াক্কা না করেই এক দেশ থেকে অন্যদেশে উড়ে যায় পরিযায়ী পাখির ঝাঁক। তবে কবুতরটির পায়ের সন্দেহভাজন আংটি থাকার কারণেই সেটিকে আর পরিযায়ী পাখি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে না।
কিন্তু কবুতরের মালিক হাবিব উল্লাহ জোর দাবি করে বলছেন, ওই আংটিতে তার মুঠোফোন নাম্বার ব্যতীত অন্য কোনো গোপনীয় বার্তা নেই। সম্পূর্ণ মর্যাদার সাথে কবুতরটিকে মুক্তি দিতে তিনি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বরাবর অনুরোধও করেন।
বর্তমানে কবুতরের মুক্তির দাবিতে বাগগা-শাকেরগড় গ্রামের বাসিন্দাদের নিয়ে হাবিব নিয়মিত প্রতিবাদ সমাবেশও চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিবাদ সমাবেশে প্রমাণ হিসেবে নিজ ছাদে থাকা গোলাপি ডানার অন্যান্য কবুতরের ছবিও প্রদর্শন করছেন তিনি।
তবে মজার বিষয় হলো, পাকিস্তান থেকে গুপ্তচর কবুতর আটকের ঘটনা এবারই প্রথম নয়, এর আগে ২০১৫ সালেও এমন একটি ঘটনা সংবাদের শিরোনাম হয়েছিল। সেবছর সীমান্ত থেকে চার কিলোমিটার দূরে কাশ্মীরের মানওয়াল গ্রামে তথাকথিত আরেকটি গুপ্তচর কবুতর আটক করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।