ছবির গল্প: প্রতিকূল সময়ে নারীর সাহস
পৃথিবীর নানা প্রান্ত ঘুরে, কয়েক দশক ধরে যুদ্ধ ও চরম প্রতিকূল সময়ে সাধারণ নারীদের সাহসী পদচারণার মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করেছেন ব্রিটিশ আলোকচিত্র সাংবাদিক টম স্টডার্ট। সেগুলো থেকে নির্বাচিত ছবি নিয়ে গত শুক্রবার প্রকাশ পেয়েছে তার আলোকচিত্র গ্রন্থ 'এক্সট্রাঅর্ডিনারি উইমেন: ইমেজেস অব কারেজ, এন্ডুরেন্স অ্যান্ড ডিফিয়ান্স'।
এই বইয়ে প্রকাশিত স্টডার্টের তোলা ছবিগুলোতে রয়েছে নারীর এমনসব অন্তর্নিহিত দৃষ্টিভঙ্গি ও সাহসের স্বাক্ষর, যা সাধারণত শোনা বা দেখা যায় না।
এমন কিছু ছবি নিয়েই এ আয়োজন।
মোজাম্বিক, ২০০০
বন্যায় যখন সারা দেশ ভেসে যাওয়ার দশা, মোজাম্বিকের চখভে অঞ্চলে এক মা নিজ সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন উঁচু ও নিরাপদ গন্তব্যের সন্ধানে। তাদের হাত শক্ত করে ধরে রেখে অভয়ের বার্তা দিচ্ছেন এই মা।
জার্মানি, ১৯৮৯
১৯৮৯ সালের ১০ নভেম্বর সকাল বেলা ইতিহাসখ্যাত 'বার্লিন ওয়াল' ঘিরে মানুষের ভিড়। এই প্রথম পূর্ব বার্লিন অধিবাসীরা পশ্চিম বার্লিনে আসার অনুমতি পেলেন। এর কয়েক ঘণ্টা পর বার্লিন ওয়ালের প্রথম অংশটি ভেঙ্গে ফেলা হয়। তারপর পূর্ব জার্মানি থেকে পশ্চিমাংশে আসার জন্য হাজারও মানুষের ঢল দেখা যায়।
বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, ১৯৯৪
যুদ্ধকালে গ্রেনেড হামলায় দুই পা হারানো নারী সেদিয়া কাতিকা নিজের পাঁচ বছর বয়সী কন্যা আমরার সঙ্গে খেলছেন, সারায়েভো যুদ্ধক্ষেত্রের কাছেই।
বসনিয়া, ১৯৯৫
সাড়ে তিন বছর ধরে চলা রক্তক্ষয়ী 'বসনিয়া যুদ্ধে' [৬ এপ্রিল ১৯৯২-১৪ ডিসেম্বর ১৯৯৫] তখন জনজীবনে আতঙ্কের শেষ নেই। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার বর্তমান রাজধানী সারায়েভো তখন অবরুদ্ধ। এরইমধ্যে সৈন্যদের রক্তচক্ষু তোয়াক্কা না করে, বীরদর্পে কর্মস্থলের দিকে হাঁটা দিয়েছেন মালিহা ভারেসানোভিচ নামে এক নারী। এই ছবির জন্য পরবর্তীকালে সেই নারী বিখ্যাত হয়ে ওঠেন।
ক্রোয়েশিয়া, ২০১৫
তিমোভেচ অঞ্চলে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে থাকা স্লোভানিয়ার সীমান্ত রেখায় স্লোভানিয়ান পুলিশের সঙ্গে লাইন ধরে পেরিয়ে যেতে নিজ সন্তানদের পথ দেখাচ্ছেন এক মা। সরকারি ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘতর হওয়ার কারণে ওই অঞ্চলের মানুষের মনে উত্তেজনা তৈরি হয় এবং ক্ষুব্ধ লোকজন পূর্ব ইউরোপের উদ্দেশ্যে যাত্রা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করেন। এই মা তাদেরই একজন।
ভারত, ২০০১
২০০১ সালের প্রলয়ংকারী ভূমিকম্পের পর ভারতের গুজরাটের আঞ্জর গ্রামের কাছে নিজের বিধ্বস্ত বাড়িতে উদ্ধার ও সাহায্যকারীদের অপেক্ষায় এক দৃঢ়চেতা বৃদ্ধা।
তুরস্ক, ১৯৯১
তুরস্কের ইসিকভেরেন গ্রামের নিকটবর্তী পার্বত্যাঞ্চলে এক শরণার্থী শিবিরে শিশু সন্তানকে ঝুড়িতে বয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় এভাবেই ক্যামেরাবন্দি হন এক কুর্দি শরণার্থী নারী। প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ শেষে তৎকালীন ইরাকি একনায়ক সাদ্দাম হোসেনের রাজত্ব থেকে পালিয়ে আসা হাজারও কুর্দি পরিবার তুর্কি-ইরাক সীমান্তবর্তী ওই শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেন।
বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, ১৯৯২
অবরুদ্ধ সারায়েভোতে সার্বিয়ান অস্ত্রধারীদের এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণের মাঝে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটে যাচ্ছেন দুই নারী।
চীন, ১৯৯৩
উহানের একটি ডর্মিটরিতে স্কুলের ক্রিড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে এক বালিকা জিমন্যাস্ট। সে সময়ে খেলাধূলায় পারদর্শী প্রচুরসংখ্যক শিশু প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য পরিবার ছেড়ে ডর্মিটরিতে থাকত। ১৯৫০-এর দশকে চীনের তৎকালীন শাসক মাও সেতুং দেশের ভাবমূর্তি ও মর্যাদা বাড়াতে খেলাধূলার ওপর গুরুত্ব দেন। তারপর থেকে খেলাধূলাকেন্দ্রিক ৩ হাজার স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দেশটিতে।
যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৯৮
যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বাহিনীর এলিট ফোর্স- ইউনাইটেড স্টেটস মেরিন কর্পসে প্রতি বছর হাজারও আমেরিকান তরুণী যোগ দিতে আসেন। দেশটির দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার প্যারিস আইল্যান্ডের রিক্রুট ট্রেনিং সেন্টারে হাজির হয়েছেন এই নারীরা। বুট ক্যাম্পের কঠোর প্রশিক্ষণ ১২ সপ্তাহ ধরে সহ্য করে শেষ পর্যন্ত অবশ্য অল্প কয়েকজন 'গর্বিত' সদস্যাই টিকে থাকতে পারেন। প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে গ্যাস চেম্বারে ঢুকার আগ মুহূর্তের ছবি এটি।
ভারত, ২০০১
ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত গুজরাটের বাচাউ শহরে কবুতরের সঙ্গে খেলা করছে এক নির্ভীক বালিকা।
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান